জিয়া খানের আত্মহত্যার পিছনে সুরোজ পাঞ্চোলি
বলিউড অভিনেত্রী জিয়া খানের আত্মঘাতী মামলার চার্জশিট মিডিয়ায় ফাঁস হওয়ায় সিবিআইকে দোষারোপ করছে আদালত। এই উঠতি অভিনেত্রীর মৃত্যুর পর যে মামলা দায়ের করা হয়েছিল, তাতে সিবিআইয়ের দেওয়া চার্জশিটে জিয়ার প্রেমিক সুরোজ পাঞ্চোলির নাম রয়েছে। জিয়া খান মৃত্যু মামলার এই চার্জশিটে উঠে এল চাঞ্চল্যকর তথ্য। একাধিকবার গর্ভবতী হওয়া ও তারপরে গর্ভপাত করানোর হতাশাই জিয়া খানকে আত্মহত্যা করতে বাধ্য করেছিল বলে আদালতে পেশ করা চার্জশিট দিয়েছিল সিবিআই।
এর আগেই জানা গিয়েছিল, এই ঘটনায় জড়িত হিসাবে বলিউড অভিনেতা সুরোজ পাঞ্চোলির নাম রয়েছে। আরও জানা গিয়েছে, এই মামলায় বারবার বিভ্রান্তিকর জবানবন্দী দিয়েছেন সুরোজ। যার ফলে তদন্ত প্রক্রিয়া হোঁচট খেয়েছে বলেও জানিয়েছে সিবিআই। প্রয়াত অভিনেত্রী জিয়া খানের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক ছিল অভিনেতা সুরোজ পাঞ্চোলির সঙ্গে। সম্পর্ক চলাকালীন একাধিকবার সন্তানসম্ভবা হন জিয়া। প্রতিবারই সুরোজ তাকে গর্ভপাতে বাধ্য করেন। শেষবার গর্ভধারণের চার সপ্তাহ পর জিয়া সে কথা জানিয়েছিলেন সুরোজকে। নিন্তু নিজের ক্যারিয়ার বাঁচাতে জিয়াকে হাসপাতালে না নিয়ে ঘরে নানা ওষুধপত্রের মাধ্যমে অনাগত সন্তান নষ্ট করার পর থেকেই অবসাদগ্রস্ত হয়ে পড়েন জিয়া। যার পরিণতিতেই জিয়া আত্মহত্যা করেন।
সিবিআই জানায়, ২০১৩ সালের জুনের ৩ তারিখ দুটি ছবি ও একটি আইটেম গানে চুক্তিবদ্ধ হওয়ায় সুরোজ জিয়াকে ফুলের তোড়া পাঠিয়ে অভিনন্দন জানায়। তারপর তিনি তার এক বন্ধুর সাথে ফাইভ স্টার হোটেলে ডিনারে যান। রাত ১০টার দিকে তিনি জিয়াকে ফোন করে বলেন তিনি হোটেলে একজন জুয়েলারি ডিজাইনারের জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু জিয়া সেই ডিজাইনারকে ফোন করে জানতে পারেন তাদের সেই দিনের সকালেই দেখা হওয়ার কথা ছিল।
একথা শোনার সাথে সাথে জিয়া সুরোজকে ফোনে মিথ্যাবাদী বলেন। সিবিআইয়ের চার্জশীট অনুযায়ী জানা যায়, জিয়ার ফোন পেয়ে সুরোজ ডিজাইনার কখন আসবেন তা জানার জন্য তাকে ফোন দিলে সেই ডিজাইনার জানায় তাদের সেদিন সকালেই মিটিং ছিল। একথা জানার পর সুরোজ তাকে অনুরোধ করেন জিয়াকে যেন তিনি এই ভুল বোঝাবোঝির ব্যপারটি জানায়। এরপর জিয়া অনেকবার সুরোজ কে কল দিয়ে ফোন ব্যস্ত পান। ফোন না ধরায় জিয়া সুরোজের বাসায় যান।
একপর্যায়ে সুরোজের ফোন বন্ধ থাকায় বাড়ির কাজের লোককে দিয়ে তার আসার খবর পাঠান। কিন্তু সেই লোক মিথ্যা বলে সুরোজ তার বাবা আদিত্য পাঞ্চলির সাথে ব্যস্ত একথা বলে। তারপরেও জিয়াকে বাসার বাইরে অপেক্ষারত অবস্থায় দেখে সেই লোকটি সুরোজকে জানায়। সুরোজ তখন আরেক লোক পাঠিয়ে জিয়াকে বাড়ি থেকে বার করে দেয়। সুরজ জিয়াকে ম্যাসেজ পাঠায় যেন জিয়া তাকে ফোন করে। জিয়া পৌনে এগারোটার দিকে সুরোজকে কল দেন। তাদের উত্তপ্ত আলাপ সুরোজের বাসার কাজের লোক ও বাড়ির অন্যান্যরাও শুনেছিল। সিসিটিভি ফুটেজ থেকে জানা যায় জিয়া সেখান থেকে রাত ১০.৪৮ এর দিকে বেরিয়ে যান। সুরোজ তাকে আবারো রাত ১০.৫৪ তে ফোন করেন এবং সেটাই ছিল তাদের জীবনের শেষ ফোনালাপ। এরপর সুরোজ জিয়াকে রাত ১০.৫৬ থেকে ১১.২১ পর্যন্ত ১০টি ম্যাসেজ পাঠান। এর কোন উত্তর সুরোজ পান নি।
