বাংলা ভাষাতেও মার্জিত কথা বলা যায়
সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা আকবর আলি খান বলেছেন, ‘আমাদের রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ যে ভাষায় কথা বলেন, পৃথিবীর কোনো সভ্য দেশের রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ সে ধরনের ভাষা ব্যববহার করে না। এটা শুধু রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের মধ্যে সীমাবদ্ধ না, অনেক নাগরিক সংগঠনও এসব ভাষা ব্যবহার করছে। বাংলা ভাষা সম্ভবত এতো দুর্বল ভাষা নয়, এ ভাষাতেও মার্জিতভাবে কথা বলতে পারি।’
শনিবার দুপুরে ধানমণ্ডিতে টিআইবি কার্যালয়ে ‘গণমাধ্যম ও সুশাসন’ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান ও ‘অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা প্রতিযোগিতা-২০১৫’ এর পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, প্রধানমন্ত্রীর আন্তর্জাতিক বিষয়ক উপদেষ্টা ড. গহওর রিজভী।
টিআইবির বোর্ড অব ট্রাস্টিজের এ সদস্য বলেন, ‘টিআইবি সরকারবিরোধী প্রতিষ্ঠান নয়। আমরা টিআইবিতে দুর্নীতি নিয়ে কাজ করছি। টিআইবি সরকারে বন্ধু, আমরা সবাই সম্মিলিতভাবে বাংলাদেশকে সুখী-সম্মৃদ্ধ দেশ হিসেবে গড়ে তুলতে চাই। দুর্ভাগ্যের বিষয় হলো যে, বাংলাদেশের যে রাজনৈতিক দল আসে-যায়, সবাই টিআইবিকে শত্রু বলে মনে করে। কিন্তু টিআইবি মোটেও শত্রু না, টিআইবি সহযোগিতা করতে চায়, সেই সহযোগিতা হচ্ছে না। আর সহযোগিতা না হওয়ার কারণ হলো, আমাদের দেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে কেউ একটা অন্য ধরনের কথা বললেই, তাকে খুব খারাপ বলে মনে করা হয়।’
উদাহরণ টেনে তিনি বলেন, যারা উচ্চপদধারী হন, কোনো অনুরাগ বা বিরাগের বশবর্তী হয়ে কোনো নেবো না বলে তারা শপথ গ্রহণ করেন। অথচ তারাই বলেন, আমার দলের লোকজনকে কেন চাকরি দেয়া হচ্ছে না। অথচ তাদের উচিৎ সবাইকে চাকরি দেয়া, কিন্তু সেটা করা হয় না। আবার যদি কোন সমালোচনা করা হয়, তাহলে মনে করে তাকে ব্যাক্তিগত সমালোচনা করা হচ্ছে।’
টিআইবি যে প্রতিবেদন দেয়, সেই প্রতিবেদনে অবশ্যই ত্রুটি থাকতে পারে স্বীকার করে নিয়ে আকবর আলী খান বলেন, আলোচনা করলে বের হবে কোথায় সমাধান করা যাবে। কিন্তু রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ সমস্যা নিয়ে আলোচনা করতে রাজি হয় না। দুর্ভাগ্যবশত এই ধরনের মনোবৃত্তি আমরা অতীতেও দেখিনি, বর্তমানেও দেখতে পাচ্ছি না।
বিশিষ্ট এই অর্থনীতিবিদ বলেন, সুশাসনের দিক থেকে পৃথিবীর নিকৃষ্টতম দেশগুলোর মধ্যে শতকরা ২৫ বা ৩০ শতাংশের ভিতর বাংলাদেশ অন্তর্ভুক্ত। এই সুশাসনের অনুপস্থিতি সত্বেও বাংলাদেশের গণমাধ্যম যা অর্জন করেছে তা উল্লেখ্যযোগ্য এবং গর্ব করার মত।
