- হোম
- >
- বায়োগ্রাফি
- >
- ‘ঝিলু দ্যা গ্রেট’: শুভ জন্মদিন আলতাফ মাহমুদ
‘ঝিলু দ্যা গ্রেট’: শুভ জন্মদিন আলতাফ মাহমুদ
নিজস্ব প্রতিবেদক, প্রকাশ : ২৩ ডিসেম্বর, ২০১৫
প্রিন্টঅঅ-অ+
উঠোনের কাঁঠাল গাছে খোদাই করে লিখা ‘ঝিলু দি গ্রে’। ছেলেবেলা থেকেই গানের প্রতি ছিল ঝিলুর প্রচণ্ড ঝোঁক, কণ্ঠও ছিল সুরেলা। কিন্তু পড়ালেখায় মন বসেনা ঝিলুর, সারাক্ষণ গুনগুন করে চলে গান গাওয়া।
‘ঝিলু দি গ্রেট’ হওয়ার স্বপ্ন বুকে নিয়ে ছেলেটি পঞ্চাশের দশকে কণ্ঠ আর বেহালাকে সঙ্গি করে বরিশাল থেকে তত্কালীন পূর্ব পাকিস্তানের রাজধানী ঢাকায় এলেন, এবং জড়িয়ে পড়লেন সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক নানা কর্মকাণ্ডে। যোগ দিলেন ধূমকেতু শিল্পী সংঘে। পরবর্তীকালে তিনি এই প্রতিষ্ঠানটির ‘সঙ্গীত পরিচালক’ পদে আসীন হন। বরিশালের সেই ঝিলু ঢাকার সংস্কৃতিকর্মীদের কাছে হয়ে গেলেন প্রিয় আলতাফ মাহমুদ৷ আলতাফ মাহমুদ গান বাঁধেন, সুরারোপ করেন এবং গেয়ে শোনান ৷ এরই মধ্যে শুরু হল ভাষার অধিকার আদায়ের লড়াই। এ লড়াইয়ের এক পর্যায়ে ১৯৫২ সালের একুশে ফেব্রুয়ারিতে শহীদদের রক্তে রঞ্জিত হলো ঢাকার রাজপথ৷ এর প্রতিক্রিয়ায় আবদুল গাফফার চৌধুরী লিখলেন অসামান্য কবিতা - ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি’। আর ওই কবিতায় সুর বসালেন আলতাফ মাহমুদ এবং এদেশের কোটি জনতা একবাক্যে স্বীকার করলেন, ‘আলতাফ মাহমুদ দি গ্রেট’।
আলতাফ মাহমুদ ১৯৩৩ সালের ২৩ ডিসেম্বর বরিশাল জেলার মুলাদী থানার অন্তর্গত পাতারচর গ্রামে এক সম্ভ্রান্ত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। বাবার নাজেম আলী হাওলাদার এবং মা কদ বানুর একমাত্র পুত্র সন্তান আলতাফ মাহমুদ। বাবা প্রথমে আদালতের পেশকার এবং পরবতীর্তে জেলা বোর্ডের সেক্রেটারি ছিলেন।
আলতাফ মাহমুদ বরিশাল জেলা স্কুলের ছাত্র ছিলেন। গান গাওয়ার পাশাপাশি ছবি আঁকার প্রতিও আলতাফ মাহমুদের প্রচণ্ড ঝোঁক ছিল। ১৯৪৮ সালে কলকাতা বোর্ডের অধীনে আলতাফ মাহমুদ ম্যাট্রিক পাস করেন। এসময় তিনি দেশের রাজনৈতিক আন্দোলন নিয়ে আগ্রহী হয়ে ওঠেন। বরিশাল ব্রজমোহন কলেজে ইন্টারমিডিয়েটে ভর্তি হন, কিন্তু বেশি দিন পড়াশোনা করেননি। কলকাতা আর্ট কলেজে কিছুদিন পড়াশোনা করেন। কিন্তু এখানেও তিনি কোর্স শেষ করেননি।
