দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম হিলিস্থলবন্দর দিয়ে আমদানি রপ্তানিকৃত পণ্য ২০১৫-১৬ অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে (জুলাই-নভেম্বর) লক্ষ্যমাত্রার অধিক ৩১ কোটি ৫৪ লাখ ৯১ হাজার টাকা বেশী রাজস্ব আহরণ করা হয়েছে। গত অর্থ (জুলাই-নভেম্বর) মাসে এ বন্দর থেকে রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ১১ কোটি ৮৫ লাখ টাকা। কিন্তু তা আহরণ হয়েছে ৪৩ কোটি ৩৯ লাখ ৯০ হাজার টাকা।

চলতি ২০১৫-১৬ অর্থবছরে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) হিলিস্থলবন্দরের রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে দেয় ৩৩ কোটি ৫০ লাখ টাকা বলে জানায় হিলি স্থলবন্দরশুল্কষ্টেশন কার্যালয় সূত্রে। সে হিসেব মোতাবেক অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাই এ আহরণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা ছিল ২ কোটি ৩৭ লাখ টাকা। কিন্তু এর বিপরীতে মাস শেষে আহরণ হয়েছে ২ কোটি ৭৬ লাখ টাকা। আগস্ট মাসে ২ কোটি ৩৭ লাখ টাকা লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে মাস শেষে আহরণ হয়েছে ৮ কোটি ৫৭ লাখ ৯৮ হাজার টাকা। 

অপরদিকে সেপ্টেম্বর মাসে ২ কোটি ৩৭ লাখ টাকা রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে মাস শেষে আহরণ হয়েছে ৮ কোটি ৭৬ লাখ ১৭ হাজার টাকা। অক্টোবর মাসে ২ কোটি ৩৭ লাখ টাকা লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে মাস শেষে আহরণ হয়েছে ১২ কোটি ৩৪ লাখ ৩৪ হাজার টাকা। নভেম্বর মাসে ২কোটি ৩৭ লাখ টাকার বিপরীতে আহরণ হয়েছে ১০ কোটি ৯৫ লাখ ৪১ হাজার টাকা। 

উল্লেখিত এরুপভাবে গত পাঁচ মাসে হিলিস্থলবন্দর থেকে সর্বমোট রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ ছিল ১১ কোটি ৮৫ লাখ টাকা এর বিপরীতে পাঁচ মাসে সর্বমোট আহরণ হয়েছে ৪৩ কোটি ৩৯ লাখ ৯০ হাজার টাকা। এতে করে গত পাঁচ মাসে রাজস্ব আহরণে লক্ষ্যমাত্রার অধিক ৩১ কোটি ৫৪ লাখ ৯১ হাজার

টাকা বেশি পরিমাণ রাজস্ব আহরণ হয়েছে বলে, জানায় হিলি স্থলবন্দর শুল্কষ্টেশন কার্যালয়ের ঐ সূত্রটি।

বিগত ২০১৪-১৫ অর্থ বছরে হিলি স্থলবন্দর থেকে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল ১৫৬ কোটি ৮৮ লাখ ৬০ হাজার টাকা। সে মোতাবেক জুলাই মাসে ১১ কোটি ৪২ লাখ ৪৮ হাজার টাকার বিপরীতে আহরণ হয়েছে ২ কোটি ৫২ লাখ ৫ হাজার টাকা। আগস্ট মাসে ২১ কোটি ৪৫ লাখ ৭২ হাজার টাকার বিপরীতে আহরণ হয়েছে ৪ কোটি ১৩ লাখ ৪৩ হাজার টাকা। সেপ্টেম্বর মাসে ১৭ কোটি ৫৯ লাখ ৯৬ হাজার টাকার বিপরীতে আহরণ হয়েছে ৪ কোটি ১৬ লাখ ৭৮ হাজার টাকা। অক্টোবর মাসে ৫ কোটি ৯৩ লাখ ৭০ হাজার টাকার বিপরীতে আহরণ হয়েছে ১ কোটি ৫৫ লাখ ৬ হাজার টাকা। নভেম্বর মাসে ১৭ কোটি ৫০ লাখ ৩৬ হাজার টাকার বিপরীতে আহরণ হয়েছে ১ কোটি ৫৩ লাখ ৫৩ হাজার টাকা। 

