- হোম
- >
- বিজ্ঞান-প্রযুক্তি
- >
- ফেসবুক উদ্যোক্তাদের নিয়ে শীতকালীন মেলা
ফেসবুক উদ্যোক্তাদের নিয়ে শীতকালীন মেলা
শীতের সকাল। ঘুম ভেঙ্গেছে ব্যস্ত নগরীর। রাস্তাগুলো নীরবতা ছেড়ে প্রাণ চঞ্চল হয়ে উঠছে। শীতের সকালে নগরের এখানে সেখানে পিঠা বিক্রির ধুম। মিষ্টি রোদ নগরবাসীর গায়ে উষ্ণতা ছড়াচ্ছে। এমন সকালে ধানমন্ডির ওমেন্স ভলেনটারি এসোসিয়েশনের অডিটোরিয়ামে (ডব্লিউভিএ) নাজনীন নামে এক উদ্যোক্তা ব্যস্ত তার স্টল সাজাতে। কেননা, এখানে চলছে শীতকালীন ফ্যাশন ফেয়ার।
নাজনীন বাংলামেইলকে জানান, একজন নারীর পর্দানশীল হয়ে ওঠার জন্য যা যা লাগে তার সবই রয়েছে তার স্টলে। মূলত নাজনীন ফেসবুকেই তার ব্যবসার প্রচার ও প্রচারণা করে আসছেন। নাজনীনের মত এমন অনেকেই এখানে হরেক রকমের পসরা সাজিয়েছে। এরা সবাই ফেসবুকে নিজেদের পণ্য প্রদর্শনী ও বিক্রি করে আসছে। তাই বলে অফলাইনেও থেমে নেই তাদের বিকিকিনি।
শীতকাল উপলক্ষ্যে ১৭ ডিসেম্বর শুরু হয়েছিল শীতকালীন এই মেলা। এবারের মেলায় অংশ নেয়া বেশিরভাগ উদ্যোক্তারাই ফেসবুক নির্ভর অনলাইন ব্যবসা করেন। গ্রাহকদের সাথে সরাসরি সম্পৃক্ত হতে তারা অংশ নিয়েছেন এই মেলায়। এই মেলায় মিলছে নারী উদ্যোক্তাদের নিজেদের বানানো অথবা দেশ বিদেশ থেকে সংগ্রহ করা দৃষ্টিনন্দন শাড়ি, বাহারী সালোয়ার কামিজ, দেশীয় পোশাক অথবা গহনা।
মেলায় অংশ নিয়েছে ২৩ টি স্টল। বেশিরভাগ উদ্যোক্তারা বয়সে তরুণ। কেউবা আবার মনে প্রাণে। ঢাকায় বসবাসকারী অংশগ্রহণকারী বেশি হলেও ঢাকার বাইরে থেকেও এসেছেন অনেক উদ্যোক্তারা। দর্শনার্থীরাও আগ্রহ নিয়ে মেলায় আসছে। দেখছে, কিনছে, কথা বলছে উদ্যোক্তাদের সাথে।
প্রতিবছর এমন মেলার আয়োজন করেন সারান্স ইভেন্টো। প্রতিষ্ঠানটির হেড অফ মিডিয়া উইং অ্যান্ড ক্লায়েন্ট রিলেশন আশেক বিন মাহমুদ বাংলামেইলকে বলেন,‘গত দুদিনে অনেক দর্শনার্থী এসেছে। অনলাইন উদ্যোক্তারা গ্রাহকদের সাথে সম্পর্ক তৈরি করতে পেরেছে এই মেলায়। মেলাকে প্রাণবন্ত করতে আমরা মেলার খবর ছড়িয়ে দিয়েছি সারা দেশে। পত্রিকা, পেপার নোটিশ, লিফলেট, ব্যানার দিয়েছি শহরের মোড়ে মোড়ে। ফেসবুকেও চলেছে আমাদের প্রচারণা। মেলা উপলক্ষ্যে পেইজ এবং গ্রুপ খোলা হয়েছে। উদ্যোক্তাদের এই মিলন মেলা আমাদের উৎসাহিত করে। গ্রাহকদেরও রয়েছে আকর্ষণ। অনলাইনেও যে ভালো পণ্য পাওয়া যায় এ ধারণা মেলা থেকে সৃষ্টি হচ্ছে।’
সকালে মিরপুর থেকে মেলায় এসেছিলেন অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তা মিসেস মমতাজ। তিনি বলেন, ‘আমার মেয়ে যুক্তরাষ্ট্রে থাকে। তার পছন্দের কাপড়গুলো সে অনলাইনে দেখে আমাকে বলে। আমি দেশ থেকে কিনে সেখানে পাঠাই। আমি নিজেও এখন অনলাইন থেকে কেনাকাটা করি।’ দাম এবং পণ্যের মান সম্পর্কে তার মতামত জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, ‘কাপড়গুলোর মান খুবই ভালো। আমি কয়েকটা কাপড় ইতোমধ্যেই কিনেছি। মূল্যও হাতের নাগালে। এদের উদ্যোগকে আমি প্রশংসা করি। মেলার আয়োজনও প্রশংসনীয়।’
