মনোনয়ন যাচাই-বাছাইয়ের প্রথমদিন ফেনী, চাঁদপুর ও মুন্সীগঞ্জ জেলায় মেয়রপদের বিএনপির চার প্রার্থীর মনোনয়নপত্র বাতিল ঘোষণা করা হয়েছে।  

শনিবার ফেনী সদর পৌরসভা ও পরশুরাম, চাঁদপুরের ছেঙ্গারচর ও মুন্সীগঞ্জের মিরকাদিম পৌরসভার বিএনপি মনোনীত প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র বাতিল হয়ে গেছে। 

সংশ্লিষ্ট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও রির্টানিং অফিসাররা প্রার্থীদের হলফনামায় তথ্য গোপন ও স্বাক্ষর ভুল করার কারণে এসব মনোনয়ন বাতিল বলে ঘোষণা করেন। 

মেয়রপদের বিএনপি মনোনীত প্রার্থীদের মনোনয়ন বাতিল হওয়ায় এসব পৌরসভায় সরকারদলীয় প্রার্থীদের বিজয় সুনিশ্চিত বলে মনে করছেন আওয়ামী লীগ নেতারা। 

তবে বিএনপির নেতাদের অভিযোগ, সামান্য কারণে এসব মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়েছে। আমাদের ফেনী, চাঁদপুর ও মুন্সীগঞ্জ প্রতিনিধির পাঠানো প্রতিবেদন-  

ফেনী : ফেনী ও পরশুরাম পৌরসভা নির্বাচনে বিএনপি সমর্থিত দুই মেয়র প্রার্থীর মনোনয়নপত্র বাতিল করেছে রির্টানিং অফিসার। পরশুরাম পৌরসভায় আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থীর বিপক্ষে আর কোনো প্রতিদ্বন্দ্বি না থাকায় বর্তমান মেয়র নিজাম উদ্দিন চৌধুরী সাজেল বিজয়ী হতে চলছেন।  

নির্বাচনী কার্যালয় সূত্র জানায়, পৌরসভা নির্বাচনে শনিবার সারাদেশের মতো ফেনীতে প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র যাচাই-বাচাই হয়েছে। বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী ফজলুর রহমান বকুল হলফনামায় সাজাপ্রাপ্তির তথ্য গোপন ও পৌরসভার ইজারার টাকা পরিশোধ না করায় প্রার্থিতা বাতিল করা হয়েছে। 

এছাড়া স্বতন্ত্রপ্রার্থী আতিকুল আলম মজুমদারের মনোনয়নপত্রও বাতিল করা হয়। তার বিরুদ্ধে ৪৭টি মামলাসহ দুটিতে পরোয়ানা রয়েছে। ফেনী পৌর নির্বচনী রির্টানিং কর্মকর্তা মো. এনামুল হক প্রার্থিতা বাতিলের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।

পরশুরাম পৌরসভা রির্টানিং অফিসার মোজাম্মেল হক জানান, বিএনপি সমর্থিত মেয়র প্রার্থী মোস্তাফিজুর রহমান মাসুদ জামানতের টাকা কম ও প্রস্তাবকারী-সমর্থককারীর আইডিকার্ড ভুল থাকায় তার মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়েছে। আওয়ামী লীগ প্রার্থীর আর কোনো প্রতিদ্বন্দ্বি প্রার্থী না থাকায় নিজাম উদ্দিন চৌধুরী সাজেল বিজয়ী হতে চলছেন। এছাড়া জেলার ৩টি পৌরসভার কাউন্সিলর পদে আওয়ামী লীগ সমর্থিত ৩৩ জন একক প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দেয়ায় তারাও এখন বিজয়ের বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বিজয়ের পথে। 

অপরদিকে, দাগনভূঞা পৌরসভায় মেয়র পদে আওয়ামী লীগ প্রার্থী ওমর ফারুক খান, বিএনপি প্রার্থী কাজী সাইফুর রহমান স্বপনের মনোনয়নপত্র বৈধ বলে জানিয়েছেন রির্টানিং কর্মকর্তা ফরিদা খানম।

চাঁদপুর : চাঁদপুরের ছেঙ্গারচর পৌর নির্বাচনে বিএনপি প্রার্থী সারওয়ারুল আবেদীন খোকনের মনোনয়নপত্র বাতিল করেছেন রিটার্নিং অফিসার। আয়কর ও শিক্ষাগত যোগ্যতার কাগজপত্র দাখিল না করায় মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়।

শনিবার (৫ ডিসেম্বর) দুপুরে যাচাই-বাছাইয়ের সময় মনোনয়নপত্র বাতিল করেন মতলব উত্তর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও রির্টানিং অফিসার মজিফুল ইসলাম। 

জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মো. আতউর রহমান বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান,  আগামী দু’একদিনের ভেতর প্রয়োজনীয় সব কাগজপত্রসহ প্রার্থী আপিল করলে তা পুনারায় যাচাই-বাছাই করা হবে। 

তাতেও যদি তিনি বাদ পড়েন তবে আর কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী না থাকায় অপর প্রার্থী রফিকুল আলম জর্জকে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বিজয়ী ঘোষণা করা হবে। তবে সেজন্য আগামী ১৩ ডিসেম্বর পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। 

অপরদিকে চাঁদপুরের বাকি ৪ পৌরসভার মেয়র প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র রোববার (৬ ডিসেম্বর) যাচাই-বাছাই করা হবে বলে জানান এ কর্মকর্তা।

মুন্সীগঞ্জ : মিরকাদিম পৌরসভায় বিএনপি মনোনীত প্রার্থী মো. শামসুর রহমানের মনোনয়নপত্র বাতিল ঘোষণা করা হয়েছে। একই সঙ্গে বাতিল করা হয়েছে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী জামান হোসেনের মনোনয়নপত্র।

তিন হাজার ৪৫৭ টাকার পৌর হোল্ডিং কর বকেয়া থাকায় শামসুরের মনোনয়নপত্র বাতিল ঘোষণা করেন রিটার্নিং ও জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ফয়সাল কাদের।

নির্বাচন কর্মকর্তা ফয়সাল কাদের জানান, পৌরসভার সচিব স্বাক্ষরিত বকেয়া তালিকা অনুযায়ী বিধি মোতাবেক বিএনপি মনোনীত প্রার্থীর মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়েছে।

তবে বিএনপির এই প্রার্থীর দাবি হোল্ডিং কর বকেয়ার বাড়ির মালিক তিনি নন, তার শ্বশুর।

বর্তমান মেয়র আওয়ামী লীগ প্রার্থী শহিদুল ইসলাম শাহিন ‘ষড়যন্ত্র করে’ তার নামে কর বকেয়া দেখিয়েছেন বলে অভিযোগ করেন শামসুর রহমান। প্রার্থিতা ফিরে আপিল করবেন বলেও জানান তিনি।