- হোম
- >
- বায়োগ্রাফি
- >
- বিপ্লবী ভেলুপিল্লাই প্রভাকরণ
বিপ্লবী ভেলুপিল্লাই প্রভাকরণ
প্রভাকরণকে তাঁর সমর্থকরা 'সুর্যদেবতা' বলে উল্লেখ করলেও, বিরোধীরা কিন্তু নির্দয়' বলেই অভিহিত করতেন। একদিকে বীর যোদ্ধা হিসেবে নাম, অন্যদিকে ভয়ঙ্কর ক্ষমতাধর ব্যক্তি হিসেবে অপনাম - ইতিহাসের পাতায় ঠিক এভাবেই থেকে গেলেন তিনি।
আন্তর্জাতিক পুলিশ সংস্থা বা ইন্টারপোল প্রভাকরনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করার সময় বলেছিল, প্রভাকরণ এমন এক ব্যক্তি যিনি যে কোন মুহূর্তে ছদ্মবেশ ধারণ করতে সক্ষম এবং আধুনিক সমরাস্ত্র ও বিস্ফোরক ব্যবহারে অত্যন্ত পারদর্শী। এ কথা বলার মূল কারণ বোধ হয় এটাই যে, প্রভাকরণকে খুব কমই প্রকাশ্যে দেখা গেছে। অবশ্য নিহত এলটিটিই বিদ্রোহীদের স্মরণে প্রতি বছর নভেম্বর মাসে একটি বারের জন্য জন সমক্ষে আসতেন প্রভাকরণ। দিতেন ভাষণ। যেমন তিনি তাঁর সর্বশেষ ভাষণে বলেছিলেন, 'দখলদার সিংহলি বাহিনীকে আমাদের ভূমি থেকে উচ্ছেদ না করা পর্যন্ত সংগ্রাম চলবে'। আর মৃত্যুর আগ-মুহূর্ত পর্যন্ত সেই ব্যর্থ সংগ্রামই করে গেলেন প্রভাকরণ।
জন্ম ও ছোটবেলা
১৯৫৪ সালের ২৬-শে নভেম্বর জাফনা উপদ্বীপের উত্তরে অবস্থিত উপকূলীয় শহর ভেলভেত্তিয়াথুরাই-তে জন্মগ্রহণ করেন প্রভাকরণ। মা-বাবার চার সন্তানের মধ্যে তিনি ছিলেন সবচেয়ে ছোট। শোনা যায়, প্রভাকরণ ছোটবেলায় নাকি অত্যন্ত লাজুক প্রকৃতির ছিলেন। কিন্তু, বড় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বই-এর পোকা প্রভাকরণ তামিলদের প্রতি শ্রীলংকার সংখ্যাগুরু সিংহলি জনগোষ্ঠীর বৈষম্য দেখে ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন এবং প্রতিবাদ আন্দোলনে যোগ দেন। প্রভাকরণের কথায়, ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের দুই গুরুত্বপূর্ণ প্রবাদ পুরুষ সুভাষ চন্দ্র বসু এবং ভগত সিং তাঁকে প্রভাবত করেছিল। এছাড়া, আলেক্সান্ডার দ্য গ্রেট ও নেপোলিয়ানের জীবনও মুগ্ধ করেছিল প্রভাকরণকে।
লিবারেশন টাইগার্স অফ তামিল ইলাম
১৯৭৩ অথবা ১৯৭৪ সালে প্রভাকরণ 'তামিল নিউ টাইগারস' প্রতিষ্ঠা করেন। প্রথম দিকে এই সংগঠনটি তামিলদের প্রান্তিক অবস্থার প্রতিবাদকারী একটি সংগঠনের মতো কাজ করছিল। এক বছর পর যা লিবারেশন টাইগার্স অফ তামিলএলাম বা এলটিটিই নামে গড়ে ওঠে। ১৯৭৫ সালে প্রভাকরণের বিরুদ্ধে জাফনার মেয়রকে হত্যার অভিযোগ ওঠে। আর তারপরেই টাইগাররা ১০ হাজারেরও বেশি সদস্যদের দুর্ধর্ষ এক বাহিনীতে পরিণত হয়। পুরুষদের পাশাপাশি বহু নারী ও শিশুও যোগ দেয় প্রভাকরণের সঙ্গে। ফলত খুব শীঘ্রই অর্থ সংগ্রহের জন্য একটি আন্তর্জাতিক নেটওয়ার্ক গড়ে তুলতে সক্ষম হন প্রভাকরণ। গড়ে তোলেন লিবারেশন টাইগার্স অফ তামিল এলাম-এর নিজস্ব স্থল, নৌ ও বিমান বাহিনী। অর্থাৎ, প্রভাকরণের নেতৃত্বে তামিল টাইগাররা হয়ে ওঠে বিশ্বের সবচেয়ে সুশৃঙ্খল এবং দৃঢ় মনোবলসম্পন্ন গেরিলা বাহিনী।
রাজীব গান্ধী হত্যা
