লালমনিরহাটে বিএনপিতে বিভক্তি আওয়ামী লীগও নেই স্বস্তিতে
আসাদুজ্জামান সাজু
প্রিন্টঅঅ-অ+
লালমনিরহাট ও পাটগ্রাম পৌর নির্বাচন জমে উঠেছে। তবে প্রার্থী নিয়ে বিএনপিতে রয়েছে বিভক্তি। আওয়ামী লীগও নেই স্বস্তিতে। অন্যদিকে জনবল সংকটে প্রার্থী দেয়নি জাতীয় পার্টি। লালমনিরহাট পৌরসভায় আওয়ামী লীগ প্রার্থী বর্তমান মেয়র রিয়াজুল ইসলাম রিন্টু দলীয় নেতা-কর্মীদের কাছ থেকে ছিলেন দূরে।
তিনি আবারও মেয়র প্রার্থী মনোনয়ন পাওয়ায় প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের মাঝে। ১৭.৪০ বর্গফুটের আয়তনের ১৯৭২ সালের ২০শে ফেব্রুয়ারি প্রতিষ্ঠা হয় লালমনিরহাট পৌরসভা। প্রতিষ্ঠার সময় ১৫ হাজার থেকে ২০ হাজার জনসংখ্যা নিয়ে যাত্রা শুরু হয় পৌরসভাটির। ধীরে ধীরে ২০০৫ সালে মে মাসে প্রথম শ্রেণির মর্যাদা পায়। বর্তমান পৌরসভায় জনসংখ্যা ৭০ হাজার। ভোটার সংখ্যা ৪১ হাজার ৭৪৩।
৩০ ডিসেম্বর নির্বাচন ঘিরে প্রার্থীর মাঝে নির্বাচনী আমেজ বিরাজ করলেও ভোটাররা পড়েছে পছন্দের প্রার্থী সংকটে। বড় দুই দলের কেন্দ্রীয় থেকে চাপিয়ে দেওয়া প্রার্থী নিয়ে দলের মাঝেও বিরূপ প্রতিক্রিয়া। লালমনিরহাট পৌরসভায় মেয়র পদে ৬ জন প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন।
আওয়ামী লীগ প্রার্থী বর্তমান মেয়র রিয়াজুল ইসলাম রিন্টু, বিএনপি প্রার্থী জেলা যুবদল সাধারণ সম্পাদক এম এ হালিম, জেপি প্রার্থী অবসরপ্রাপ্ত দারোগা বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুর রশিদ, জেলা যুবলীগ নেতা ওয়াহিদুর রহমান সেনা ও ইসলামী শাসনতন্ত্র আন্দোলনের আমিনুর রহমান ও সাবেক মেয়র আবদুর সোবাহেনের পুত্র এ কে এম হুমায়ন।
আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী বর্তমান মেয়র রিয়াজুল ইসলাম রিন্টু গত নির্বাচনে তার পিতা সাবেক জনপ্রিয় মেয়র মকবুল হোসেনের কারণে ভোটাররা আওয়ামী লীগের প্রার্থী রিন্টুকে ভোট দিয়ে জয়ী করে। রিন্টু আওয়ামী লীগ দলীয় নেতাকর্মী ও সাধারণ ভোটারদের কাছ থেকে দূরে থাকে ৫টি বছর। তার পিতা সাবেক মেয়র মকবুল হোসেন ছিলেন ওই পৌরসভার চারবারের নির্বাচিত মেয়র। মকবুল হোসেন মারা যাওয়ার পর তার ছেলে ভালো উন্নয়ন কাজ ও পিতার মতো হবে এই ভেবে রিন্টুকে জয়ী করলেও তিনি নিজেকে দূরে রাখায় হয়ে পড়েন জনবিচ্ছিন্ন।
রিয়াজুল ইসলাম রিন্টু জনবিচ্ছিন্ন হওয়ায় ভোটাররা তার প্রতি বিরূপ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করায় প্রার্থী বাছাইয়ের আগে পৌরসভাটি আওয়ামী লীগের হাতে রাখার জন্য নির্বাচনী মাঠে প্রচারণায় ছিল আওয়ামী লীগের ৫ জন সম্ভাব্য মেয়র প্রার্থী। এরা হলেন, পৌর আওয়ামী লীগ সভাপতি মো. মোফাজ্জল হোসেন, সাধারণ সম্পাদক কাজী নজরুল ইসলাম তপন, জেলা আওয়ামী লীগ যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আশরাফ হোসেন বাদল ও যুবলীগ নেতা রেজাউল করিম স্বপন।
তারাও অনেকে নির্বাচন প্রচারণা থেকে দূরে রয়েছে। যাচাই বাছাই না করে ও তৃণমূল নেতাদের মতামত না নিয়ে কেন্দ্রীয়ভাবে রিয়াজুল ইসলাম রিন্টুকে মনোনয়ন দেওয়ার খবরে বিভক্ত হয়ে পড়ে আওয়ামী লীগ। পৌর নির্বাচন ঘিরে সৃষ্টি হয়েছে লবিং ও গ্রুপিং। কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ মনোনয়ন নিয়ে এলেও গুটি কয়েক নেতা ছাড়া বেশিভাগ নেতা রয়েছে প্রচারণা থেকে দূরে। পৌরসভার ৯টি ওয়ার্ডের আওয়ামী লীগ সভাপতি-সম্পাদকরা রিন্টুর বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছে। তারা প্রচারণা থেকে রয়েছে দূরে। ওয়ার্ড নেতারা দূরে থাকায় এখনও তেমনভাবে জমে উঠেনি নির্বাচনী আমেজ।