রাত ১১.২০ এর দিকে জিয়ার মা বাসায় ফিরে সিলিং ফ্যানের সাথে জিয়ার ঝুলন্ত মৃতদেহ আবিস্কার করেন। এই চার্জশিটে জিয়ার একাধিকবার গর্ভপাতের বিষয়টিও পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে দেওয়া হয়েছে। ২০১৩ সালের জানুয়ারীতে চার সপ্তাহের গর্ভবতী জিয়াকে গর্ভপাতে বাধ্য করান সুরোজ। ওষুধে কাজ না করায় জিয়ার শরীরে থাকা মৃত ভ্রূণের কিছু অংশ সুরোজ নিজেই টেনে বের করে কমোডে ফ্ল্যাশ করে দেন। সিবিআই জানায় সুইসাইড নোটে জিয়া লিখেছিলেন, ‘আমি নিজেকে তোমার কাছে পুরোপুরি সপে দিয়েছি, কিন্তু এখন আমি গর্ভধারন করতে ভয় পাই। যে কষ্ট তুমি আমাকে দিয়েছ তা আমাকে ধ্বংস করে দিচ্ছে।
আমার অনাগত বাচ্চাকে নষ্ট করে তুমি আমার আত্মাকে আঘাত করেছ। আমি খুবই আহত বোধ করছি’। জিয়ার মা রাবেয়া বারবার পুলিশকে জানায় তার মেয়ের মৃত্যুর কারণ আত্মহত্যা নয়, এটি খুন ছিল। কিন্তু প্রতিবারই কেসটি আত্মহত্যার নাম দিয়েই সাজানো হয়। আদালত থেকে মামলাটি পুলিশের কাছে থেকে সিবিআইকে সমর্পণ করা হয়। সেখানে তারাও এটিকে আত্মহত্যা বলেন। পরবর্তী তদন্তে জিয়ার সুইসাইড নোট থেকে তারা জানতে পারে কিভাবে সুরোজ এই কেসে যুক্ত। সিবিআই জানায়, জিয়া প্রায়ই সুরোজের ফ্ল্যাট পরিস্কার করতেন, তার জামা কাপড় ইস্ত্রি করে আলমারিতে জিয়াই রাখতেন।
গতকাল সুরোজ কোর্টে হাজিরা দেন। আদালতে চার্জশিটের একটি কপি সুরোজকে দেয়া হয়েছে। আগামী জানুয়ারির ১৮ তারিখে শুনানিতে ব্যপারগুলো খোলাসা হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এই মামলার বিচারক জানান, চার্জশিটে থাকা প্রত্যেকটি খুঁটিনাটি ব্যপারগুলো তিনি পত্রিকাতে দেখেছেন। সিবিআই থেকে তথ্য ফাঁস হওয়ার ব্যপারে তিনি বলেন, আদালতে এখনও তদন্তটি প্রক্রিয়াধীন। সেখান থেকে কিভাবে মিডিয়াতে খবরগুলো পৌঁছালো এই নিয়ে তিনি চিন্তিত। তদন্তের স্বার্থেই বিচারটি আরো যত্নসহকারে করার জন্য তিনি সিবিআইকে নির্দেশ দিয়েছেন।
সাহস২৪ ডটকম-এর প্রকাশিত প্রচারিত কোনো সংবাদ তথ্য, ছবি, রেখাচিত্র, ভিডিও, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
মন্তব্যে প্রকাশিত মত মন্তব্যকারীর একান্তই নিজস্ব। সাহস২৪ ডটকম-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে এসব মন্তব্যের কোনো মিল নাও থাকতে পারে। মন্তব্যকারীর বক্তব্যের বিষয়বস্তু নিয়ে সাহস২৪ ডটকম-এর কর্তৃপক্ষ আইনগত বা অন্য কোনো দায় নেবে না।