১৯৯১ সালে চেন্নাইয়ের কাছে আত্মঘাতী হামলা চালিয়ে ভারতের প্রধানমন্ত্রী রাজীব গান্ধীকে হত্যার জন্য প্রভাকরণকে দায়ী করা হয়। বলা হয়, ১৯৮০ দশকের মাঝামাঝিতে শ্রীলংকায় ভারতীয় শান্তিরক্ষী বাহিনী মোতায়েনের প্রতিশোধ নিতে রাজীবকে হত্যার নির্দেশ দিয়েছিলেন প্রভাকরণ। এরপর ভারতের একটি আদালত তাঁর বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে এবং সন্ত্রাসবাদ, খুন ও সংগঠিত-অপরাধের অভিযোগে ইন্টারপোলের 'ওয়ান্টেড' তালিকায় নাম উঠে প্রভাকরণের। কিন্তু, এতেও ক্ষান্ত হন না প্রভাকরণ। ১৯৯৩ সালে শ্রীলংকার প্রেসিডেন্ট রানাসিংহে প্রেমাদাসা, ১৯৯৬ সালে কলম্বোয় কেন্দ্রীয় ব্যাংকে আত্মঘাতী বোমা হামলা, ২০০৫ সালে পররাষ্ট্রমন্ত্রী লক্ষণ কাদির গামারসহ অসংখ্য মেয়র, পুলিশ ও সেনা কর্মকর্তাকে হত্যা করে এলটিটিই বাহিনী। আর এভাবে দেশের উত্তরাঞ্চলে তামিল বিদ্রোহীদের নিয়ন্ত্রিত একটি স্বতন্ত্র অঞ্চল গড়ে তুলতেও সক্ষম হন প্রভাকরণ।
সমস্যা সমাধানে আন্তর্জাতিক বিশ্ব
শ্রীলংকা সরকার যুদ্ধের পরিবর্তে কূটনৈতিক উপায়ে তামিল বিদ্রোহ সমস্যা সমাধানের উদ্যোগ নেয় এরপর। একবিংশ শতাব্দির গোড়ার দিকে দেশটিতে কিছুটা শান্তিও ফিরে আসে। ২০০৭ সালে নরওয়ের মধ্যস্থতায় শান্তি আলোচনা ভেঙ্গে গেলে, চূড়ান্তভাবে এলটিটিই বিদ্রোহ দমনের সিদ্ধান্ত নেয় কলম্বো সরকার। তারপর থেকে শ্রীলংকা সরকার উত্তর ও পূর্বাঞ্চলে সাঁড়াশি আক্রমণ শুরু করলে, একের পর এক এলাকা তামিল বিদ্রোহীদের হাতছাড়া হতে থাকে। ২০০৯ সালের গোড়ার দিকে টাইগারদের প্রশাসনিক রাজধানী কিলিনোচ্ছি হাতছাড়া হলে, শোচনীয় অবস্থায় পড়েন প্রভাকরণ। তবে গত কয়েক মাসে শ্রীলংকার সেনাবাহিনীর কাছে একের পর এক ভূখণ্ড হারাতে থাকে তামিল টাইগাররা। গুজব ছড়ায় যে প্রভাকরণ দেশ ছেড়ে পালিয়ে গেছেন।
যবনিকা পতন
শ্রীলঙ্কান সরকার এর সাথে এলটিটিই এর আলচনার মাধ্যমে সমস্যা সমাধান বার বার প্রভাকরণের স্বাধীন ভূখণ্ডের অনড় দাবীর কারনে ভেস্তে যাওয়ায় চূড়ান্তভাবে এলটিটিই বিদ্রোহ দমনের সিদ্ধান্ত নেয় কলম্বো সরকার। তারপর থেকে শ্রীলংকা সরকার উত্তর ও পূর্বাঞ্চলে সাঁড়াশি আক্রমণ শুরু করলে, একের পর এক এলাকা তামিল বিদ্রোহীদের হাতছাড়া হতে থাকে। ২০০৯ সালের গোড়ার দিকে টাইগারদের প্রশাসনিক রাজধানী কিলিনোচ্ছি হাতছাড়া হলে, শোচনীয় অবস্থায় পড়েন প্রভাকরণ।উত্তর-পূর্ব শ্রীলঙ্কার মুল্লাইতিভুর অদূরে ২০০৯ সালের মে মাসে শ্রীলঙ্কা সেনাবাহিনীর চূড়ান্ত পর্যায়ের অপারেশনে মারা যান ভেলুপিল্লাই প্রভাকরণ। তাঁর স্ত্রী মাথিবাদিনী, মেয়ে দ্বারকা, বড় ছেলে তথা এলটিটিই`র বিমান শাখার প্রধান চার্লস অ্যান্টনি এবং ছোট ছেলে, ১২ বছরের বালাচন্দ্রনও নিহত হন। বালাচন্দ্রনের গুলিতে ঝাঁঝরা দেহের ছবি এর আগে প্রকাশিত হয়েছে।বিপ্লবী ভেলুপিল্লাই প্রভাকরণ
প্রভাকরণের অন্যতম জীবনী লেখক এম.আর নারায়ন স্বামীর কথায়, সংগ্রাম করে মৃত্যুবরণকারী প্রভাকরণ তাঁর সমর্থকদের কাছে চীরদিন একজন কিংবদন্তি হয়েই থাকবেন।
সাহস২৪ ডটকম-এর প্রকাশিত প্রচারিত কোনো সংবাদ তথ্য, ছবি, রেখাচিত্র, ভিডিও, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
মন্তব্যে প্রকাশিত মত মন্তব্যকারীর একান্তই নিজস্ব। সাহস২৪ ডটকম-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে এসব মন্তব্যের কোনো মিল নাও থাকতে পারে। মন্তব্যকারীর বক্তব্যের বিষয়বস্তু নিয়ে সাহস২৪ ডটকম-এর কর্তৃপক্ষ আইনগত বা অন্য কোনো দায় নেবে না।