বিজিবি সদস্যদের আনুগত্য ও বিশ্বস্ততা প্রশ্নাতীত: প্রধানমন্ত্রী
বিজিবি দিবসে পিলখানায় নতুন পরিবেশ ও সুশৃঙ্খল আয়োজেনে মুগ্ধতা প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। রবিবার(২০ ডিসেম্বর) সকালে পিলখানার বীর উত্তম আনোয়ার হোসেন প্যারেড গ্রাউন্ডে অভ্যর্থনা গ্রহণ করে তিনি কুচকাওয়াজ উপভোগ করেন।
পরে প্রধানমন্ত্রী সীমান্ত ব্যাংকের লোগো নির্বাচন ও উন্মোচন করেন। এ সময় তিনি তিনটি হাসপাতালের কার্যক্রমের ফলক উন্মোচন করেন। এরপর প্রধানমন্ত্রী বীর উত্তম খন্দকার ফজলুর রহমান মিলনায়তনে বৈঠক করেন।
এ সময় প্রধানমন্ত্রী তার বক্তব্যে বলেন, বিজিবির সদস্য হিসেবে আপনাদের আনুগত্য ও বিশ্বস্ততা প্রশ্নাতীত। কর্মকর্তা ও সদস্যদের মধ্যে পারস্পরিক আস্থা ও শ্রদ্ধাবোধ, শৃঙ্খলাবোধ, মানবিকতা ও সর্বোপরি পারস্পরিক সহানুভূতিশীলতাই এই বাহিনীর বন্ধন দৃঢ়তর করবে। পুনর্গঠনের পর বিজিবি সদর দপ্তরে এটা আমার ৩য় দরবার। এখানে এসে নতুন পরিবেশ ও সুশৃঙ্খল আয়োজনে আমি মুগ্ধ।
মুক্তিযুদ্ধে আত্মত্যাগ বিবেচনায় বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ একটি গৌরবোজ্জ্বল প্রতিষ্ঠান। ১৭৯৫ সালে রামগড় লোকাল ব্যাটালিয়ন নামে প্রথম গড়ে তোলা হয় এ বাহিনী। সময়ের ব্যবধান ও ভৌগোলিক পরিবর্তনের কারনে বিভিন্ন নামে দায়িত্ব পালনের পর এখন বিজিবি নামে সীমান্তরক্ষী বাহিনী হিসেবে কাজ করছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আহ্বানে সাড়া দিয়ে মুক্তিযুদ্ধ শুরুর প্রথম প্রহরেই এ বাহিনীর সদস্যরা পাকিস্তানী সেনাদের প্রতিরোধে নামে। ১৯৭১ এর ২৬ মার্চের প্রথম প্রহরে পিলখানা থেকে তৎকালীন ইপিআরের বেতারকর্মীরা বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার ঘোষণা ওয়ারলেসের মাধ্যমে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে পৌঁছে দেয়। আর তা প্রচার করায় পাকিস্তানী বাহিনীর হাতে প্রাণ দেন তৎকালীন ইপিআরের সুবেদার মেজর শওকত আলী। এ সময় মুক্তিযুদ্ধে এই বাহিনীর শহীদ সদস্যদের প্রতি শ্রদ্ধা ও কৃতজ্ঞতা জানান প্রধানমন্ত্রী।
শেখ হাসিনা বলেন, গত জাতীয় নির্বাচনের আগে ও পরবর্তীতে রাজনৈতিক সহিংসতা, সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড প্রতিরোধ, আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ ও জনসাধারণের জান-মাল রক্ষায় আপনারা দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিয়েছেন। একাত্তরের পরাজিত শক্তি ও তাদের দোসরদের পরিকল্পিত টানা অবরোধে গাড়ি ভাঙচুর এবং চলন্ত গাড়িতে পেট্রোল বোমায় জীবন্ত মানুষকে পুড়িয়ে হত্যাসহ দেশ অচলের ষড়যন্ত্র চালিয়েছিল। আপনারা অক্লান্ত পরিশ্রমে তা বানচালে সক্ষম হন। রোহিঙ্গা সমস্যা, মায়ানমার সীমান্তে উত্তেজনা, রামুর বৌদ্ধ পল্লীর নিরাপত্তা ও পুনর্বাসন, পার্বত্য এলাকায় অস্থিতিশীল পরিস্থিতি, ছিটমহলবাসীকে পুনর্বাসনে আপনাদের পদক্ষেপ বিজিবির সুনাম ও মর্যাদাকে বাড়িয়েছে।