এভাবে পুরো অর্থবছর শেষে রাজস্ব আহরণ হয়েছে মাত্র ৩০ কোটি ৫৫ লাখ ৪০ হাজার টাকা। যার ফলে গত ২০১৪-১৫ অর্থবছরে হিলিস্থলবন্দরের রাজস্ব আহরণে ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছিল ১২৬ কোটি ৩৩ লাখ ২০ হাজার টাকা। যার ফলে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) চলতি ২০১৫-১৬ অর্থবছরে হিলিস্থলবন্দরের রাজস্ব আহরণে লক্ষ্যমাত্রা কমিয়ে নির্ধারণ করা হয়।

হিলিস্থলবন্দর আমদানি রফতানিকারক গ্রুপের সভাপতি মো.হারুন উর রশীদ হারুন বলেন, হিলিস্থলবন্দর দিয়ে আমদানিকৃত পণ্য নিরীক্ষার নামে বিভিন্ন প্রশাসনিক হয়রানিসহ বিভিন্ন স্থলবন্দর অনুযায়ি পণ্য শুল্কায়নের ক্ষেত্রে কাস্টমসের ভিন্ন ভিন্ন নিয়ম নীতি অনুসরণ, আমদানিকৃত পণ্যের মূল্য বাড়িয়ে দিয়ে শুল্কায়ন করা ও কমার্শিয়াল পণ্যের পরীক্ষণ, শুল্কায়ন ও ছাড় করণে ধীরগতির কারণে হিলিস্থবন্দর দিয়ে অধিক শুল্কযুক্ত পণ্যের আমদানি অনেকটা কমে এসেছে। বন্দর দিয়ে অধিক শুল্কযুক্ত পণ্য ফ্রেব্রিকস, তাজা ফল, শুটকি মাছ, পার্টসসহ বিভিন্ন কমার্শিয়াল পণ্যের আমদানি প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে। বন্দরের উন্নয়নের স্বার্থে বিরাজমান এসব প্রতিবন্ধকতা দুর করা হলে এবং বন্দর দিয়ে ভারত থেকে যেসব পণ্যের আমদানিতে নিষেধাজ্ঞা আরোপ রয়েছে সেগুলো প্রত্যাহার করা হলে হিলিস্থলবন্দরে লক্ষ্যমাত্রার অধিক কয়েকগুন বেশী রাজস্ব আহরণ করা সম্ভব হবে। 

অপরদিকে হিলিস্থলবন্দর শুল্কষ্টেশনের সহকারী কমিশনার (এসি) মো.মতিয়ার রহমান বলেন, হিলিস্থলবন্দর দিয়ে বর্তমানে আমদানি হওয়া পণ্যগুলোর মধ্যে বেশীরভাগ পণ্যই রয়েছে কম শুল্কযুক্ত পণ্য এছাড়াও এর মাঝে বেশ কিছু পণ্য শুল্কমুক্ত রয়েছে। তবে অর্থবছরের প্রথম থেকেই হিলিস্থলবন্দর দিয়ে বেশ পরিমাণ কাঁচামরিচ আমদানি হওয়ার ফলে বন্দর থেকে লক্ষ্যমাত্রার অধিক রাজস্ব আহরণ সম্ভব হয়েছে। এছাড়াও গত অর্থবছরে চালের উপর শুল্ক আরোপ না থাকলেও বর্তমানে আমদানি পর্যায়ে চালের উপর শুল্ক আরোপ করার ফলেও রাজস্ব আহরণ বেড়েছে। তাছাড়া গত মাসে দুটি সাধারণ নিলাম দেওয়া হয়েছে যা থেকে প্রায় ২ কোটি টাকার মতো রাজস্ব এসেছে। তবে বর্তমানে দেশের বাজারে দেশীয় জাতের কাঁচা মরিচ আসায় বন্দর দিয়ে কাঁচামরিচের আমদানি কমে এসেছে এছাড়াও বন্দর দিয়ে শুল্কযুক্ত পণ্যের আমদানি না হলে

আগামিতে রাজস্ব আহরণের পরিমাণ হ্রাস পাবে। তবে রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হবে আশাবাদ ব্যক্ত করেন ঐ কর্মকর্তা।