কোনো ষড়যন্ত্রই দেশের উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত করতে পারবে না: প্রধানমন্ত্রী
নেদারল্যান্ডসে তিন দিনের সরকারি সফরের শেষদিন বৃহস্পতিবার রাতে দ্য হেগের কুরহাউস হোটেলে প্রবাসী বাংলাদেশিদের দেওয়া এক সংবর্ধনা সভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একথা বলেন। খবর বাসস
তিনি বলেন, তার সরকারের সঠিক নির্দেশনা ও পরামর্শ, জনগণের কাজের স্পৃহা এবং প্রবাসীদের অব্যাহত সমর্থন আগামী দিনে বাংলাদেশকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাবে এবং ২০২১ সালের আগেই বাংলাদেশ ক্ষুধা ও দারিদ্র্য দূর করে একটি মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হবে। বাংলাদেশ সকল ক্ষেত্রে অগ্রগতির সঙ্গে সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে এবং বাংলাদেশকে এখন আর কেউ উপেক্ষা করতে পারছে না। অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি ও সামাজিক উন্নয়ন লাভের কাঙ্খিত লক্ষ্য অর্জনের পথ থেকে কোন ষড়যন্ত্রই দেশকে বিচ্যুত করতে পারবে না।
শেখ হাসিনা বলেন, স্বাধীনতা লাভের পর থেকেই সামরিক স্বৈরশাসকরা এবং মুক্তিযুদ্ধ বিরোধী শক্তি বাংলাদেশে ষড়যন্ত্র করে চলেছে। তা সত্বেও বাংলাদেশের জনগণ যখনই সুযোগ পেয়েছে, তখনই তারা সামনে এগিয়ে যাওয়ার এবং মাথা উঁচু করে দাঁড়ানোর চেষ্টা করেছে। সকল ষড়যন্ত্র কাটিয়ে উঠে বাংলাদেশ ২০২১ সালের মধ্যে একটি মধ্যম আয়ের দেশ এবং ২০৪১ সালের মধ্যে একটি উন্নত দেশে পরিণত হবে।
দেশের উন্নয়নে প্রবাসীদের ভূমিকার কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশের সকল রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক সাফল্য অর্জনে তারা অবদান রেখেছেন। অর্থনৈতিক উন্নয়নেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছেন তারা। এবং তারা চলতি বছর প্রায় ২৭.২ বিলিয়ন ডলারের বেশি রেমিটেন্স পাঠিয়েছেন।
শেখ হাসিনা উল্লেখ করেন, আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলায় বঙ্গবন্ধুর পক্ষে লড়াই করার জন্য প্রবাসীরা সে সময় স্যার টমাস উইলিয়ামকে পাঠিয়েছিলেন। তারা মুক্তিযুদ্ধকালে আন্তর্জাতিক জনমত গড়ে তুলেছিলেন। বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করার পর সুইডেন ও ব্রিটেনে প্রতিবাদ জানাতে নেমে এসেছিলেন। তারা জাতির পিতার হত্যাকাণ্ড তদন্ত করার জন্য টমাস উইলিয়ামকে পাঠানোর উদ্যোগ নিয়েছিলেন। কিন্তু জিয়াউর রহমান তাকে বাংলাদেশে আসতে দেয়নি।
২০০৭ সালের ১১ জানুয়ারির পর বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতির কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, তত্তাবধায়ক সরকার লন্ডন থেকে তাকে দেশে ফিরে যেতে দিতে চায়নি। তখন প্রবাসীরা তার সমর্থনে এগিয়ে এসেছিলেন এবং তারা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে তাঁর দেশে ফেরার পথে সঙ্গী হয়েছিলেন।
নেদারল্যান্ডসকে বাংলাদেশের ঘনিষ্ঠ বন্ধু হিসেবে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এ দেশটি সব সময় বাংলাদেশের পাশে দাঁড়িয়েছে। তাই, তিনি এই সম্পর্ককে জোরদার করার লক্ষ্যে নেদারল্যান্ডসে প্রথম এই সরকারি সফর করেছেন।
শেখ হাসিনা বলেন, বঙ্গবন্ধু বেঁচে থাকলে বাংলাদেশ অনেক আগেই একটি উন্নত দেশে পরিণত হতো। বঙ্গবন্ধু তার সাড়ে তিন বছরের মেয়াদকালে একটি স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্রের ভিত্তি সুদৃঢ় করার লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় প্রায় সব কাজ সম্পন্ন করেছিলেন। বঙ্গবন্ধুকে নৃশংসভাবে হত্যা করার পর বাংলাদেশ কোন ক্ষেত্রে অগ্রগতি লাভ করতে পারেনি। বরং হত্যা ও ক্যুর রাজনীতি দীর্ঘায়িত হয়েছে এবং গণতন্ত্র, স্বাধীনতা ও আইনের শাসন বিস্মৃত হয়েছিল।
তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করার পর জিয়াউর রহমান অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করেন। তিনি হত্যাকারী ও যুদ্ধাপরাধীদেরকে পুনর্বাসিত করেন। তিনি ১১ হাজার যুদ্ধাপরাধীকে জেল থেকে মুক্তি দেন এবং বিদেশে নিয়োগ দিয়ে বঙ্গবন্ধুর খুনীদের পুরস্কৃত করেন। বাংলাদেশের জনগণ ২১ বছর ধরে কষ্ট করেছেন এবং জনগণের ম্যান্ডেট নিয়ে আওয়ামী সরকার ক্ষমতায় আসার পর ১৯৯৬ সালে দেশের জনগণ উন্নয়নের প্রকৃত স্বাদ উপলব্ধি করতে পেরেছে। কিন্তু ৫ বছরের বেশি তাদের এ সুখ স্থায়ী হয়নি। কারণ ২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াত জোট ক্ষমতায় ফিরে এসে ২০০৬ সাল পর্যন্ত তাদের নির্যাতন ও ভীতি প্রদর্শন করে গেছে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের ইতিহাসে ২০০৮ সালের নির্বাচন হচ্ছে একটি যুগান্তকারী পরিবর্তন। এ নির্বাচনে দেশের জনগণ সরকার গঠনের জন্য আওয়ামী লীগকে আবার ম্যান্ডেট দিয়েছিল। এই পরিবর্তনের মাধ্যমে দেশে প্রতিটি খাতে উন্নয়নের ক্ষেত্রে গতি ফিরে আসে।
শেখ হাসিনা বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার উন্নয়ন কর্মসূচি এগিয়ে নিয়ে যাওয়া এবং বাংলাদেশকে গড়ে তোলার লক্ষ্যে বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ও কর্মসূচিগুলোকে সামনের সারিতে নিয়ে আসে। সরকার একসাথে সমৃদ্ধি লাভের লক্ষ্যে প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক জোরদারের জন্য উদ্যোগ গ্রহণ করে।
বিভিন্ন খাতে বাংলাদেশের অগ্রগতি লাভের বিবরণ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিশেষ করে নারীদের শিক্ষা, স্বাস্থ্য, খাদ্য নিরাপত্তা ও পুষ্টির ওপর সরকার সর্বাধিক গুরুত্ব দিচ্ছে। ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে সরকারের রূপকল্প বাস্তবায়নে তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহার বৃদ্ধির ওপর সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।
এ প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা সরকারি অফিসগুলোর জন্য কম্পিউটার সংগ্রহ করার বিষয়ে একটি ডাচ কোম্পানির সঙ্গে সম্পদিত একটি চুক্তি বাতিল করে দেওয়ার জন্য বিএনপির সমালোচনা করেন। ১৯৯৬-২০০১ সালের মেয়াদে বাংলাদেশ সরকার ডাচ কম্পিউটার নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান টিউলিপ কম্পিউটার্স এনভির কাছ থেকে কম্পিউটার ক্রয় করার জন্য চুক্তি করেছিল। বর্তমানে ব্রিটিশ পার্লামেন্টের সদস্য শেখ হাসিনার বোনের মেয়ে টিউলিপ সিদ্দিকীর নামের সঙ্গে মিল থাকায় বিএনপি সরকার ২০০১ সালে ক্ষমতায় আসার পর এই চুক্তিটি বাতিল করে দিয়েছিল এই ধারণার ভিত্তিতে যে, টিউলিপ কম্পিউটার্স কোম্পানির মালিক টিউলিপ সিদ্দিকী। বিএনপি সরকারের এই হটকারী সিদ্ধান্তের কারণে তখন চুক্তি বাতিল করায় বাংলাদেশ সরকারের ৩২ কোটি টাকা জরিমানা দিতে হয়েছিল। দুর্নীতি ও অসৎ লোকদের জোট বিএনপি সবসময় অন্যদেরকেও একইভাবে বিচার করে।
বিগত বছরগুলোতে বিএনপি-জামায়াত জোটের ধ্বংসাত্মক রাজনীতির কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, খালেদা জিয়া আবার ষড়যন্ত্রের রাজনীতিতে লিপ্ত হয়েছেন এবং তার প্রতিটি পদক্ষেপের লক্ষ্য হচ্ছে দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করা। সাম্প্রতিক হত্যাকাণ্ড, নৈরাজ্য ও অন্তর্ঘাতমূলক কর্মকাণ্ডের পেছনেও তারা রয়েছেন।
শেখ হাসিনা বাংলাদেশে বিনিয়োগ করার বিদেশি উদ্যোক্তাদের উৎসাহ দিতে এবং বিভিন্ন খাতে বিনিয়োগ নিয়ে এগিয়ে আসার জন্য প্রবাসী বাংলাদেশিদের প্রতি আহ্বান জানান। তিনি দেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করার জন্যও তাদের প্রতি আহ্বান জানান।
অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য দেন পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নজরুল ইসলাম বীর প্রতীক, অল ইউরোপিয়ান আওয়ামী লীগের সভাপতি অনীল দাশগুপ্ত, যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের সভাপতি সুলতান শরীফ, এবং হল্যান্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি মাহিদ ফারুক।
সাহস২৪ ডটকম-এর প্রকাশিত প্রচারিত কোনো সংবাদ তথ্য, ছবি, রেখাচিত্র, ভিডিও, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
মন্তব্যে প্রকাশিত মত মন্তব্যকারীর একান্তই নিজস্ব। সাহস২৪ ডটকম-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে এসব মন্তব্যের কোনো মিল নাও থাকতে পারে। মন্তব্যকারীর বক্তব্যের বিষয়বস্তু নিয়ে সাহস২৪ ডটকম-এর কর্তৃপক্ষ আইনগত বা অন্য কোনো দায় নেবে না।