প্রতিশ্রুতি আর আশ্বাসে জমেছে উঠেছে সাতক্ষীরা পৌর নির্বাচন
আসন্ন পৌরসভা নির্বাচনকে কেন্দ্র করে প্রার্থীদের প্রতিশ্রুতি আর আশ্বাসে জমে উঠেছে সাতক্ষীরা পৌরসভা নির্বাচন। মেয়র পদে লড়তে মাঠে নেমে প্রচার-প্রচারণা আর সভা-সমাবেশে ব্যস্ত সময় পার করছেন ৫ প্রার্থী। আর তিন প্রার্থী নাম মাত্রই নিজেকে মেয়র প্রার্থী ঘোষণা করেছেন।
বর্তমান মেয়র আলহাজ্ব এম.এ জলিল (বিএনপি) আগামিদিনে প্রার্থী হচ্ছেন না বলে সাহসকে নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, বয়সের ভারে তার পক্ষে আর নির্বাচন করা সম্ভব নয়। যার কারনে তিনি পৌর নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়াবেন।
অন্যদিকে, মানবতা বিরোধী অপরাধে জামায়াত নেতা মাওলানা দেলোওয়ার হোসেন সাঈদীর ফাঁসির রায় ঘোষণার পর মিনি পাকিস্তান হিসেবে পরিচিতি পাওয়া সাতক্ষীরায়, অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে সতর্কাবস্থানে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।
সাধারণ ভোটাররা সৎ যোগ্য মেধাবী ও পিতা হওয়ার যোগ্যতা সম্পন্ন ব্যক্তিকে পৌরসভার মেয়র নির্বাচিত করবেন বলে জানান। তবে শঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, তাদের মনোনীত পছন্দের ব্যক্তিকে ভোট দিতে কেন্দ্র পর্যন্ত যেতে পারবেন কিনা। সাধারণ ভোটারদের এমন প্রশ্নের জবাবে প্রার্থীরা তাদের ভোটাধিকারের নিশ্চয়তা প্রদান করে চলেছেন।
বর্তমান মেয়র আলহাজ্ব এম.এ জলিল, বিএনপির রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত। পৌর সভার মেয়রের দায়িত্ব পালন করছেন। একাধিক বার পৌরসভার চেয়ারম্যান ছিলেন। এই গুরুত্বপূর্ণ পদটি দখল করার জন্য মাঠে নেমেছেন জেলা জাতীয় পার্টির সভাপতি আলহাজ্ব শেখ আজহার হোসেন, পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি মো: আবু সায়ীদ ও সাধারণ সম্পাদক শাহাদাৎ হোসেন, চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি নাসিম ফারুক খান মিঠু, জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক তাসকিন আহম্মেদ চিশতি। তবে পোষ্টারের মধ্যেই সীমাবদ্ধ রয়েছেন জেলা শ্রমিকলীগের সভাপতি সাইফুল করিম সাবু। সাবেক মেয়র শেখ আশরাফুল হক নির্বাচন করবেন বলে শোনা গেলেও নির্বাচনী কার্যক্রম খুব একটা চোঁখে পড়ার মত নয়। অন্যদিকে, ৯টি ওয়ার্ডে একাধিক কাউন্সিলর প্রার্থীরাও মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন।
দলীয়ভাবে আ.লীগ এখনও কোন প্রার্থী ঘোষণা করেনি কাউকেই। অন্যদিকে, জাতীয় পার্টির একক প্রার্থী ও বিএনপি সমর্থিত দুই প্রার্থী থাকলেও একজন সতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রচার প্রচারণা চালাচ্ছেন।