এ সময় বিজিবির সদস্যদের দক্ষতা বৃদ্ধি, পেশাদারিত্ব তৈরি, জোয়ানদের আবাসনসহ সার্বিক উন্নয়নে বর্তমান সরকারের পদক্ষেপগুলো তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী।
পদক্ষেপগুলো হলো: সীমান্তরক্ষী বাহিনীর আমরা বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ আইন-২০১০ পাস। আইন অনুযায়ী বাহিনীর আধুনিকীকরণের কাজ সম্পন্ন। বিজিবির কাঠামোতে জনবলের প্রাধিকার আগের চেয়ে ৮ হাজার ৬শ’ ৬২ জন বাড়ানো হয়েছে। ৪৪ হাজার থেকে বর্তমানে দাঁড়িয়েছে সাড়ে ৫২ হাজারে।
সীমান্তে সক্ষমতা বাড়াতে ২০০৯ সাল থেকে বিজিবিতে ২০হাজারের বেশি লোক নিয়োগ করা হয়েছে। বিজিবি সর্ব প্রথম ডিজিটাল পদ্ধতি অনুসরণ করে স্বচ্ছতার সঙ্গে লোক ভর্তি কার্যক্রম চালাচ্ছে। সরকার বিজিবির সদস্যদের কোম্পানি পর্যায়ে একটি করে যানবাহনের প্রাধিকার দিয়েছে।
বিজিবির অপারেশন জোরদারে ২৬টি ডাবল কেবিন পিকআপ অনুমোদন করেছে। দ্রুত টহল লক্ষ্যে প্রতিটি বিওপিতে ৪টি মোটরসাইকেলের প্রাধিকার নির্ধারিত হয়। ১ হাজার ৪শ মোটর সাইকেল সরবরাহ করেছে। বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে ৯শ ৩৫কিমি এবং বাংলাদেশ-মায়ানমার সীমান্তে ২শ ৮৫কিঃমিঃ সড়ক প্রকল্প বিবেচনাধীন। অধিক দূরত্বের বিওপির মধ্যবর্তী স্থানে ১শ ২৮টি বর্ডার সেন্ট্রি পোস্ট(বিএসপি) নির্মাণ সম্পন্ন। আরও ১শ ২৪টি বিএসপি নির্মাণ করা হবে।
বাংলাদেশ-ভারত এবং বাংলাদেশ-মায়ানমার সীমান্তের পার্বত্য অঞ্চলে ৪৭৯কিঃমিঃ সীমান্ত পাহারায় দুটি সেক্টর, পাঁচটি ব্যাটালিয়ন ও ৯২টি বিওপি স্থাপন চলছে। বিজিবির জন্য প্রথম ভাসমান বিওপি নির্মাণ করে দুর্গম সুন্দরবন রক্ষার ব্যবস্থা।
প্রধানমন্ত্রী পদক্ষেপ ও উন্নয়ন কর্মকাণ্ড নিয়ে আরও বলেন, আমার সরকার আপনাদের সীমান্ত ভাতা মূল বেতনের শতকরা ৩০ শতাংশ বাড়ায়। আপনারা আগে ৩শ ৩৮ টাকা হারে মাসিক সীমান্ত ভাতা পেতেন, যা এখন অনেক বেড়েছে।
আপনাদের বাৎসরিক অর্জিত ছুটি ২মাস ভোগের আবেদন করেছিলেন যা আমি অনুমোদন দিয়েছি। ছুটিতে যাওয়ার সময় ২ মাসের বেতন-ভাতা অগ্রিম পাচ্ছেন। আমি বিজিবির জুনিয়র কর্মকর্তাদের পদমর্যাদা দ্বিতীয় শ্রেণীতে উন্নীত করেছি। আগে যা ৩য় শ্রেণী ছিল।
আপনাদের পারিবারিক রেশন ৬০শতাংশ থেকে ১০০ভাগে উন্নীত করেছি। বিজিবি সদস্যের সন্তানদের ২২বছরের পরিবর্তে ২৫বছর বয়স পর্যন্ত রেশন দিচ্ছি। তাদের প্রতিবন্ধী সন্তানদের সম্পূর্ণ চাকরিকাল রেশন দিচ্ছি। আপনাদের সন্তানদের তিন বছর থেকেই পূর্ণ স্কেলে রেশন দেওয়া হচ্ছে।