আকবর আলী খান আরো বলেন, পৃথিবীর সব দেশেই দুর্নীতি আছে। কিন্তু বাংলাদেশের দুর্নীতির কয়েকটি বিশেষত্ব রয়েছে। অন্যদেশে দুর্নীতি করে উপকারে আসে, আমাদের দেশে বিনা উপকারে দুর্নীতি চলছে। এখানে শুধু বেআইনি কাজ করার জন্য দুর্নীতি হয় না, আইনি কাজ করা জন্যও দুর্নীতি হয়।
দুর্নীতি করলে বিচার হয় না অভিযোগ করে তিনি বলেন, কালকেই দুর্নীতি দমন করতে চাইলেও হবে না। এর জন্য সময় লাগবে। দুর্নীতির আমাদের হাজার বছর আগের সমস্যা। যেটা চাণক্যের অর্থশাস্ত্রে দেখতে পাবেন। এজন্য পদ্ধতিগত অনেক সংস্কার করলে দুর্নীতি হ্রাস করা সম্ভা। পদ্ধতিগত ছাড়া যেগুলো আছে সেগুলো আমাদের বিচার করার ব্যবস্থা করতে হবে। দুর্ভাগ্যবশত বাংলাদেশে কেউ দুর্নীতি করলে কোনো বিচার হয় না। যে বিচার হয় সেটার এতো ক্ষুদ্র সংখ্যা যে কেউ দুর্নীতি করলে আদৌ কোনো ফল পাচ্ছে না। এটাকে আমাদের পুনর্গঠন করা দরকার আছে।
টিআবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামানের পরিচালনায় অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বিশিষ্ট সাংবাদিক ও এটিএন বাংলার প্রধান সম্পাদক মনজুরুল আহসান বুলবুল। অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের মাঝে পুরস্কারও বিতরণ করা হয় অনুষ্ঠানে।
বিজয়ী যারা
প্রিন্ট মিডিয়া ক্যাটাগরিতে বিজয়ী হয়েছেন প্রথম আলোর জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক রোজিনা ইসলাম এবং ইলেক্ট্রনিক মিডিয়া ক্যাটাগরিতে যৌথভাবে বিজয়ী হয়েছেন যমুনা টেলিভিশনের ইনভেস্টিগেশন সেলের সম্পাদক মিজান মালিক ও নিজস্ব প্রতিবেদক সাজ্জাদ পারভেজ। একই সঙ্গে টেলিভিশনটির ক্যামেরাম্যান কাজী মোহাম্মদ ইসমাইলকেও বিশেষ সম্মাননা দেয়া হয়। অপরদিকে প্রথমবারের মতো প্রবর্তিত ‘জলবায়ু ও সুশাসন’ বিষয়ক অনুসন্ধানী সাংবাদিকতায় চ্যানেল টুয়েন্টিফোরের নিজস্ব প্রতিবেদক জিএম মোস্তাফিজুল আলম বিজয়ী হন এবং চিত্রগ্রাহক জাহাঙ্গীর আলম রতনকে বিশেষ সম্মাননা দেয়া হয়।
বিজয়ী সাংবাদিকদের একটি ক্রেস্ট ও এক লাখ টাকার চেক দেয়া হয়েছে। আর দুইজন চিত্রগ্রাহককে পঞ্চাশ হাজার টাকার চেক পুরস্কার হিসেবে দেয়া হয়েছে।
সাহস২৪ ডটকম-এর প্রকাশিত প্রচারিত কোনো সংবাদ তথ্য, ছবি, রেখাচিত্র, ভিডিও, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
মন্তব্যে প্রকাশিত মত মন্তব্যকারীর একান্তই নিজস্ব। সাহস২৪ ডটকম-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে এসব মন্তব্যের কোনো মিল নাও থাকতে পারে। মন্তব্যকারীর বক্তব্যের বিষয়বস্তু নিয়ে সাহস২৪ ডটকম-এর কর্তৃপক্ষ আইনগত বা অন্য কোনো দায় নেবে না।