৯টি ওয়ার্ডের সভাপতি-সম্পাদকরা সংবাদ সম্মেলনে জানান, রিয়াজুল ইসলাম রিন্টু বিগত নির্বাচনে জয়লাভ করে দলীয় কর্মীদের মূল্যায়ন করেনি। নির্বাচনী মাঠে তার অবস্থান শূন্য। ভোটাররা তার প্রতি বিরূপ ভূমিকা নিয়েছে। এজন্য এ নির্বাচনে নতুন প্রার্থী ছিল প্রত্যশা।
আওয়ামী লীগ প্রার্থী রিয়াজুল ইসলাম রিন্টু বলেন, বিগত দিনে আমি কোন দুর্নীতি করিনি, জনগণ আমার পাশে রয়েছে আমি জয়লাভ করবো। নাম প্রকাশ না করার শর্তে আওয়ামী লীগের এক প্রভাবশালী নেতা বলেন, কেন্দ্র চাপিয়ে দিলে কি হবে রিন্টুকে জয়লাভ করাতে হলে আমাদের কেন্দ্র দখল ছাড়া জয়লাভের কোন উপায় নেই।
বিএনপির প্রার্থী জেলা যুবদল সাধারণ সম্পাদক এম এ হালিম রয়েছেন ভালো অবস্থানে। বিএনপি একটি গ্রুপের প্রার্থী হিসেবে স্থানীয় নেতাদের প্রার্থী ছিল জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মো. হাফিজুর রহমান বাবলা। প্রচার প্রচারণাও চালিয়েছে প্রকাশ্য ও গোপনে। কেন্দ্রীয়ভাবে এম এ হালিমের নাম ঘোষণায় এক গ্রুপ গোপনে রয়েছে বিরূপ। ভোটযুদ্ধে আওয়ামী লীগ প্রার্থী রিন্টুর প্রতি দল ও ভোটার বিরূপ অবস্থায় নেওয়ায় বর্তমানে বিএনপির প্রার্থী হালিম রয়েছে সুবিধাজনক অবস্থায়।
বিএনপির প্রার্থী এম এ হালিম জানান, বিএনপি ক্ষমতায় থাকাকালীন পৌর এলাকার ব্যাপক উন্নয়ন করেছেন। কেন্দ্রীয়ভাবে মনোনয়ন আমাকে দেওয়ায় বিএনপির সবাই খুশি আমি জনগণের পাশে আছি থাকবো। ভোটাররা আমার পাশে আছে নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু ভোট হলে জয় নিশ্চিত। প্রার্থীরা যাই বলুক ভোটাররা লালমনিরহাটের রয়েছেন কঠিন অবস্থানে। যোগ্য প্রার্থী খুঁজছে ভোটাররা। যোগ্য ও উন্নয়ন নতুন প্রার্থীকে ভোট দিয়ে জয়লাভ করাবে নতুন বছরের নতুন মেয়রকে এ আশা নিয়ে রয়েছে ৩০ ডিসেম্বরের দিকে।
সাপটানা বাজারের ভোটার সালাম জানান, নতুন বছরের নতুন মেয়রকে ভোট দিয়া জয়লাভ করামো। ভোটার বাছের আলী জানান, ‘ভয় নাগে ৫ জানুয়ারির মতো ভোট কেন্দ্র হলে ভোট দিমু না।’
ভোটার রহিমুদ্দিন জানান, ভোট কেন্দ্রে যাওয়ার নিরাপত্তা চাই। নিরাপত্তা ছাড়া যামু না ভোট দিবার।
ওদিকে পাটগ্রামে মেয়র প্রার্থী ৪ জন আওয়ামী লীগের সমর্থিত বর্তমান মেয়র শমসের আলী, বিএনপি সমর্থিত মোস্তফা সালাউজ্জামান ওপেল, জাতীয় পার্টির আবদুল হামিদ লাঙ্গল ও আওয়ামী লীগ নেতা ওয়াজিদুল ইসলাম শাহীন স্বতন্ত্র।
পাটগ্রাম পৌরসভায় আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী শমসের আলী রয়েছে সুবিধাজনক অবস্থায়। পাটগ্রাম উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি আনোয়ারুল ইসলাম নাজু মনোনয়ন না পাওয়ায় তিনি রয়েছে দূরে। এ পৌরসভায় ৪২ হাজার ৮২ জন ভোটার। তবে বিএনপির প্রার্থী মোস্তফা সালাউজ্জামান ওপেল রাজনৈতিক মামলায় জর্জরিত হওয়ায় ভোট সুষ্ঠু হলে ভোটের হাওয়া পাল্টাতে পারে পাটগ্রামে।
জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তা ও অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মো. রেজাউল করিম সরকার জানান, সুষ্ঠুভাবে ভোট করতে সকল ব্যবস্থা নেয়া হবে। পুলিশ সুপার টিএম মোজাহিদুল ইসলাম জানান, ভোট শান্তিপূর্ণভাবে করতে কঠোরভাবে কাজ করবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
সাহস২৪ ডটকম-এর প্রকাশিত প্রচারিত কোনো সংবাদ তথ্য, ছবি, রেখাচিত্র, ভিডিও, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
মন্তব্য
মন্তব্যে প্রকাশিত মত মন্তব্যকারীর একান্তই নিজস্ব। সাহস২৪ ডটকম-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে এসব মন্তব্যের কোনো মিল নাও থাকতে পারে। মন্তব্যকারীর বক্তব্যের বিষয়বস্তু নিয়ে সাহস২৪ ডটকম-এর কর্তৃপক্ষ আইনগত বা অন্য কোনো দায় নেবে না।