ত্রিমুখী খাগড়াছড়িতে এগিয়ে ইউপিডিএফ প্রার্থী
পৌরসভা নির্বাচনকে ঘিরে প্রার্থীদের পোষ্টারে ছেয়ে গেছে খাগড়াছড়ি পৌর শহর। চলছে মাইকিং। গণসংযোগ আর ভোটারদের কাছে প্রতিশ্রুতির নানান ফুলঝুড়ি নিয়ে ভোট চাইছেন প্রার্থীরা। নানান সুরে তাল মিলিয়ে প্রার্থীদের সমর্থনে শহর জুড়ে চলছে মাইকিং। কেউ বলছেন পাল উঠেছে নৌকায়, আর কেউ বলছেন জোয়ার এসেছে ধানের শীষের। আবার কেউ বলছেন স্থানীয় নির্বাচনে লাঙ্গল-নৌকা নয় মার্কা হবে মোবাইল। একটু অন্তরালে বসে ভোটের হিসাব নিকাশ মিলিয়ে শেষ হাসি হাসতে চায় ইউপিডিএফ সমর্থিত নারিকেল গাছ প্রতীকের প্রার্থী কিরণ মারমা। তবে সচেতন ভোটাররা বলছেন তিন বাঙালীর ত্রিমুখী লড়াইয়ে নেতৃত্ব শূণ্য হতে পারে খাগড়াছড়ি পৌরসভায় বাঙালিদের।
খাগড়াছড়ি পৌরসভায় মেয়র পদে লড়ছেন ৫ জন প্রার্থী। নৌকা প্রতীকে আওয়ামী লীগের প্রার্থী সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান মোঃ শানে আলম, ধানের শীষ প্রতীকে বিএনপির প্রার্থী জেলা বিএনপি’র আইন বিষয়ক সম্পাদক এডভোকেট আবদুল মালেক মিন্টু, লাঙ্গল প্রতীকে জেলা জাতীয় পার্টির সভাপতি মো. ইছহাক ও নারিকেল গাছ প্রতীকে অনিবন্ধিত আঞ্চলিক সংগঠন ইউপিডিএফ প্রার্থী কিরণ মারমা।
খাগড়াছড়ি পৌরসভা নির্বাচনে সাধারণ কাউন্সিলর পদে ৪২ জন এবং সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলর পদে ১২ জন প্রার্থী শেষ পর্যন্ত নির্বাচনী মাঠে রয়েছেন। নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে এলাকার উন্নয়নে কাজ করবেন এমন প্রতিশ্রুতি নিয়ে নির্বাচনী এলাকা চষে বেড়াচ্ছেন কাউন্সিলর প্রার্থীরা। কাউন্সিলর হিসাবে যোগ্য প্রার্থী নির্বাচনে ভোটাররা তেমন একটা না ভাবলেও মেয়র প্রার্থী নির্বাচন নিয়ে নানান হিসাব কষছেন ভোটাররা।
প্রধান দুই রাজনৈতিক দলের প্রার্থীর পাশাপাশি নাগরিক কমিটি সমর্থিত মেয়র প্রার্থী ও বর্তমান মেয়র রফিকুল আলম এখন ভোটারদের নিকট চিন্তার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। খাগড়াছড়ির শান্তি সম্প্রীতি ও সাম্প্রদায়িক সহাবস্থান বজায় রাখতে অনেক ভোটাররাই প্রধান দুই দলের প্রার্থীর চেয়ে বর্তমান মেয়র রফিকুল আলমের পক্ষে অবস্থান নিয়ে মাঠে নামছেন। সাধারণ ভোটারদের পাশাপাশি দুই দলের অনেক নেতা-কর্মীও বর্তমান মেয়রের পক্ষে সাধারণ ভোটারদের কাছে ভোট প্রার্থনা করছেন। ফলে প্রধান দুই দলের নেতা-কর্মীদের মাঝে অন্তদ্বন্ধ বাড়ছে। ইতিমধ্যে বিএনপি’র এক কর্মী নাগরিক কমিটির সমর্থিত মেয়র প্রার্থী রফিকুল আলমের পক্ষে অবস্থান নেয়ায় বহিস্কার হয়েছেন। আওয়ামীলীগ প্রার্থী