১৯৪৮ সাল থেকে তিনি গণসঙ্গীতের দিকে ঝুঁকে পড়েন। বরিশালের এক জনসভায় 'ম্যায় ভূখা হু' গানটি গেয়ে আলতাফ মাহমুদ রাতারাতি জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন। বাংলাদেশের শ্রেষ্ঠ গণসঙ্গীত শিল্পী আবদুল লতিফ বলেন, 'আলতাফ মাহমুদের কণ্ঠ ছিল অদ্ভুত সুন্দর। যত না সুরকার হিসেবে নাম, তার চেয়েও অনেক বেশি সুন্দর কণ্ঠশিল্পী হিসেবে। ওর ছেলেবেলার কণ্ঠ শুনেই বুঝতে পেরেছিলাম ছেলেটা বিখ্যাত হবে। আমার ওই গানটি... ‘ওরা আমার মুখের কথা কাইড়া নিতে চায়/কথায় কথায় তারা আমায় হাতকড়া লাগায়’, আলতাফের মতো করে আর কেউ গাইতে পারেনি কোনোদিন, এমনকি আমি নিজেও না। তার সুরে যে আবেগ এবং অর্থ প্রকাশ পেত, তা না শুনলে বোঝানো যাবে না।'
১৯৫০ সালে ধূমকেতু শিল্পী সংঘ - সংগঠনের সাথে যুক্ত হন তিনি। পরবর্তীতে তিনি পূর্ব পাকিস্তান যুবলীগ-এর সাথে সম্পৃক্ত হয়ে পড়েন। যুবলীগের সাংস্কৃতিক ফ্রন্টের শিল্পী হিসেবে তিনি প্রথমদিকে যুক্ত ছিলেন। ‘৫২-র রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনে আলতাফ মাহমুদ ছিলেন একজন সক্রিয় কর্মী। ১৯৬৭ সালের ফেব্রুয়ারির ২১, ২২ ও ২৩ তারিখ-এই তিনদিন পল্টন ময়দানে তাঁদের উদ্যোগে লক্ষ লক্ষ জনতার উপস্থিতিতে 'জ্বলছে আগুন ক্ষেতেখামারে’ শীর্ষক যে গীতিনৃত্যনাট্য মঞ্চস্থ হয় তা অসীম উদ্দীপনা সৃষ্টি করেছিল সেদিন জনমনে। এই গীতিনৃত্যনাট্যের সঙ্গীত পরিচালনা করেন আলতাফ মাহমুদ, অভিনয়ও করেন। আলতাফ মাহমুদের সহশিল্পী হিসেবে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, অলি আহমদ অংশগ্রহণ করেছিলেন। এই অনুষ্ঠানে আলতাফ মাহমুদ তাঁর দরদি গলায় উদাত্ত কণ্ঠে গেয়েছিলেন, ‘ও বাঙালী, ঢাকার শহর রক্তে ভাসাইলি...।’
১৯৫৪ সালের নির্বাচনের সময় বাবা নাজেম আলী মুলাদীর স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে দাঁড়িয়েছিলেন। নির্বাচন প্রচারণায় তিনি এতই আন্তরিক ছিলেন যে, পিতার পক্ষেও কোনো মঞ্চে ওঠেননি, বরং পিতার বিরোধিতাই করেছেন। নির্বাচন শেষে ১৯৫৪ সালের ৩০ মে ৯২/ক ধারা জারি করে পাকিস্তান শাসকচক্র অনেককেই গ্রেফতার করে। পুলিশের হুলিয়া মাথায় নিয়ে নিজামুল হক ও আলতাফ মাহমুদ বরিশালে গিয়ে আত্মগোপন করেন। ১৯৫৫ সালের ৬ জুন ৯২/ক ধারা প্রত্যাহার করা হলে শিল্পীরা আবার প্রাকাশ্যে আসেন। এরই মধ্যে আত্মগোপন অবস্থায় আলতাফ মাহমুদ একটি জনপ্রিয় গান রচনা করেন, 'মেঘনার কূলে ছিল আমার ঘর/হঠাৎ একটা তুফান আইয়া/ভাইসা নিল তারে রে'। এই গানটি ভৈরবের এক জনসভায় আলতাফ মাহমুদকে ৭ বার, ১১ বার মতান্তরে ১৯ বার গেয়ে শোনাতে হয়।
আলতাফ মাহমুদ যতগুলি গান গেয়েছেন তার সবগুলিই দেশ, মা ও মাটিপ্রেম মেশানো। সময়টা ছিল স্বাধিকারের জন্য জাতিকে উজ্জীবিত করার। যার ফলে আলতাফ মাহমুদ সুরে সুরেই জাতির হৃদয়ে স্পন্দন তুলতে পেরেছিলেন। ১৯৬৬ সালের মধ্যেই শিল্পী আলতাফ মাহমুদ সুরারোপ, কণ্ঠদান এবং সঙ্গীত পরিচালনায় পূর্ণ প্রতিষ্ঠালাভ করেন।
