'বৈবাহিক জীবন পাইনি, কিন্তু আমি ওর স্ত্রীই'
বলিউডে একসময় রাজ করেছেন অভিনেত্রী হেমা মালিনি। আর অভিনেতা হিসেবে বেশ খ্যাতি অর্জন করেছেন ধর্মেন্দ্র। তাদের ব্যাপারে অনেক কথায় বলেছেন হেমা। স্বামী হিসেবে ধর্মেন্দ্রকে রেখেছেন সম্মানের জায়গায়। নিচে বিস্তারিত তুলে ধরা হলো।
প্রশ্ন: এ বছর আপনি ঠাকুমা হলেন? নতুন একটা সম্পর্ক তৈরি হল আপনার জীবনে৷ কীভাবে দেখছেন এই নতুন ব্যাপারটা?
হেমা: হ্যাঁ, একেবারে নতুন সম্পর্ক৷ আমার ধারণাই ছিল, এটা আমাকে এত আনন্দ দেবে! ওর নাম দরিয়ান৷ ও প্রতিদিন আমার ঘরে আসে৷ আমি ওর সঙ্গে খেলা করি৷ আমাদের মেয়েদের ছোটবেলার কথা খুব মনে পড়ছে এই সময়৷ আমি তখন 'ওয়র্কিং মাদার' ছিলাম৷ ওরা আমার কাছে ছুটে আসত৷ জড়িয়ে ধরত৷ আমি যখন অন্তঃস্বত্বা ছিলাম, আমার শরীরে খুব একটা বদল আসেনি৷ আমার মেয়েরা যখন জন্মেছিল, খুব কম ওজনের ছিল৷ ৩.৫ পাউন্ড নাকি সদ্যজাতর ঠিকঠাক ওজন৷ কিন্তু ওদের ওজন খুব ছিল৷ সে যাই হোক, দরিয়ান যখন বড় হবে, খুব সুন্দর এক যুবকে পরিণত হবে৷ ওকে দেখেই বোঝা যায়৷ একজন নার্স আছেন ওর দেখাশোনার জন্য৷ ওর মা, আমার মেয়ে অহনা ভয় পায়, দরিয়ান নার্সের কাছে থাকতে থাকতে মাকে চিনতে ভুল করবে না তো৷ আমি ওকে বলেছি, বাচ্চারা নিজের মাকে ঠিক চিনতে পারে৷ আমার মা-ও আমাকে তাই বলেছিল৷ বাচ্চারা সব সময় মায়ের কাছে চলে আসে৷
প্রশ্ন: আপনি কি টেলিভিশনের জন্য কোনো নাচের অনুষ্ঠানের কথা ভাবছেন? সিরিয়াল?
হেমা: সিরিয়াল বানানো অনেক টাকার ব্যাপার৷ চ্যানেলে প্রচুর মানুষ বসে রয়েছেন এসব নিয়ে ভাবার জন্য৷ আমি ক্লান্ত হয়ে পড়েছি৷ একটি চ্যানেলের জন্য এর আগে আমি সিরিয়াল বানিয়েছি৷ 'মাটি কি বন্নো' নামের সিরিয়ালটা চলছিল৷ কিন্তু চ্যানেলের বিভিন্ন পদে কম বয়সী মেয়েরা বসে আছেন৷ তারা ক্রমাগত আমাকে বলতে থাকলেন, এটা পাল্টানোর জন্য, ওটা পাল্টানোর জন্য৷ ওদের কোনও বিষয়ে কোনও জ্ঞান নেই৷ ওদের কথা মতো আমি বদলগুলো করে দিলাম৷ তারপর চ্যানেল-ওয়ালারা আমায় ডেকে বললেন, সিরিয়াল ভালো চলছে না৷ সিরিয়াল ভালো চলেনি ওগুলো পরিবর্তনের জন্য৷ আমার চিত্রনাট্য খারাপ ছিল না৷ এই অভিজ্ঞতার পরে আমি ঠিক করে নিই, এই সব কাজ আর করব না৷
প্রশ্ন: আর পরিচালনা?
হেমা: এখন ছবি বানানো সহজ নয়৷ আমি 'টেল মি ও খুদা' প্রযোজনা করেছি৷ পরিচালক ভালো ছিলেন না৷ এখন কর্পোরেট-রা সব কিছুর ওপর দখল নিয়ে নিয়েছে৷ আমাদের তাদের ওপরই ভরসা রাখতে হবে৷ কর্পোরেট জমানার আগে 'শোলে'র মতো ছবি হয়েছে৷ দেব সাব, গুরু দত্ত, রমেশ সিপ্পির মতো প্রযোজকরা স্বাধীনভাবে ছবি বানাতেন৷ এখন কর্পোরেটের নিজস্ব ধারণা আছে৷ কীভাবে চলতে পারে এটা! আমি জানি না, এখন মানুষ কীভাবে ছবি বানান৷ কর্পোরেটের সাহায্য না থাকলে ছবি বানানোও যাবে না৷ আগে একজন প্রযোজক আর একজন পরিচালক থাকতেন৷ এখন পাঁচ জন প্রযোজক৷ আমার ডেডিকেশন আছে, প্রতিভা আছে, কিন্তু সাহায্য করার মতো মানুষ পাব কোথায়! আমি তাহলে কী করে পরিচালনা করব?
