প্যারিস হামলার ঘটনায় সেদেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিশেষ অভিযানে স্ত্রীসহ প্যারিস হামলার প্রধান সন্দেহভাজন ও সমন্বয়কারী আব্দেলহামিদ আবেউদ নিহত হয়েছেন। দুইজন ফরাসী গোয়েন্দা সদস্যের বরাত দিয়ে ওয়াশিংটন পোস্ট বুধবার রাতে (বাংলাদেশ সময়) এ খবর প্রকাশ করেছে।

বুধবার স্থানীয় সময় ভোর সাড়ে ৪টার দিকে প্যারিস সিটির নিকটবর্তী সেন্ট ড্যানিস এলাকার একটি বাড়িতে অভিযান চালানোর সময় সন্ত্রাসীদের সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর গোলাগুলি হয়। একপর্যয়ে আব্দেলহামিদ আবেউদের স্ত্রী আত্মঘাতী বোমা হামলায় নিহত হন। আর পুলিশের গুলিতে নিহত হন আরেক সন্ত্রাসী। তাৎক্ষণিকভাবে নিহত ওই ব্যক্তির পরিচয় না দিতে পারলেও পরে ফ্রান্সের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নিশ্চিত হন নিহত ওই ব্যক্তিই প্রধান সন্দেহভাজন আব্দেলহামিদ আবেউদ।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিশেষ অভিযানের সময় সন্ত্রাসীদের গুলিতে একটি ডগস্কোয়াড কুকুরও নিহত হয় বলে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে খবর বেরিয়েছে।

ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিস ও এর আশপাশের সাতটি পৃথক স্থানে শুক্রবার (১৩ নভেম্বর) হামলা চালায় সন্ত্রাসীরা। এসব হামলায় নিহত হন ১২৯ জন। আহত আরও তিন শতাধিক। ইসলামিক স্টেট (আইএস) এই হামলার দায় স্বীকার করেছে।

ফ্রান্সের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এবং আন্তর্জাতিক গণণমাধ্যম সূত্রে জানা যায়, বুধবার ভোর সাড়ে ৪টার দিকে সেনাবাহিনী, সোয়াত ও পুলিশসহ অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সমন্বয়ে যৌথবাহিনী প্যারিস সিটির নিকটর্তী সেন্ট ড্যানিস এলাকার একটি বাড়ি ঘিরে ফেলে। উদ্দেশ্য সন্ত্রাসী হামলার প্রধান সন্দেহভাজন সমন্বয়কারী আব্দেলহামিদ আবেউদকে গ্রেপ্তার করা। প্যারিসের যে ৭টি স্থানে সন্ত্রাসী হামলা হয়েছিল তার মধ্যে অন্যতম ছিল সেন্ট-ড্যানিস এলাকার স্তেদ দ্য ফ্রান্স স্টেডিয়াম গেট। যে স্টেডিয়ামে বসে ওইদিন রাতে পূ্র্ব নির্ধারিত ফ্রান্স-জার্মান প্রীতি ফুটবল ম্যাচ উপভোগ করছিলেন ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ফ্রাঁসোয়া ওলাঁদ। মূলত প্রধান সন্দেহভাজন সন্ত্রাসীসহ তার সঙ্গীয়রা সেন্ট ড্যানিসের রুই করভিউ রোডের একটি বাড়িতে অবস্থান করছেন, এমন তথ্যের ভিত্তিতেই অভিযান চালায় ফ্রান্সের আইনশৃ্ঙ্খলা বাহিনী।

সন্ত্রাসীদের অবস্থান ও গতিবিধি জানার জন্য প্রথমে সাত বছর বয়সী একটি বিশেষ প্রশিক্ষিত ডগস্কোয়াড কুকুর পাঠানো হয় ওই বাড়িতে। কুকুরটি বাড়ির সামনে যাওয়ার পরপরই পুরো ঘটনা টের পেয়ে যায় সন্ত্রাসীরা। বিশেষ প্রশিক্ষিত ওই কুকুরটিকে গুলি করে হত্যা করে তারা। এরপরই সন্ত্রাসীদের গ্রেফতারে ওই বাড়িতে অভিযান শুরু করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। বাড়িতে ঢুকতেই বাঁধার সম্মুখীন হন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। সন্ত্রাসীরা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের উপর সরাসরি গুলি চালাতে থাকে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরাও পাল্টা গুলি চালালে এক সন্ত্রাসী নিহত হয়। একইসঙ্গে এক নারী সন্ত্রাসী আত্মঘাতী বোমা হামলায় নিহত হন। এ ঘটনায় আহত হন পুলিশের কয়েকজন সদস্য।

আত্মঘাতী বোমা হামলায় নিহত ওই নারী শুক্রবারের সন্ত্রাসী হামলার প্রধান সন্দেহভাজনদের সমন্বয়কারী আব্দেলহামিদ আবেউদের স্ত্রী বলে বুধবার সকালেই স্থানীয় গণমাধ্যমসহ আন্তির্জাতিক গণমাধ্যমে খবর বের হয়। তবে পুলিশের গুলিতে নিহত সন্ত্রাসী প্রধান সন্দেভাজন আব্দেলহামিদ আবেউদ কিনা তা নিশ্চিত করে বলতে পারেনি তখন ফরাসী পুলিশ।

আত্মঘাতি হামলায় নিহত আব্দেলহামিদ আবাউদের স্ত্রী শুক্রবার রাতে প্যারিসের বাটাক্লঁ কনসার্ট হলে একে-৪৭ হাতে নিয়ে অন্যান্য হামলাকারীদের সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন বলে জানা যায়। বুধবারের পুলিশী অভিযানের সময়ও ওই নারী একে ৪৭ উঁচিয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দিকে গুলি ছুঁড়েছেন। বুধবারের বিশেষ অভিযানে গ্রেফতার হয়েছে আরও সাতজন। এর আগে আরও ২৩জন সন্দেহভাজনকে গ্রেফতার করে ফরাসী পুলিশ।

জানা যায়, ফ্রান্সের সেন্ট-ড্যানিসের স্তেদ দ্য ফ্রান্স স্টেডিয়াম এলাকাটি মূলত আরবী ভাষাভাষী হিসেবে পরিচিত। সেখানে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক বাংলাদেশীও বসবাস করেন। বিশেষ অভিযানের পর থেকে নতুন করে ওই এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। ফরাসী প্রশাসনের পক্ষ থেকে ওই এলাকার রাস্তাঘাট বন্ধ করে দেওযা হয়। এমনকি কাউকে বাসা থেকে বের না হতে এবং জানালা দিয়ে মাথা বের না করার জন্যও বলা হয় ওই এলাকার বাসীন্দাদের। বন্ধ করে দেওয়া হয় বাস ও রেল চলাচল।