১৯৫৬ সালে আলতাফ মাহমুদ করাচি বেতারে প্রথম সঙ্গীত পরিবেশন করেন। পরবর্তীকালে এই বেতার থেকে 'ইত্তেহাদে ম্যুসিকি' নামে দশ মিনিটের একটি অনুষ্ঠান প্রযোজনা ও পরিচালনা করেন। আর এই অনুষ্ঠানের জন্য সঙ্গীত লেখা, গ্রন্থনা, সুরারোপ, সঙ্গীত পরিচালনা সবকিছু করেছেন আলতাফ মাহমুদ। এভাবেই তিনি বেতার সঙ্গীতে নিজেকে ব্যস্ত রাখেন।
১৯৬৪ সালে ঢাকায় ফিরে আসার আগে তিনি ছায়াছবির গানে কণ্ঠদানসহ সহকারী সঙ্গীত পরিচালকের আসনে পৌঁছতে সক্ষম হন। এছাড়াও তিনি মিনি কলের গানের রেকর্ড করেছিলেন ৩০টি। আর সে সব ছিল পল্লী উন্নয়নের জন্য সরকারি প্রচারণামূলক সঙ্গীত। ছায়াছবির গানে সুরারোপ, কণ্ঠদান এবং সঙ্গীত পরিচালনায় অসামান্য মেধার ছাপ দেখিয়ে ছায়াছবির জগতে আলতাফ মাহমুদ পূর্ণ প্রতিষ্ঠা পেয়েছিলেন। ছায়াছবিতে প্রথম কণ্ঠ দেন এ.জে. কারদারের 'জাগো হুয়া সাভেরা'তে। গানের বাণী- 'হাম হর নদীকা রাজা।' প্রথম গানেই চলচ্চিত্রাঙ্গনে আলতাফ মাহমুদের জয়জয়কার পড়ে যায়। করাচিতে অবস্থানকালে 'নীলা পর্বত' ছবিতেও কণ্ঠদান করেন।
'তানহা' ছায়াছবিতে আলতাফ মাহমুদ প্রথম এককভাবে সঙ্গীত পরিচালক হয়ে কাজ করেন। 'তানহা' ছাড়া 'আঁকাবাঁকা', 'ক খ গ ঘ', 'কুঁচবরণ কন্যা', 'সুয়োরাণী দুয়োরাণী'-তে কণ্ঠদান করেন এবং প্রথম দুটোতে অভিনয়ও করেন আলতাফ মাহমুদ। 'বাঁশরী' ছবিতেও অতুলপ্রসাদের 'পাগলা মনটারে তুই বাঁধ' গানেও কণ্ঠদান করেন। ছায়াছবির সুরকার সত্য সাহা।
১৯৬৪ সালে তিনি পূর্ব পাকিস্তানের রাজধানী ঢাকায় ফিরে এসে যথারীতি গান নিয়ে মেতে ওঠেন এবং পূর্ব পাকিস্তানের ছায়াছবির গানে প্রবেশ করেন। কণ্ঠদানের পাশাপাশি একজন খ্যাতিমান সঙ্গীত পরিচালক হয়ে ওঠেন।
১৯৬৬ সালের ১৬ অক্টোবর বিল্লাহ পরিবারের বড় মেয়ে সারা আরা, ডাকনাম ঝিনুর সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন আলতাফ মাহমুদ। বিল্লাহ পরিবারের সব সদস্যই সংস্কৃতিমনা। আলতাফ মাহমুদের সাথে বিয়ের পর বিল্লাহ পরিবারের সারা আরা হয়ে যান সারা আরা মাহমুদ। আলতাফ মাহমুদের সাথে সারা আরার বয়সের ব্যবধান অনেক। তাঁদের যখন বিয়ে হয় সারা তখন দশম শ্রেণীর ছাত্রী। আলতাফ মাহমুদের বয়স তখন ৩৫-৩৬ বছর। বিয়ের প্রস্তাব এলে সারার পরিবারের সদস্যরা বয়সের বিশাল দূরত্বের জন্য প্রথমে অসম্মতি জানান। কিন্তু বেগম সুফিয়া কামালের মধ্যস্থতায় শেষ পর্যন্ত বিয়ে সম্পন্ন হয়। বিয়ের পর দু'জনের দাম্পত্যজীবনের পরিধি ছিল মাত্র পাঁচ বছর। বয়সের ব্যবধান সত্ত্বেও তাঁদের দাম্পত্য জীবন ছিল সুখের। পাঁচ বছরের বিবাহিত জীবনে তাঁদের ঘরে জন্ম নেয় একমাত্র মেয়ে শাওন।
