বর না বর্বর
সিলেট জকিগঞ্জের মেয়ে সৈয়দা জেরিন আক্তার সুমি। যৌতুকের দাবিতে তার বরের পাষণ্ডতা কলঙ্কিত করেছে মানুষ জাতিকে। নির্যাতনের ধরন শুনে যে কেউ বলবেন এ কেমন, বর না বর্বর...
সুমির পরিবার জানান, ১১ বছর আগে সিলেট সদর উপজেলার ইসলমাপুরের বাসিন্দা শামীম খানের সঙ্গে বিয়ে হয় সুমি। তারা থাকেন ৭৫/এ গার্ডেন ভিউতে। কিন্তু অভিশাপ তখন বরের অর্থলিপ্সা, যৌতুক। বিয়ের পর থেকেই সুমির উপর নির্যাতন শুরু হয়। নির্যাতন ঢাকতে সুমির শরীরে নিয়ম করে প্যাথেডিন ইনজেকশন পুশ করেন শামীম। ১১ বছর ধরে সেসব নির্যাতনের কাহিনী বললে পৃষ্ঠার পর পৃষ্ঠা ফুরোবে!
যৌতুকলোভী বরের সর্বশেষ নির্যাতনের সীমা ছাড়িয়ে যায় গত কাল মঙ্গলবার (১ ডিসেম্বর)। ছুরির আঘাতে ক্ষতবিক্ষত করে নিষ্ঠুর নির্যাতন চালান সুমিকে। শুধু কি তাই? বাদ যায়নি সুমির গোপনাঙ্গ, স্পর্শকাতর বিভিন্ন প্রত্যঙ্গও। ছুরির আঘাতে গুরুতর জখম হয়ে জ্ঞান হারান তিনি। পরে পরিবারের লোকজন তাকে উদ্ধার করে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করেন। অবশ্য পার পায়নি পাষণ্ড বরও। ধরা খেয়ে শামীম এখন শাহপরান থানায়।
সুমির পরিবারের লোকজন জানান, বিয়ের পর কিছুদিন ভাল কাটলেও এর পর থেকেই সুমির উপর শুরু হয় নির্যাতন। বিয়ের বছর না পেরোতেই কোলজুড়ে আসে ফুটফুটে সন্তান। নাম তাহনু আক্তার। তাহনুর জন্মের ৩ বছর পর আরো একটি সন্তান আসে সুমির কোলে। নাম রাখা হয় তাকিব। দুটি সন্তানের মুখের দিকে তাকিয়েই না কি ১১ বছর ধরে মুখ বুজে সংসার করছেন সুমি!
একপর্যায়ে স্বামীর নির্যাতনের মাত্রা বেড়ে যায়। নির্যাতন ঢাকতে সুমির শরীরে পুশ করেন প্যাথেডিন। তাতেই ক্ষান্ত হননি শামীম। সর্বশেষ ছুরিকাঘাতের বর্বরতা। তাহনু ও তাকিব মাকে নির্যাতন না করার জন্য বাবার কাছে আবদার করে। কিন্তু শামীম তাদের সামনেই স্টিমরোলার চালায়!
নির্যাতনের মাত্রা বেড়ে গেলে শামীমের বৃদ্ধ মা সুমির পরিবারের লোকজনকে ফোন দিয়ে যেকোনো উপায়ে উদ্ধারের জন্য জানান। এর পরই পরিবারের লোকজন উদ্ধার করতে যায় সুমিকে। সঙ্গে পুলিশ নিতে ভোলেননি সুমির পরিবার। এ সময় সুমি অজ্ঞান ছিলেন। তার শরীর থেকে রক্ত ঝরছিল। পুলিশ সুমির ঘরে পায় প্যাথেডিনের খালি বোতল। সঙ্গে সঙ্গে তাকে পাঠানো হয় হাসপাতালে। বর্তমানে সুমি হাসপাতালের ৪র্থ তলার ৬ নম্বর ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন।
সুমির মা আলেয়া বেগম বলেন, ‘অনেক কষ্ট করে মেয়েকে বিয়ে দিয়েছি। সাধ্যমতো সব দিয়েছি। এমন নির্যাতন মেনে নেয়া যায় না। আমরা শামীমের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।’
মঙ্গলবার রাতেই নির্যাতনের শিকার সুমি বাদী হয়ে শাহপরান থানায় একটি মামলা দায়ের করেছেন। মামলা দায়ের ও শামীমকে আটকের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন শাহপরান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নিজাম উদ্দিন।
সাহস২৪ ডটকম-এর প্রকাশিত প্রচারিত কোনো সংবাদ তথ্য, ছবি, রেখাচিত্র, ভিডিও, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
মন্তব্যে প্রকাশিত মত মন্তব্যকারীর একান্তই নিজস্ব। সাহস২৪ ডটকম-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে এসব মন্তব্যের কোনো মিল নাও থাকতে পারে। মন্তব্যকারীর বক্তব্যের বিষয়বস্তু নিয়ে সাহস২৪ ডটকম-এর কর্তৃপক্ষ আইনগত বা অন্য কোনো দায় নেবে না।