- হোম
- >
- কৃষিজ ও প্রাণিজ
- >
- কাঁকড়া চাষ করে স্বাবলম্বী হচ্ছেন কক্সবাজারের তরুণ'রা
কাঁকড়া চাষ করে স্বাবলম্বী হচ্ছেন কক্সবাজারের তরুণ'রা
চিংড়ি চাষের পর এবার কক্সবাজার উপকূলীয় এলাকার চাষীরা কাঁকড়া চাষে ঝুঁকে পড়েছেন। বাংলাদেশ বর্তমানে প্রতি বছর প্রায় ১৮ হাজার মেট্রিন টন কাঁকড়া রপ্তানি করছে, যা দেশের অর্থনীতিকে দিচ্ছে ঊর্ধমুখী গতি।
কক্সবাজার জেলা মৎস্য কর্মকর্তা অমিতোষ সেন জানান, কক্সবাজারে মূলত দুই ধরনের কাঁকড়ার চাষ হচ্ছে। একটি সফট সেল ক্র্যাব, অপরটি হার্ড সেল ক্র্যাব। হার্ড সেল ক্র্যাব জীবিত অবস্থায় এবং সফট সেল ক্র্যাব হিমায়িত অবস্থায় বিদেশে রফতানি করা হয়। কক্সবাজার জেলার চকরিয়া, পেকুয়া, সদর ও উখিয়ায় উভয় পদ্ধতিতেই কাঁকড়ার চাষ হচ্ছে।
জানা যায়, ভাসমান খাঁচা পদ্ধতিতে কাঁকড়া চাষ করে ভাগ্য বদল করছে কক্সবাজারের উদ্যোগী তরুণেরা। শক্ত খোলস থেকে নরম খোলসে রূপান্তরের নতুন এই পদ্ধতির কাঁকড়া চাষ করে নরম খোলসযুক্ত কাঁকড়া রপ্তানী করে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনে যুক্ত হচ্ছে নতুন মাত্রা। সাগর বা নদী থেকে সংগ্রহ করা হয় কাদা মাটির কাঁকড়া। তারপর বিশেষ ভাবে তৈরী খাচায় ঢুকিয়ে মাচায় ভাসানো হয়। দুই সপ্তাহ অন্তর কাঁকড়া তার শক্ত খোলস পরিবর্তন করে।এসময় কাঁকড়ার খোলস বেশ নরম থাকে। আর সাথে সাথে নরম খোলসযুক্ত কাঁকড়া খাচা থেকে সংগ্রহ করে পাঠিয়ে দেওয়া হয় যথাস্থানে।
কৃষকদের সাথে কথা বলে জানা যায়, চিংড়ির চেয়ে কাঁকড়া চাষ অনেক সহজ। লাভও ভালো। এতে নি:স্ব হওয়ার আশংকা নেই।
উখিয়া বালুখালীর চিংড়ি চাষী বাবলু চৌধুরী জানান, তিনি দীর্ঘদিন ধরে চিংড়ি চাষ করে আসছিলেন। কিন্তু চিংড়ি ঘের করে পর পর কয়েক বছর ভাইরাসের আক্রমণে সর্বশান্ত হওয়ার পর ২০১১ সাল থেকে চিংড়ি চাষ বাদ দিয়ে ঘেরে কাঁকড়া চাষ করছেন। কাঁকড়া চাষে চিংড়ির মতো পোনা কিনতে হয় না। প্রাকৃতিকভাবেই নোনা পানিতে কাঁকড়া জন্মায়। নদী থেকে ঘেরে পানি উঠালেই বিনে পয়সায় লাখ লাখ পোনা পাওয়া যায়। এর পর নার্সিংয়ের মাধ্যমে এগুলো বড় করে তোলা হয়। ১৮০ গ্রামের ঊর্ধ গ্রেডের কাঁকড়ার স্থানীয় বাজার দর কেজি প্রতি ৮০০ থেকে ১ হাজার ২০০ টাকা।
চাষীরা জানান, মাত্র একশ’ শতাংশ জমিতে ৫ থেকে ৬ হাজার টাকা খাটিয়ে বছরে গড়ে ৩০০ কেজি কাঁকড়া উৎপাদন করা সম্ভব, যার বাজার মূল্য প্রায় দুই লাখ টাকা।
কাঁকড়ার খামারের মালিক ইসতিয়াক আহমদ জয জানান, কাঁকড়ার খামারে চিংড়ির মতো ভাইরাসের দুশ্চিন্তা নেই। প্রক্রিয়াকরণে জটিলতা বা দ্রুত পচনেরও ভয় নেই। আমরা চাই সরকার যদি এই খাতে ঋণ এর ব্যাবস্থা করেন তাহলে বাংলাদেশের রপ্তানী খাতকে আরো শক্তিশালী করবে।
কক্সবাজার সামুদ্রিক মাৎস্য গবেষণা ও প্রযুক্তি কেন্দ্রের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মোহাম্মদ ইনামুল হক বলেন, কাঁকড়া উৎপাদনে কাঙ্খিত লক্ষ্যে পৌঁছানো সম্ভব হচ্ছে না পর্যাপ্ত পোনার অভাবে। কারণ পোনার জন্য একমাত্র প্রাকৃতিক উৎসই ভরসা। ফলে পোনা আহরণে পোহাতে হয় নানা ঝক্কি-ঝামেলা। চাষীদের সেই সমস্যা বিবেচনা করেই আমরা কৃত্রিম প্রজননে পোনা উৎপাদনের গবেষণায় নামি। তিনি বলেন, হ্যাচারিতে কাঁকড়ার পোনা উৎপাদন অপেক্ষাকৃত নতুন প্রযুক্তি। এ ক্ষেত্রে মূল বাধা হলো পোনার বাঁচার হার কম। একটি পরিপক্ষ কাঁকড়ার ডিম দেয়ার ক্ষমতা ৮০ হাজার থেকে সর্বোচ্চ ৪০ লাখ। কিন্তু পোনা বাঁচার হার গড়ে ১০ শতাংশ। গবেষক দল হ্যাচারিতে তিনটি পরিপক্ষ মা কাঁকড়া সংরক্ষণ করে যথাক্রমে ৩২, ১৬ ও ২৬ লাখ ‘জুইয়া’ পান। তা পূর্ণাঙ্গ পোনায় পরিণত হতে আরো ছয়টি ধাপ অতিক্রম করতে হয়। এ ক্ষেত্রে আমরা সফল হয়েছি। এখন বাণিজ্যিকভাবে কাঁকড়ার পোনা উৎপাদনের প্রক্রিয়া চলছে।
এছাড়া জানুয়ারি থেকে ফেব্রুয়ারি দুই মাস কাঁকড়ার প্রজনন সময়। স্ত্রী কাঁকড়ার প্রজননের সময় এবং অপ্রাপ্ত বয়স্ক থাকাকালে শিকার নিষিদ্ধ করে সরকার একটি আইন করেছে।
সাহস২৪ ডটকম-এর প্রকাশিত প্রচারিত কোনো সংবাদ তথ্য, ছবি, রেখাচিত্র, ভিডিও, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
মন্তব্যে প্রকাশিত মত মন্তব্যকারীর একান্তই নিজস্ব। সাহস২৪ ডটকম-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে এসব মন্তব্যের কোনো মিল নাও থাকতে পারে। মন্তব্যকারীর বক্তব্যের বিষয়বস্তু নিয়ে সাহস২৪ ডটকম-এর কর্তৃপক্ষ আইনগত বা অন্য কোনো দায় নেবে না।