১৯৭১ সালে বেহালা, তবলা, হারমোনিয়মের সাথে আলতাফ মাহমুদের হাতে উঠে আসে রাইফেল। শহরের যেখানেই মিছিল আর আলোচনা অনুষ্ঠান হয় সেখানেই আলতাফ মাহমুদ উপস্থিত থাকেন। শহীদ মিনারের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে সঙ্গীত পরিচালনা ও কণ্ঠদান করেন তিনি। সেই সময় রাজারবাগ পুলিশ লাইনের ঠিক বিপরীত দিকে ৩৭০ নম্বর আউটার সার্কুলার রোডের বাসায় থাকতেন আলতাফ মাহমুদ। ২৫ মার্চ হানাদার বাহিনী তাদের মারণাস্ত্র দিয়ে রাজারবাগ পুলিশ লাইনের টিনসেডগুলোতে আগুন লাগিয়ে দেয়।
২৬ তারিখ সকালে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে পাশের বাড়িতে আশ্রয় নেন তিনি। ২৭ মার্চ কয়েক ঘণ্টার জন্য কার্ফ্যু শিথিল হলে আলতাফ মাহমুদ সবাইকে নিয়ে কমলাপুরের বৌদ্ধবিহারে আশ্রয় নেন। সেখানে ১৮ দিন থাকার পর আবার চলে আসেন রাজারবাগ পুলিশ লাইনের আউটার সার্কুলার রোডের বাসায়। এখানে ফিরে এসে তিনি বিচলিত ও চিন্তিত হয়ে পড়েন। দেশ, আত্মীয়-স্বজন এবং জনগণের দুরবস্থার কথা ভেবে অস্থিরতায় কাটে তাঁর সারাটি সময় এবং এ সময়ই তিনি মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয় অংশগ্রহণের সিদ্ধান্ত নেন এবং ঢাকা শহরে কতগুলো অপারেশনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। সেক্টর কমান্ডার মেজর খালেদ মোশাররফের নির্দেশে হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে একটি অপারেশন হয় আলতাফ মাহমুদের অংশগ্রহণে।
আলতাফ মাহমুদ, হাফিজ সাহেব এবং সামাদ সাহেব মিলে সিদ্ধান্ত নেন, বিশ্বব্যাংক প্রতিনিধিদলের ঢাকায় অবস্থানকালে হোটেলে বোমা বিস্ফোরণ ঘটাবেন তাঁরা। ক্র্যাক প্লাটুনের অন্যতম সদস্য সামাদ সাহেব নিয়ন সাইনের ব্যবসা করেন। ঘটনাচক্রে ঐ সময় হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে নিয়ন সাইনের একটা কন্ট্রাক্ট চলে আসে। নিয়ন বাল্বের ভেতরে বিস্ফোরক ভরে হোটেলের ভেতরে পাচার করে দেয়া হয়। তবে বিশ্বব্যাংকের প্রতিনিধিদল তখন হোটেলে আসেনি, তারপরও বিদেশি সাংবাদিকদের জানানোর জন্য হোটেলে বিস্ফোরণ ঘটানো হয়। এতে ফলও হয়। হোটেলে বহু বিদেশি সাংবাদিক ছিলেন। তাঁদের মাধ্যমে এই বিস্ফোরণের খবর সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে।
আগস্টের শেষ সপ্তাহে স্থির করেন, সেপ্টেম্বরের প্রথম সপ্তাহে তিনি ঢাকা ত্যাগ করবেন; চলে যাবেন পশ্চিমবঙ্গে এবং সেখান থেকে কাজ করবেন মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে। কিন্তু তিনি যেতে পারেননি। কারণ তার আগেই বন্দি হন হানাদারদের হাতে। তাঁদের প্ল্যাটুনের একজন গেরিলা ধরা পড়েন। পাঞ্জাবি পুলিশ ও সেনাবাহিনীর হাতে মার খেয়ে তিনি আলতাফ মাহমুদের বাসার কাঁঠাল গাছের নিচে লুকিয়ে রাখা গোলাবারুদের কথা বলে দেন।
