১৯১ নারী যৌন নিপীড়নের শিকার ৯ মাসে
ঢাকার গুলশানে ইউনাইটেড হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) চিকিৎসাধীন ছিলেন এক নারী। গত ২ নভেম্বর সন্ধ্যায় অস্ত্রোপচারের পর কিছু সময় তিনি অচেতন ছিলেন। এই সুযোগে তাকে যৌন নিপীড়ন করেন হাসপাতালের স্টাফ নার্স সাইফুল ইসলাম। ভুক্তভোগীর স্বামীর অভিযোগের ভিত্তিতে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ সাইফুলকে বরখাস্তও করে। এ ঘটনায় মামলা হলেও এখনও তাকে গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ।
শুধু এ ঘটনাই নয়, রাজধানীসহ সারাদেশে নানাভাবে প্রায় প্রতিদিনই যৌন নিপীড়নের শিকার হচ্ছেন নারী ও শিশুরা। সর্বশেষ গত শুক্রবার মানিকগঞ্জ থেকে ঢাকায় আসার পথে চলন্ত বাসে লাঞ্ছনার শিকার হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রী। বেসরকারি মানবাধিকার সংস্থা আইন ও সালিশ কেন্দ্রের তথ্য মতে, চলতি বছরের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সারাদেশে যৌন হয়রানির শিকার হয়েছেন ১৯১ জন। তাদের মধ্যে ৯ জন আত্মহত্যা করেছেন। একই সময় ধর্ষণের ঘটনা ঘটে ৬৬৭টি।
পুলিশ সদর দপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, গত আগস্ট থেকে অক্টোবর পর্যন্ত সারাদেশে নারী ও শিশু নির্যাতনের ঘটনায় ছয় হাজার ৭৭টি মামলা হয়েছে। এর মধ্যে ঢাকাতেই ঘটেছে ৪৬৪টি ঘটনা। নভেম্বর মাসের পরিসংখ্যান এখনও তৈরি হয়নি। তবে সংশ্লিষ্টদের তথ্য অনুযায়ী, সেই সংখ্যাও সারাদেশে প্রায় দুই হাজার। প্রতি মাসে গড়ে নারী ও শিশু নির্যাতন আইনে মামলা হচ্ছে দুই হাজার ২৬টি।
ঢাকা মহানগর পুলিশের গণমাধ্যম ও জনসংযোগ শাখার উপকমিশনার মুনতাসিরুল ইসলাম সমকালকে বলেন, নারী-শিশু নির্যাতনের অভিযোগ এলে তাৎক্ষণিকভাবে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হয়। পুলিশকে এ বিষয়ে সংবেদনশীল করে গড়ে তোলার জন্য এরই মধ্যে প্রশিক্ষণে বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। প্রত্যেক থানায় একজন করে নারী কর্মকর্তা পদায়নের প্রক্রিয়াও শুরু হয়েছে।
বাংলাদেশ মহিলা আইনজীবী সমিতির নির্বাহী পরিচালক অ্যাডভোকেট সালমা আলী সমকালকে বলেন, নারী-শিশু নির্যাতন বন্ধ করতে হলে সরকার, গণমাধ্যমসহ সব পক্ষকেই কার্যকর ভূমিকা রাখতে হবে। দেশে অনেক ভালো আইন আছে, কিন্তু সেগুলোর যথাযথ প্রয়োগ নেই। কোনো কোনো থানায় হয়তো নারী ও শিশুবান্ধব পরিবেশ আছে, আবার অনেক থানাতেই তা নেই।
সংশ্লিষ্টরা জানান, নারী ও শিশুদের যৌন হয়রানি, ধর্ষণ, হত্যার মতো ঘটনা কিছুতেই বন্ধ করা যাচ্ছে না। কখনও যানবাহনে উঠে, কখনও চিকিৎসা নিতে গিয়ে, আবার কখনও বন্ধু-সহকর্মীর ডাকে সাড়া দিতে গিয়ে যৌন হয়রানির শিকার হচ্ছেন নারীরা। এক্ষেত্রে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ভূমিকা নিয়ে অসন্তোষ রয়েছে ভুক্তভোগী ও স্বজনদের মধ্যে। তাদের মতে, এ ধরনের ঘটনায় জড়িতদের দ্রুত গ্রেফতার করে কঠোর শাস্তির আওতায় আনা হলে পরিস্থিতির কিছুটা হলেও উন্নতি হতো। অনেক ক্ষেত্রে পুলিশ সদস্যদের উপস্থিতিতে ঘটনা ঘটলেও তাদের নির্বিকার দাঁড়িয়ে থাকার অভিযোগ রয়েছে।
চলতি বছরে যৌন নিপীড়নের সবচেয়ে চাঞ্চল্যকর ঘটনাটি ঘটে গত ১৪ এপ্রিল, নববর্ষ উদযাপনের অনুষ্ঠানে। সেদিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি এলাকায় দুর্বৃত্তরা ভিড়ের মধ্যে কয়েক নারীর ওপর যৌন নিপীড়ন চালায়। ছাত্র ইউনিয়নের নেতারা কয়েক নিপীড়ককে পুলিশের হাতে তুলে দিলেও তাদের ছেড়ে দেওয়ার অভিযোগ ওঠে।
পুলিশের পক্ষ থেকে প্রথমে দাবি করা হয়, যৌন নিপীড়নের ঘটনা ঘটেনি। অবশ্য গণমাধ্যমে নিপীড়নের ভিডিও ফুটেজ প্রকাশ পেলে এ নিয়ে তোলপাড় শুরু হয়। একপর্যায়ে ঘটনা তদন্তে উচ্চ পর্যায়ের কমিটি করে পুলিশ। এ ঘটনায় শাহবাগ থানায় দায়ের মামলাটি এখন ডিবি পুলিশ তদন্ত করছে। পরে যৌন নিপীড়নে জড়িত আটজনের ছবি প্রকাশ করেছিল পুলিশ সদর দপ্তর। তাদের ধরিয়ে দিলে বা তথ্য দিলে এক লাখ টাকা পুরস্কার দেওয়ার ঘোষণাও ছিল। কিন্তু এতদিনেও তাদের গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ।
পুলিশ সদর দপ্তর সূত্র জানায়, চলতি বছরের অক্টোবরে সারাদেশে এক হাজার ৯৯১টি নারী ও শিশু নির্যাতনের ঘটে। এ সময় ঢাকায় মামলা হয় ১৫২টি। এর আগে সেপ্টেম্বরে সারাদেশে এক হাজার ৮৮৫ ও ঢাকায় ১৫৩টি মামলা হয়। আর আগস্টে সারাদেশে দুই হাজার ২০১ ও ঢাকায় ১৫৯টি মামলা হয়।
সাহস২৪ ডটকম-এর প্রকাশিত প্রচারিত কোনো সংবাদ তথ্য, ছবি, রেখাচিত্র, ভিডিও, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
মন্তব্যে প্রকাশিত মত মন্তব্যকারীর একান্তই নিজস্ব। সাহস২৪ ডটকম-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে এসব মন্তব্যের কোনো মিল নাও থাকতে পারে। মন্তব্যকারীর বক্তব্যের বিষয়বস্তু নিয়ে সাহস২৪ ডটকম-এর কর্তৃপক্ষ আইনগত বা অন্য কোনো দায় নেবে না।