জেলা জাতীয় পার্টির সভাপতি শেখ আজহার হোসেন ছাত্রজীবনে ছাত্র ইউনিয়ন পরবর্তীতে বিপ্লবী ছাত্র ইউনিয়ন, ভাসানী ন্যাপ, ইউনাইটেড পিপল্স পার্টির সাথে যুক্ত হন। ১৯৮৪ সাল থেকে তিনি জাতীয় পার্টির রাজনীতি শুরু করেন। ২০১২ সাল থেকে জেলা জাতীয় পার্টির সভাপতির দায়িত্বপালন করছেন। একজন ব্যবসায়ী নেতা হিসেবেও সুপরিচিত। চেম্বার অব কমার্সের চার বার নির্বাচিত সভাপতির দায়িত্বপালন করেন। বিগত পৌরসভার নির্বাচনেও তিনি মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করেন। এবারের নির্বাচনেও প্রার্থী হয়ে সভা-সমাবেশ, গণসংযোগ করে ব্যস্ত সময় পার করছেন। প্রথম শ্রেণির পৌরসভায় উন্নীত করে নাগরিকসেবা নিশ্চিত করবেন বলে তিনি প্রতিশ্রুতি দিয়ে প্রচারণা চালাচ্ছেন।
সাতক্ষীরা পৌর আ.লীগের সভাপতি মো: আবু সায়ীদ শিক্ষা জীবনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সূর্য্যসেন হলের ছাত্রলীগের নেতা ছিলেন। দীর্ঘ সময় ঢাকায় অবস্থানের পর ২০০৮ সালে সাতক্ষীরায় ফিরে নতুন করে আ.লীগের রাজনীতি শুরু করেন। ২০১৪ সালের ২১ ডিসেম্বর সাতক্ষীরা পৌর আওয়ামী লীগের কাউন্সিলে সভাপতি পদে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করে জয়ী হন। এক সময়ে রেডক্রিসেন্টের সাবেক সহ-সভাপতি ছিলেন। দূর্ণীতিমুক্ত মডেল পৌরসভা গড়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে গণসংযোগ, সভা-সমাবেশ ও প্রচার-প্রচারণায় ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন।
সাতক্ষীরা পৌর আ.লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহাদাৎ হোসেন ছাত্রজীবন থেকে ছাত্রলীগ পরে যুবলীগ পরবর্তীতে আ.লীগের রাজনীতিতে যুক্ত হন। ২০১৪ সালের ২১ ডিসেম্বর সাতক্ষীরা পৌর আ.লীগের কাউন্সিলের মাধ্যমে সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। সাতক্ষীরা পৌরসভাকে একটি মডেল পৌরসভা গড়ে তুলবেন বলে প্রতিশ্রুতি দিয়ে গণসংযোগ, সভা-সমাবেশ ও প্রচার-প্রচারণায় ব্যস্ত সময় পার করছেন।
সাতক্ষীরা চেম্বার অফ কমার্সের সভাপতি নাসিম ফারুক খান মিঠু এরশাদ বিরোধী আন্দোলনের সময় তৎকালীন জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক কামরুল ইসলাম ফারুকের হাত ধরে রাজনীতিতে আসেন। ১৯৯১ সালে জেলা যুবদলের সহ-সম্পাদক দায়িত্ব পান। ২০০৪ সালে জেলা যুবদলের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। ২০১৩ সালে কমিটি থেকে বাদ পড়ার পর যুবদলের রাজনীতি থেকে সরে আসেন। ২০১৩ সালে জেলা যুবদলের কাউন্সিলকে ঘিরে জেলা শিল্পকলা একাডেমীতে দুই গ্রুপের সংঘর্ষের পর মিঠু খানকে রাজনৈতিক কোন কর্মসূচিতে দেখা যায়নি। পরবর্তীতে সাতক্ষীরা চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি পদের নির্বাচনে দুইবার জয়ী হন। বর্তমানে তিনি মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করছেন। পৌর নাগরিক সেবা নিশ্চিতকল্পে বন্ধ পরিকর প্রতিশ্রুতি দিয়ে সভা-সমাবেশ ও গণসংযোগ করে চলেছেন। তিনি বিএনপির বাইরে সতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রচার-প্রচারণা চলাচ্ছেন।
জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক তাসকিন আহম্মেদ চিশতি ২০১৩ সালে জেলা যুবদলের কাউন্সিলকে কেন্দ্র করে জেলা শিল্পকলা একাডেমীতে দুই গ্রুপের সংঘর্ষে জেলা মৎস্যজীবী দলের সাধারণ সম্পাদক আমানউল্লাহ আমন নিহত হওয়ার পর জেলা বিএনপির কমিটিকে বিলুপ্ত করে কেন্দ্রীয় কমিটি। তারপর কেন্দ্র থেকে ঘোষিত সাতক্ষীরা জেলা বিএনপির পকেট কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদকের দায়িত্বপান তিনি। কিছুদিন পূর্বে তিনি নিজেকে পৌরসভার মেয়র প্রার্থী ঘোষণা দিয়ে পৌরবাসীর নাগরিক অধিকার প্রতিষ্ঠাকরন, সমৃদ্ধশালী ও ধনী-গরীব বৈষম্যহীন পৌরসভা গড়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করে গণসংযোগ চালাচ্ছেন।
শেখ আশরাফুল হক, আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে জড়িত। জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সহ-সভাপতি। এক সময়ে পৌরসভার মেয়র ছিলেন। খুব একটা জোরেসোরে প্রচার-প্রচারণা বা গনসংযোগে দেখা মেলেনি।
জেলা শ্রমিকলীগের সভাপতি সাইফুল করিম সাবু ছাত্রজীবনে ছাত্র ইউনিয়ন পরবর্তীতে ভাসানী ন্যাপের সাথে যুক্ত হন। ১৯৯৬ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি সাতক্ষীরা জেলা শ্রমিকলীগের সভাপতির দায়িত্ব পান। গত সংসদ নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে সাতক্ষীরা সদর আসনে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করেন। জেলা বাস মিনিবাস মালিক সমিতির সভাপতি ছিলেন। পোষ্টার লাগিয়ে নিজেকে মেয়র প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করলেও নির্বাচনী সভা-সমাবেশে খুব একটা দেখা যায় না।
ফাহিমুল হক কিসলু বর্তমানে সাতক্ষীরা জর্জ কোর্টের সহকারি পিপির দায়িত্ব পালন করছেন। জেলা ওয়ার্কাস পার্টির সম্পাদক মন্ডলীর সদস্য। সাবেক ছাত্র নেতা ছিলেন। তবে তার খুব একটা প্রচারণা চোখে পড়েনি।
জেলা নির্বাচন কমিশনার আবুল হোসেন জানান, সাতক্ষীরা সদর পৌর নির্বাচনের ভোটার সংখ্যা ৭৯ হাজার ৬৩৪জন। এর মধ্যে ৩৯হাজার ১১০জন পুরুষ ও ৪০ হাজার ৫২৪জন নারী ভোটার রয়েছে। তফশিল ঘোষণার পর সকল প্রার্থীকে ২৪ ঘন্টার মধ্যে নিজ দায়িত্বে তাদের ব্যানার ফেস্টুন, বিলবোর্ড খুলে ফেলার জন্য নির্দেশনা প্রদান করে পৌর এলাকায় মাইকিং করা হয়েছে। ৩০ ডিসেম্বর ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচনের জন্য আমাদের পক্ষ থেকে সকল প্রস্ততি সম্পন্ন রয়েছে।
সাহস২৪ ডটকম-এর প্রকাশিত প্রচারিত কোনো সংবাদ তথ্য, ছবি, রেখাচিত্র, ভিডিও, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
মন্তব্যে প্রকাশিত মত মন্তব্যকারীর একান্তই নিজস্ব। সাহস২৪ ডটকম-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে এসব মন্তব্যের কোনো মিল নাও থাকতে পারে। মন্তব্যকারীর বক্তব্যের বিষয়বস্তু নিয়ে সাহস২৪ ডটকম-এর কর্তৃপক্ষ আইনগত বা অন্য কোনো দায় নেবে না।