চলনবিল অঞ্চলে ‘কুমড়া-বড়ি’ তৈরীর ধুম
‘কুমড়া-বড়ি’ প্রধান উপাদান চাল কুমড়া ও মাষকলাইয়ের ডালই। এ ছাড়া কিছু মসলার সংমিশ্রণে তৈরী করা হয় কুমড়া-বড়ি। খাবারে আলাদা স্বাদ আনতে যার তুলনা হয়না। চাল-কুমড়ার মিশ্রণ থাকায় সম্ভবত এর নাম হয়েছে কুমড়া-বড়ি। চলনবিল অঞ্চলে চলছে এই কুমড়া-বড়ি তৈরীর ধুম।
অন্যান্য শীত মৌসুমে দেশের প্রতিটি অঞ্চলে কম-বেশী কুমড়া-বড়ি তৈরী করা হয়ে থাকে। তবে চলনবিল অঞ্চলের কথা বলা লাগছে আলাদাভাবে এ কারণে যে—এই অঞ্চলে প্রায় ৩ শ’ পরিবার বাণিজ্যিকভিত্তিকে ‘কুমড়া-বড়ি’ তৈরী করে জীবিকা নির্বাহ করছেন। চলনবিলের তাড়াশ, উল্লাপাড়া, শাহজাদপুর, পাবনার চাটমোহর, ভাঙ্গুড়া, নাটোরের গুরুদাসপুর, সিংড়া এলাকার কমপক্ষে ২০টি গ্রামে তৈরী করা হচ্ছে সুস্বাদু ‘কুমড়া-বড়ি’।
তাড়াশে কুমড়া-বড়ি তৈরীতে নিয়োজিত তাসলিমা খাতুন (৪৫) জানালেন, খাদ্যে বৈচিত্র্য আনতে ও রসনা বিলাসে শীত মৌসুমে কুমড়া-বড়ি তৈরী করে। দেশীয় জাতের কৈ, মাগুর, শিং, শৈল, আইড়, গজারসহ মাছের তরকারি রান্নায় স্বাদের বৈচিত্র্য আনতে ব্যবহার করা হয় এই বড়ি।
তিনি আরও জানালেন, এ অঞ্চলের কুমড়ার বড়ি গুণগত মানে উন্নত হওয়ায় এর চাহিদা চলনবিল এলাকা ছেড়ে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন শহরে।
নওগাঁ গ্রামের কুমড়া-বড়ি তৈরীতে নিয়োজিত মোহাম্মদ সিদ্দিকের স্ত্রী মায়া খাতুন (৩২) বললেন, ‘মূলত শীতের মৌসুমে বাজার ধরতে আশ্বিন, কার্তিক, অগ্রহায়ণ এই তিন মাস আমাদের পরিবারগুলো কুমড়া-বড়ি তৈরীতে ব্যস্ত থাকে।’
মায়া খাতুন জানালেন, পরিবারের পুরুষ সদস্য ডাল ভিজিয়ে মেশিনে গুঁড়া করে বাড়িতে আনেন। পরে বড় গামলা বা বালতিতে ডালের গুঁড়া, পাকা চাল কুমড়া, কালো জিরা ও আরও কিছু মসলা মিশিয়ে এক ধরনের মণ্ড তৈরী করা হয়। পরে রোদে শুকানোর জন্য টিনের বা কাঠের পিঁড়িতে সরিষার তেল মাখিয়ে বড়ি করে সাজিয়ে শুকাতে দেওয়া হয়। ওই বড়ি ২-৩ দিন কড়া রোদে শুকিয়ে প্রস্তুত করা হয় সুস্বাদু কুমড়া-বড়ি। এ কাজে নারীরাই মুখ্য ভূমিকা পালন করেন।
বর্তমানে চলনবিল অঞ্চলের প্রতি কেজি কুমড়া-বড়ি পাইকারী ৬০-৬৫ টাকা, খুচরা ৮০-৯০ টাকা দরে বিক্রি করা হয়। স্থানীয় বাজারে বিক্রি ছাড়াও ঢাকা, চট্টগ্রাম, নারায়ণগঞ্জ, পাবনা, সিরাজগঞ্জ, নাটোরসহ বিভিন্ন শহরে পাইকাররা চলনবিলের ‘কুমড়া-বড়ি’ কিনে নিয়ে বিক্রি করে থাকেন।
কুমড়া-বড়ি তৈরীর কাজে নিয়োজিত আল-আমীন হোসেন (৩৫) জানালেন, চলনবিলের বিভিন্ন গ্রামে প্রায় ৩ শ’ পরিবার কুমড়া-বড়ি তৈরী করে তা বাজারে বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করে আসছে।
তিনি আশংকার সুরে জানান, সাম্প্রতিক সময়ে ডাল ও মসলার দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় কারণে গরীব এই পরিবারগুলো কুমড়া-বড়ি তৈরীর ব্যবসা চালাতে হিমশিম খাচ্ছেন। পৃষ্ঠপোষকতা না থাকায় চলনবিলের ঐতিহ্যবাহী কুমড়া-বড়ি তৈরীতে নিয়োজিতরা তাদের জীবিকা নির্বাহের শংকার মধ্যে পড়েছেন।
আল-আমীন হোসেনের দাবি, ঐতিহ্যবাহী এই খাদ্যটি তৈরী করে যারা জীবিকা নির্বাহ করছে সরকার স্থানীয়ভাবে সহজ শর্তে ঋণদান করলে তারা এটাকে আরও বিস্তৃত পরিসরে করতে পারেন।
সাহস২৪ ডটকম-এর প্রকাশিত প্রচারিত কোনো সংবাদ তথ্য, ছবি, রেখাচিত্র, ভিডিও, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
মন্তব্যে প্রকাশিত মত মন্তব্যকারীর একান্তই নিজস্ব। সাহস২৪ ডটকম-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে এসব মন্তব্যের কোনো মিল নাও থাকতে পারে। মন্তব্যকারীর বক্তব্যের বিষয়বস্তু নিয়ে সাহস২৪ ডটকম-এর কর্তৃপক্ষ আইনগত বা অন্য কোনো দায় নেবে না।