বাঙালীর মহান মুক্তিযুদ্ধের শেষ পর্যায়ে পাকিস্তানী বর্বর বাহিনী যখন তাদের নিশ্চিত পরাজয় বুঝতে পারে, তখন এ জাতিকে মেধাশূন্য করার জন্য ইতিহাসের বর্বরতম বুদ্ধিজীবী হত্যা শুরু করে। ৩০ আগস্ট ভোরবেলা আর্মিরা প্রথমে আলতাফ মাহমুদের পুরো বাড়িটি ঘিরে ফেলে। এরপর কয়েকজন ঘরে ঢুকে জিজ্ঞেস করে, 'আলতাফ মাহমুদ কৌন হ্যায়?' আলতাফ মাহমুদ জবাব দিলেন, 'আমি'। এরপর আর্মিরা তাঁকে দিয়ে মাটি খুঁড়ে কাঁঠাল গাছের নিচে লুকিয়ে রাখা গোলাবারুদের ট্রাঙ্ক দুটি বের করে নেওয়ার পর তাঁকে সঙ্গে নিয়ে চলে গেল। তিনি যাওয়ার সময় তাঁর শ্যালকের কাছে তাঁর হাতে পরা একটা আংটি খুলে দিয়ে বললেন, 'এটা ঝিনু এবং শাওনকে দিও। ওদের জন্য তো কিছু রেখে যেতে পারলাম না। দেশের মানুষ আছে ওদের জন্য।'
প্রথমে তাঁকে ধরে নিয়ে যেয়ে রাখা হয় রমনা থানায়। সেই সময় রমনা থানা থেকে ফিরে আসা একজন বন্দীর কাছ থেকে জানা যায় তাঁকে বন্দী অবস্থায় প্রচণ্ড নির্যাতন করা হয় এবং ৩ সেপ্টেম্বর চোখ বেঁধে তাঁকে নিয়ে যাওয়া হয়। কিন্তু তিনি জানেন না কোথায় তাঁকে নিয়ে যাওয়া হয়েছে এবং পরিবারের সদস্যসহ কেউ আর তাঁর খোঁজ পাননি।
১৯৭৭ সালে আলতাফ মাহমুদকে একুশে পদক প্রদান করা হয়। বাংলা সংস্কৃতি ও বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে অবদান রাখার কারণে তাঁকে এ পুরস্কার প্রদান করা হয। সংস্কৃতিক্ষেত্রে অসামান্য আবদান রাখায় শহীদ আলতাফ মাহমুদকে ২০০৪ সালে স্বাধীনতা পুরস্কার (মরণোত্তর) প্রদান করা হয়। এছাড়া তাঁকে স্মরণ রাখতে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে শহীদ আলতাফ মাহমুদ ফাউন্ডেশন।
দিনটি ছিল ১৯৮৬ সালের ২৪ অক্টোবর। এদিন সারা আরা মাহমুদের মা মারা গেলেন। বনানী গোরস্তানে দাফন সেরে মোনাজাত করে সবাই যখন বাড়ি ফিরছিলেন তখন হঠাৎ ১৮ বছরের শাওন চিৎকার করে তাঁর মামার উদ্দেশ্য বলে ওঠে, 'তোমার মার একটা কবর আছে, জায়গা আছে- আমার বাবার কবর কোথায়?'
সেদিন কেউ তাঁর প্রশ্নের উত্তর দিতে পারেননি। আজ এত বছর পরও এদেশের মানুষ কী শাওনের এই কথার উত্তর দিতে পারবে?
কৃতজ্ঞতা স্বীকার : www.shahidaltafmahmud.com, আশরাফী বিথী
সাহস২৪ ডটকম-এর প্রকাশিত প্রচারিত কোনো সংবাদ তথ্য, ছবি, রেখাচিত্র, ভিডিও, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
মন্তব্য
মন্তব্যে প্রকাশিত মত মন্তব্যকারীর একান্তই নিজস্ব। সাহস২৪ ডটকম-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে এসব মন্তব্যের কোনো মিল নাও থাকতে পারে। মন্তব্যকারীর বক্তব্যের বিষয়বস্তু নিয়ে সাহস২৪ ডটকম-এর কর্তৃপক্ষ আইনগত বা অন্য কোনো দায় নেবে না।