- হোম
- >
- মুক্তিযুদ্ধ
- >
- পাকিস্তানীদের মনোবল ভাঙতে শুরু হয়
পাকিস্তানীদের মনোবল ভাঙতে শুরু হয়
পাকিস্তানীসহ সকলের কাছেই ১৯৭১ সালের ১০ ডিসেম্বর নাগাদ এটা স্পষ্ট হলো যে, যুদ্ধ শেষ। সেসময় পাকিস্তানের পক্ষে থাকা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও তাদের অভ্যন্তরীণ যোগাযোগ মাধ্যমেও বিষয়টি পরিস্কার হয়। সেসময়কার দলিলপত্রগুলো বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের লাইব্রেরি অব কংগ্রেসে সংরক্ষিত আছে।
ওই সময় মার্কিন প্রেসিডেন্ট রিচার্ড নিক্সনের কাছে পাঠানো বার্তায় হেনরি কিসিঞ্জার বলেন, ‘পূর্ব পাকিস্তানে যুদ্ধ চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছেছে। ভারতীয় বাহিনী ঢাকাকে ঘিরে ফেলছে এবং পাকিস্তান বাহিনী আত্মসমর্পন করতে অস্বীকার করলে সেক্ষত্রে তারা চূড়ান্ত আক্রমনের জন্য প্রস্তুত হচ্ছে। প্রদেশটিতে পাকিস্তানের প্রতিরোধ ব্যবস্থা সম্পূর্ণ ভেঙ্গে পড়েছে, যদিও বিচ্ছিন্ন কিছু এলাকায় তারা নিয়ন্ত্রণ বজায় রেখেছে।
এ ধরনের বিপর্যয়কর পরিস্থিতি উপলব্ধি করে ঢাকায় অবস্থানরত পাকিস্তানের সামরিক কর্মকর্তারা কিছু বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য জাতিসংঘের কাছে আহবান জানিয়েছেন-১) পূর্ব পাকিস্তানের নির্বাচিত প্রতিনিধিদের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর, ২) অবিলম্বে যুদ্ধবিরতি কার্যকর, ৩) পাকিস্তান বাহিনীর পশ্চিম পাকিস্তানে প্রত্যাবর্তন, ৪) চলে যেতে ইচ্ছুক পশ্চিম পাকিস্তানের এমন অন্য নাগরিকদের প্রত্যাবর্তন, ৫) ১৯৪৭ সাল থেকে পূর্ব পাকিস্তানে বসবাসকারিদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, এবং ৬) কোন বদলা বা প্রতিশোধ গ্রহন করা হবে না এমন নিশ্চয়তা।
পশ্চিমে কাশ্মীরে ভারতীয়রা সফলভাবে পাকিস্তানের আক্রমণ প্রতিহত করে। এ ছাড়াও ভারতের পাল্টা বিমান হামলা এবং করাচি বন্দরে নৌবাহিনীর গোলাবর্ষণ পাকিস্তানের সরবরাহ ব্যবস্থা বাধাগ্রস্ত করে।
অন্যদিকে, ভারতীয়রা ঢাকা ও করাচি উভয় শহরে বোমা হামলা চালানোর ঘোষণা দিয়েছে। লোকজনের নিরাপদে চলে যাওয়ার লক্ষ্যে বিমানগুলোকে আজ ও আগামীকাল চার ঘন্টার জন্য করাচি এবং আগামী ২৪ ঘন্টা ঢাকা বিমানবন্দর আক্রমণের আওতামুক্ত থাকবে। লোকজনকে সরিয়ে নেওয়ার লক্ষ্যে বিদেশী বিমানগুলো ঢাকায় যাওয়ার আগে এবং ঢাকা থেকে ফেরার সময় কলকাতায় অবতরণ করবে এই শর্তে ১০ ঘন্টার জন্য নিরাপদে চলাচলের সুযোগ দেওয়া হবে। আত্মসমর্পণ অথবা যুদ্ধ বিরতির ব্যবস্থা করার জন্য জাতিসংঘের কর্মকর্তারা ঢাকায় অবস্থান করবেন।’
একই দিন তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান পরিস্থিতি নিয়ে নিক্সন ও কিসিঞ্জারের মধ্যে আলোচনা চলতে থাকে। এসময় তারা তৎকালীন সোভিয়েত নেতা লিওনিদ ব্রেজনেভের সংশ্লিষ্টতা নিয়ে কথা বলেন। আলোচনার এক পর্যায়ে নিক্সন বলেন, ‘আমাদের আকাঙ্খা পশ্চিম পাকিস্তানকে রক্ষা করা।’
লোকজনকে নিরাপদে সরিয়ে আনার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে জানিয়ে কিসিঞ্জার প্রেসিডেন্ট নিক্সনকে বলেন, ‘ইতিমধ্যে জর্ডানের চারটি বিমান পাকিস্তানে উদ্দেশ্যে রওয়ানা হয়েছে, আরও ২২ টি বিমান আসছে। আমরা সৌদি আরবের সাথে কথা বলছি, এখন আমরা জানতে পেরেছি তুরস্ক পাঁচটি দিতে ইচ্ছুক।’
সব শেষে পাকিস্তানে নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের তৎকালীন রাষ্ট্রদূত জোসেফ ফারল্যান্ড জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা হেনরি কিসিঞ্জারকে জানান, পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান দুইটি প্রস্তাব দিয়েছেন। এগুলো হলো: ১) অনতিবিলম্বে একটি যুদ্ধবিরতির ব্যাপারে ভারত ও পাকিস্তানকে একমত হতে হবে এবং যুদ্ধ বিরতি কার্যকর করার বিষয়টি পর্যবেক্ষণের জন্য জাতিসংঘ বা অন্য কোন আন্তর্জাতিক সংস্থা পর্যবেক্ষক পাঠাতে পারে।
২) যুদ্ধ ও সেনা প্রত্যাহারের ব্যাপারে মীমাংসার লক্ষ্যে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে যেকোন কার্যকর পর্যায়ে শিগগিরই আলোচনা শুরু। এছাড়াও এতে বাঙালিদের দাবি-দাওয়া ও সন্তুষ্টির তথা রাজনৈতিক মীমাংসার বিষয়টি স্থান পাবে।
তবে, বাস্তবতা হচ্ছে, এদিন ঢাকা- চট্টগ্রাম মহাসড়কের কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ শহর ‘লাকসাম’ পাকিস্তান বাহিনীর দখল মুক্ত হয়। সেখানে পাকিস্তান বাহিনীর অধিনায়ক তার অধীনস্থ কর্মকর্তা ও ৪১৬ জন ব্যক্তিসহ আত্মসমর্পণ করেন।
সাহস২৪ ডটকম-এর প্রকাশিত প্রচারিত কোনো সংবাদ তথ্য, ছবি, রেখাচিত্র, ভিডিও, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
মন্তব্যে প্রকাশিত মত মন্তব্যকারীর একান্তই নিজস্ব। সাহস২৪ ডটকম-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে এসব মন্তব্যের কোনো মিল নাও থাকতে পারে। মন্তব্যকারীর বক্তব্যের বিষয়বস্তু নিয়ে সাহস২৪ ডটকম-এর কর্তৃপক্ষ আইনগত বা অন্য কোনো দায় নেবে না।