নাফিসা রুম্মান এসেছেন তার পেইজ প্রিটি পিংক নিয়ে। তিনি নিজের ডিজাইনের ড্রেস বিক্রি করেন। বান্ধবীকে ব্যবসা করতে দেখে ব্যবসার প্রতি আগ্রহ সৃষ্টি হয়। তার স্বামী কাপড় ব্যবসায়ী হওয়ায় পান সহযোগিতা। সিঙ্গেল কুর্তি, পার্টি ড্রেসসহ চাহিদা আর দামের সমন্বয়ে ড্রেস বানান তিনি। ২২ দিন দেশে ফেসবুক বন্ধ থাকাতে তার ব্যবসার ক্ষতি হয়েছে কি না জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, ‘ফেসবুক বন্ধের সাথে সাথে ব্যবসাও বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। তবে স্বামীর প্রত্যক্ষ সহযোগিতা থাকাতে তেমন সমস্যার মুখোমুখি হতে হয়নি।
বেসরকারি ফার্মে কর্মরত গাউসুল আজমী এসেছেন উত্তরা থেকে। অনলাইন শপে সবসময় কেনাকাটা করেন তার স্ত্রী। এবার নিজেই এসেছেন মেলা থেকে স্ত্রীকে কাপড় উপহার দেবেন বলে। মেলার খবর কিভাবে জেনেছেন প্রশ্ন করলে উত্তর দেন, ‘ফেসবুক থেকেই জেনেছি। আর নিজে দেখে শুনে কেনাকাটার মজাই আলাদা। এখানের উদ্যোক্তাদের পণ্যের মূল্যও সাধারণ বাজারের চেয়ে কম। তাই অনলাইনের কেনাকাটা অফলাইনে সারতে এসেছি।’
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে মাত্র ভর্তি হয়েছেন নামরাতা খান। ইতোমধ্যেই অনলাইন ব্যবসায় ভালো জনপ্রিয়তা পেয়েছেন। তার ফেসবুক পেজে সাত হাজারেরও বেশি লাইক। মূলত হিজাব ও হিজাব পিন বিক্রি করেন তিনি। মালয়েশিয়া, ব্যাংকক থেকেও পণ্য নিয়ে আসেন। চীনের আলিবাবা ডট কম থেকেও কাপড় কিনে বিক্রি করেন। মেলা কতটা তার জন্য কতটা সহায়ক তা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এমন মেলা আমাদের পরিচিতি বাড়াতে দারুণ সহযোগিতা করে। যত বেশি কমিউনিটি তত বেশি প্রচার। তত বেশি বিক্রি।’
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সদ্য পাশ করা হুমায়রা এসেছেন মোহাম্মদপুর থেকে। লিফলেট থেকেই জেনেছেন মেলার কথা। সদ্য হিজাব পড়া শুরু করেছেন। বিপণন কেন্দ্রগুলোর চেয়ে অনলাইনে শপিং করতে বেশি পছন্দ করেন। মেলায় এসেছেন অনলাইন শপগুলো সম্পর্কে সম্যক ধারণা নিতে। তিনি বলেন,‘অনলাইন ব্যবসা ইতোমধ্যেই ফেসবুকের মাধ্যমে বেশি জনপ্রিয় হয়েছে। ফেসবুক দেখতে দেখতে কেনাকাটাও হয়ে যায়। তরুণ, মধ্যবয়সী এবং শিক্ষিত উদ্যোক্তাদের সাথে লেনদেন করতেও ভালো লাগে।’
নিজেদের পেইজগুলো ব্যবহারকারীদের জানাতে সর্বাত্নক চেষ্টা করে যাচ্ছেন উদ্যোক্তারা। মেলার আয়োজকদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন তারা। বৃহস্পতিবার শুরু হওয়া মেলা শেষ হবে আজ রাত ৮ টায়। মেলা সম্পর্কে হালনাগাদ তথ্য পাওয়া যাবে সারান্স ইভেন্টোর ফেসবুক পেইজে। অনলাইন উদ্যোক্তাদের সাথে সাথে সরাসরি কথা বলতে এবং পণ্য গুলো নিজের চোখে দেখতে, কিনতে আপনিও ঘুরে আসতে পারেন শীতকালীন এই মেলায়। মেলায় প্রবেশে ফ্রি।
সাহস২৪ ডটকম-এর প্রকাশিত প্রচারিত কোনো সংবাদ তথ্য, ছবি, রেখাচিত্র, ভিডিও, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
মন্তব্যে প্রকাশিত মত মন্তব্যকারীর একান্তই নিজস্ব। সাহস২৪ ডটকম-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে এসব মন্তব্যের কোনো মিল নাও থাকতে পারে। মন্তব্যকারীর বক্তব্যের বিষয়বস্তু নিয়ে সাহস২৪ ডটকম-এর কর্তৃপক্ষ আইনগত বা অন্য কোনো দায় নেবে না।