বিজিবি সদস্যদের জন্য আমি ৪টি ক্যাটাগরিতে পদক প্রবর্তন করেছি। যা আগে ছিল মাত্র দুটি ক্যাটাগরিতে। একই সঙ্গে মোট পদকের সংখ্যা ৬০টিতে উন্নীত করা হয়। এছাড়াও অন্য ১০প্রকারের পদক ও রিবনের প্রবর্তন করা হয়েছে। বিজিবি সদস্যদের জন্য বুলেট প্রুফ জ্যাকেট ও হেলমেটের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
বিজিবি সদস্যদের উন্নত কম্বল দিচ্ছি। কমব্যাট ড্রেস ও অফিস ড্রেস ৩সেটের পরিবর্তে ৪সেট দেওয়া হচ্ছে। অফিসারদের জন্য সার্ভিস ড্রেস প্রবর্তন করা হয়েছে।
দেশব্যাপী ১শ ৮০টি বিওপিতে সুপেয় পানি সরবরাহ করা হচ্ছে। নতুন ৪টি ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট দেওয়া হয়েছে। নীলডুমুর ব্যাটালিয়নে পানিবাহী বিশেষ নৌযান সরবরাহ করা হয়েছে। আমরা বিদ্যুৎবিহীন ৩শ ৩৩টি বিওপিতে সৌর বিদ্যুৎতের ব্যবস্থা করেছি। অবসরপ্রাপ্ত সদস্য, মুক্তিযোদ্ধা সদস্য এবং তাদের পরিবারও বিজিবি হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন। দীর্ঘদিন থেমে থাকা বিজিবি সদস্যদের টাইম স্কেল, বেতন সমতাকরণ ও পেনশন পুনরায় দিচ্ছি। ৩হাজার ৮শ ৪৫জন বিজিবি সদস্যের টাইম স্কেল দিয়েছি। অবশিষ্ট সদস্যদের টাইম স্কেল দেওয়া হবে। বিজিবি সন্তানদের লেখা-পড়ার জন্য বিজিবি ছাত্রাবাস ও ছাত্রীনিবাস নির্মাণ করেছি। সীমান্ত ব্যাংক প্রতিষ্ঠার কাজ দ্রুত গতিতে চলছে। আজই বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর লেটার অক ইনটেন্ট হস্তান্তর করেছেন।
সীমান্তবর্তী এলাকায় নারী সংক্রান্ত বিষয়ে দেখাশুনা ও নারীর ক্ষমতায়নের জন্য বিজিবিতে নারী সৈনিক নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে। এ বছর বিজিবিতে ১শ নারী সদস্য নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, সীমান্ত রক্ষা, অভ্যন্তরীণ আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা এবং প্রাকৃতিক কিংবা সামাজিক যে কোনো দুর্যোগে বিজিবি জাতির আস্থার ঠিকানা। এ জন্য বিজিবি মহাপরিচালকসহ আপনাদের সবাইকে আন্তরিক ধন্যবাদ ও অভিনন্দন জানাচ্ছি। আপনারা সবাই দেশপ্রেম, সততা ও শৃঙ্খলার সঙ্গে নিজ দায়িত্ব পালন করবেন।
সাহস২৪ ডটকম-এর প্রকাশিত প্রচারিত কোনো সংবাদ তথ্য, ছবি, রেখাচিত্র, ভিডিও, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
মন্তব্যে প্রকাশিত মত মন্তব্যকারীর একান্তই নিজস্ব। সাহস২৪ ডটকম-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে এসব মন্তব্যের কোনো মিল নাও থাকতে পারে। মন্তব্যকারীর বক্তব্যের বিষয়বস্তু নিয়ে সাহস২৪ ডটকম-এর কর্তৃপক্ষ আইনগত বা অন্য কোনো দায় নেবে না।