প্রশ্ন: আপনি অতীতের দিকে তাকিয়ে নিজের জার্নিটা কীভাবে দেখেন?
হেমা: অসাধারণ জার্নি৷ এক কথায় দুর্দান্ত৷ জীবনের প্রথম দশটা বছর আমি দিল্লিতে কাটিয়েছি৷ যেহেতু একজন অভিনেত্রী এবং নৃত্যশিল্পী হতে চেয়েছিলাম, তাই চেন্নাই চলে যাই৷ ঈশ্বরের আশীর্বাদে নৃত্যশিল্পীও হতে পেরেছি, নায়িকাও হতে পেরেছি৷ পরে মুম্বাই চলে আসি৷ ১৫ থেকে ২৫ বছর বয়স পর্যন্ত আমার জীবনটা একেবারে অন্য রকম ছিল৷ প্রেমে পড়লাম, কাজও চালিয়ে গেলাম৷ জীবনে প্রেম থাকলে, জীবন সুন্দর হয়ে যায়, কাজও ভালো হয়৷ আমরা বিয়ের সিদ্ধান্ত নিলাম৷ তারপর আমার সন্তানরা হল৷ সবকিছুই খুব সুন্দর কেটেছে৷ সবাই জানেন, বিয়েটা আর পাঁচটা সাধারণ বিয়ে ছিল না৷ সেই সময় আমার মা ভারী কাঞ্জিভরম শাড়ি নিয়ে আসত৷ আমি যখন সেগুলো পরতাম, পাঞ্জাবি প্রযোজকদের স্ত্রীরা আমায় দেখে হাসতেন৷ আমি সব সময় মায়ের কথা শুনতাম৷ তখন নায়িকা হওয়াটা বেশ কঠিন ছিল৷ এখন তো সবাই হিরো-হিরোইন৷ আমার ভাগ্য ভালো বলে, আমাকে খুব বেশি লড়াই করতে হয়নি৷ আমার জীবন খুবই আনন্দে কেটেছে৷ আশা করি, জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত তাই কাটবে৷ আমি আরাম করে বসে এসব নিয়ে ধরমজির সঙ্গে আলোচনা করি৷ উনি 'শের ও শায়েরি' মোডে চলে যান৷ উনি অসাধারণ পদ্য লেখেন৷ আমার সেগুলো খুব ভালো লাগে৷ ঈশ্বর যদি আমাকে জিজ্ঞেস করেন, জীবনের কোন পর্বটা আমি আবার একইভাবে বাঁচতে চাই, তাহলে উত্তর দেওয়াটা কঠিন হবে৷ কারণ আমার জীবনের সব ক'টা পর্বই আলাদা আলাদা ভাবে সুন্দর৷
প্রশ্ন: ধর্মেন্দ্রর বিষয়ে কিছু বলুন৷
হেমা: ওকে আমার জীবনে পেয়ে আমি ধন্য৷ প্রথাগত বৈবাহিক জীবন আমি পাইনি৷ কিন্তু আমাকে ঈশ্বর বানিয়েছেনই ওর স্ত্রী হিসেবে৷ আর তাই আমি কিছু কাজও করতে পারছি৷ যদি অন্য কারও সঙ্গে বিয়ে হত, তাহলে হয়তো বসে বসেই জীবনটা কেটে যেত৷ আমি যে প্রচারের আলোয় খুব একটা থাকতে চাই, তা নয়৷ কিন্তু কিছু নির্দিষ্ট কাজ করতে চাই, জীবনে অনুপ্রেরণা চাই৷
সাহস২৪ ডটকম-এর প্রকাশিত প্রচারিত কোনো সংবাদ তথ্য, ছবি, রেখাচিত্র, ভিডিও, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
মন্তব্যে প্রকাশিত মত মন্তব্যকারীর একান্তই নিজস্ব। সাহস২৪ ডটকম-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে এসব মন্তব্যের কোনো মিল নাও থাকতে পারে। মন্তব্যকারীর বক্তব্যের বিষয়বস্তু নিয়ে সাহস২৪ ডটকম-এর কর্তৃপক্ষ আইনগত বা অন্য কোনো দায় নেবে না।