ঝালকাঠিতে নববধূকে আগুনে পুড়িয়ে হত্যা
ঝালকাঠি সদর উপজেলার আগড়বাড়ি নামক স্থানে বিয়ের ২ মাস না যেতেই যৌতুকের বলি হয়েছেন নববধূ জোসনা বেগমের (১৮)। ১ লাখ টাকা যৌতুকের দাবিতে পিতা-মাতাহীন জোসনাকে মারধরের পর গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন জ্বালিয়ে দেয় যৌতুক লোভী স্বামী সোহাগ (২২), ভাসুর রফিক (৩৫) ও ননদ খাদিজা (৩০)।
গৃহবধূ জোসনা বেগম মানুষরূপী পাষণ্ডদের কাছে প্রাণ ভিক্ষা চেয়ে অনেক আকুতি-মিনতি করেও মন গলাতে পারেনি। আশংকাজনক অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজের বার্ণ ইউনিটে ১৩ দিন চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ে পরাজয় বরণ করেন। ঝালকাঠি শহরতলির আগড়বাড়ি এলাকায় সংঘটিত এ নৃশংস এ ঘটনায় নিহত জোসনার ভাই মোঃ মজিবর সিকদার বাদী হয়ে ৩ জনকে আসামি করে ২৫ নভেম্বর রাতে ঝালকাঠি থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ২০০০/ সংশোধিত ২০০৩ এর ১১ (ক)/৩০ধারায় মামলা দায়ের করেছেন।
মামলার বিবরণে জানা গেছে, আগড়বাড়ী এলাকার মৃত ফজলুল হক হাওলাদারের পুত্র সোহাগ হাওলাদার এর সাথে গত ২০ সেপ্টেম্বর রাজাপুর কাজীর অফিসে ১ লাখ ২০ হাজার টাকা দেনমোহর ধার্য্য করে নলছিটি উপজেলার ভৈরবপাশা ইউনিয়নের ইশ্বরকাঠি গ্রামের মৃত হারুন শিকদারের কন্যা জোসনা বেগমের বিয়ে হয়। স্বামীর বাড়িতে তুলে আনার পর থেকে স্বামী ও তার ভাই-বোন রেন্টে মোটরসাইকেল ক্রয়ের জন্য পিত্রালয় থেকে ১ লাখ টাকা আনার জন্য চাপ সৃষ্টি করে। কিন্তু পিতামাতাহীন নববধূ জোসনা এত টাকা দিতে অক্ষমতা প্রকাশ করলে স্বামীসহ তার স্বজনরা তার উপর বিভিন্ন রকম নির্যাতন শুরু করে। গত ৯ নভেম্বর সকাল সাড়ে ৯টার দিকে যৌতুকের টাকার জন্য পুনরায় চাপ দিলেও সে অপরাগতা জানালে জোসনাকে শারীরিক নির্যাতনের এক পর্যায়ে বিষয়টি তার ভাই-বোনকে জানায়। এতে ক্ষুদ্ধ হয়ে স্বামী, ভাসুর ও ননদ মিলে তাকে মারধরের এক পর্যায়ে হাত-পা বেধে গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন দিয়ে দেওয়ার হুমকি দিলে সে তাদের হাতপা ধরে প্রাণভিক্ষা চায়। তাতেও পাষণ্ডদের মন না গলায় এক পর্যায়ে জোসনার গায়ে ম্যাচের কাঠি দিয়ে আগুন লাগিয়ে তারা সটকে পড়ে।
এসময় জোসনার চিৎকারে টেরপেয়ে প্রতিবেশীরা ছুটে এসে তাকে শরীরের সিংহভাগ গুরুতর অগ্নিদগ্ধ অবস্থায় উদ্ধার করে প্রথমে ঝালকাঠি সদর হাসপাতাল, সেখান থেকে বরিশাল শেবাচিম হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। অবস্থান অবনতি হলে তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ণ ইউনিটে প্রেরণ করা হলে ১৩ দিন মৃত্যুর সাথে লড়াই করে ২১ নভেম্বর জোসনা বেগম মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে।
অগ্নিদগ্ধ জোসনা চিকিৎসাধীন থাকার সময়ে তার সাথে থাকা বড়বোন মাহিনুর বেগমের কাছে ঘটনার কারণ ও অগ্নিকাণ্ডের বিষয়ে নিজের মুখে দেওয়া জবানবন্দী মোবাইল ফোনে রেকর্ড করে রাখা হয়েছে বলে মাহিনুর বেগম জানান।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ময়না তদন্ত শেষে জোসনা বেগমের লাশ বাড়িতে এনে দাফন সম্পন্ন করা হয়।
ঝালকাঠি থানার ওসি মাহে আলম জানান, ২৫ নভেম্বর বৃহস্পতিবার রাতে নিহতের ভাই মজিবর বাদী হয়ে দেওয়া অভিযোগটি এজাহার হিসাবে রেকর্ড করা হয়। এসআই আশিককে মামলাটি তদন্তের জন্য তদন্তভার প্রদান করা হয়েছে। আসামিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।
সাহস২৪ ডটকম-এর প্রকাশিত প্রচারিত কোনো সংবাদ তথ্য, ছবি, রেখাচিত্র, ভিডিও, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
মন্তব্যে প্রকাশিত মত মন্তব্যকারীর একান্তই নিজস্ব। সাহস২৪ ডটকম-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে এসব মন্তব্যের কোনো মিল নাও থাকতে পারে। মন্তব্যকারীর বক্তব্যের বিষয়বস্তু নিয়ে সাহস২৪ ডটকম-এর কর্তৃপক্ষ আইনগত বা অন্য কোনো দায় নেবে না।