শানে আলম নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচনী মাঠে নামলেও দলের অনেক নেতাকর্মীরা তার পক্ষ্য কাজ না করে রফিকুল আলমের পক্ষ্যে নির্বাচনী মাঠে কাজ করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। দলটির একাধিক সূত্রে জানাযায়, বর্তমান মেয়র রফিকুল আলম জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক জাহেদুল আলমের ভাই হওয়ায় কিছু নেতা-কর্মী তার পক্ষে কাজ করছে। এই নিয়ে দলটিতে বাড়ছে অন্তদ্বন্ধ।
অপরদিকে দীর্ঘ দিন পর স্থানীয় নির্বাচনে জাতীয় প্রতীক ধানের শীষ প্রতীক পেয়ে বিএনপি শিবিরে খুশির বন্যা বইলেও একটি অংশে বইছে চাপা ক্ষোভ। নির্বাচনে প্রার্থী হতে না পারা এবং পছন্দের ব্যক্তিকে মনোনয়ন না দেয়ার ইস্যুকে কেন্দ্র করে দলে বিভক্তি দেখা দিয়েছে। পাশাপাশি মনিন্দ্র লাল ত্রিপুরার নেতৃত্বে বিএনপি’র অপর একটি গ্রুপ নাগরিক কমিটির প্রার্থী রফিকুল আলমের পক্ষে অবস্থান নিয়ে প্রচারনায় নামায় বিএনপি সমর্থিত ভোটাররাও হাটছেন উল্টো পথে। এদিকে, নতুন ভাবনায় পড়েছে বিএনপি। জেলা বিএনপি যুগ্ম সম্পাদক তাজুল ইসলাম বাদলের নেতৃত্বে একটি বৃহৎ অংশ সক্রিয় ভাবে স্বতন্ত্র প্রার্থী মেয়র রফিকুল আলমের মোবাইল ফোনের প্রতীকে নির্বাচনী মাঠ চসে বেড়াচ্ছেন। অনেকের ধারনা জেলা বিএনপি সভাপতি ও সাবেক সাংসদ ওয়াদুদ ভূইয়া নির্বাচনী মাঠে আসলে পাল্টে যাবে সব চিত্র। সব মিলিয়ে পৌর শহরে বিএনপি সমর্থিত ভোটার সংখ্যা বেশী থাকলেও দলীয় অন্ত-দ্বন্ধ ও গ্রুপিংয়ের কারণে বিএনপি প্রার্থী আবদুল মালেক মিন্টুর জয়ের বিষয়ে আশংকা করছেন সচেতন ভোটাররা।
পৌর এলাকার অনেক সচেতন ভোটাররা বলছেন সমতলের চেয়ে ভিন্ন প্রেক্ষাপট খাগড়াছড়ি। বাঙালির সুখ-দুখে যিনি পাশে থাকবেন এমন প্রার্থীকেই ভোট দিবেন ভোটাররা। আবার অনেকে বলছেন পার্বত্য এলাকায় বাঙালির নেতৃত্ব শূণ্য করতে একটি মহল কাজ করছে, তাই জাতীয় নির্বাচনে প্রতীক বিবেচনায় ভোট দিব, এটা স্থানীয় নির্বাচন তাই বাঙালির অস্তিত্ব রক্ষায় প্রয়োজনে সতন্ত্র প্রার্থীকে বেছে নেবে ভোটাররা।
এদিকে নির্বাচনী মাঠে তেমন একটা সরব না থাকলেও ভোটের হিসাব নিকাশে তিন বাঙালির ত্রিমুখী লড়াইয়ের সুযোগ নিতে নিরবে নির্বাচনী মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন নারিকেল গাছ প্রতীকে ইউপিডিএফ সমর্থিত প্রার্থী কিরণ মারমা। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, ভোটাররা যোগ্য প্রার্থী নির্বাচনে ভুল করলে উপজেলার পর পৌরসভা ও চলে যাবে ইউপিডিএফ সমর্থিত প্রার্থীর দখলে।
সাবেক সংসদ সদস্য ও খাগড়াছড়ি জেলাবিএনপি’র সভাপতি ওয়াদুদ ভূইয়া একটিগণমাধ্যমকে বলেন, ‘আমি খাগড়াছড়ি গেলেই সরকারী দল প্রশাসনকে ব্যবহার করে এলাকা ছাড়ার জন্য চাপ সৃষ্টি করে। তাই আমার নিরাপত্তার স্বার্থে নেতাকর্মীরা চান, আমি যেনো দূরে থেকেই প্রয়োজনীয় নির্দেশনার মাধ্যমে দল পরিচালনা করি’। তিনি আগামী ২০ ডিসেম্বর খাগড়াছড়ি পৌর নির্বাচনের প্রচারণায় যোগ দিচ্ছেন না জানিয়ে বলেন, ‘ওইদিন আমি ফেনীতে মা ও বড়ো ভাইয়ের মৃত্যুবার্ষিকীর একটি ধর্মীয় আনুষ্ঠানিকতায় যোগ দিচ্ছি, খাগড়াছড়িতে যাচ্ছি না’।
এদিকে জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সম্পাদক ও পার্বত্য জেলা পরিষদের সদস্যনির্মলেন্দু চৌধুরী বলেন, গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ব্যবস্থায় একজন সাবেক সংসদ সদস্যকে তাঁর নিজ এলাকায় অবস্থানে বাঁধা দেয়ার বিষয়টি অযৌক্তিক। তিনি জানান, সবাই এখন থেকে আমরা সহাবস্থানের পরিবেশ সৃষ্টি করবো।
এ প্রসঙ্গে খাগড়াছড়ি জেলা বিএনপি’র সাংগঠনিক সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান মিল্লাত বলেন, আমরা তো প্রতিনিয়িতই মামলার ঘানি টানছি। এই পৌর নির্বাচন উপলক্ষে অনেকদিন পর মন খুলে নেতাকর্মীদের সাথে মিশতে পারছি। তিনি আরো জানান, এই জেলায় ৫ জানুয়ারি নির্বাচনের পর বিএনপি’র কয়েক’শ নেতাকর্মীর নামে শতাধিক মামলা দিয়ে তাদের এলাকা ছাড়া করেছে আওয়ামী লীগ। অতীতে হামলা মামলা দিলেও পৌর নির্বাচনে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে কোন ধরনের প্রতিকূলতা সৃষ্টি হয়নি বলেও জানান বিএনপি’র এই শীর্ষ নেতা।
আওয়ামী লীগের সহসভাপতি রণবিক্রমত্রিপুরা জানান, আমাদের ভোট আমরা পাবো। ওয়াদুদ ভূইয়া এলাকায় এসে প্রচারণা করলে আমাদের কোন ক্ষতি নেই।
স্বতন্ত্র প্রার্থী রফিকুল আলম বলেন, আমি দীর্ঘ ৩০ বছর এলাকার মানুষের আর্থ-সামাজিক কল্যাণে কাজ করেছি বিধায় সাধারণ মানুষ আমার পাশে আছে। তিনি দাবী করেন, আসন্ন পৌর নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি দলীয় প্রার্থীকে জয়ী করতে নয় বরং আমার প্রতি ঈর্ষান্বিত জনপ্রিয়তায় হয়ে একটি সাম্প্রদায়িক অপশক্তিকে জয়ী করতে চাচ্ছে।
সাহস২৪ ডটকম-এর প্রকাশিত প্রচারিত কোনো সংবাদ তথ্য, ছবি, রেখাচিত্র, ভিডিও, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
মন্তব্যে প্রকাশিত মত মন্তব্যকারীর একান্তই নিজস্ব। সাহস২৪ ডটকম-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে এসব মন্তব্যের কোনো মিল নাও থাকতে পারে। মন্তব্যকারীর বক্তব্যের বিষয়বস্তু নিয়ে সাহস২৪ ডটকম-এর কর্তৃপক্ষ আইনগত বা অন্য কোনো দায় নেবে না।