রামগঞ্জে মানুষের আশার আলোতে হতাশা মিশিয়েছেন ঠিকাদারগণ
রামগঞ্জ পাট বাজার, নারিকেল বাজার, কাঠবাজার ও মৌলভি বাজার হয়ে সোনাপুর বাজার চলাচলের গুরুত্বপূর্ণ সড়কটিতে পুনঃসংস্কারের নামে ঠিকাদার কর্তৃক নিন্মমানের কাজ করায় উক্ত সড়কের দু’পাশের ব্যবসায়ীরাসহ সাধারণ মানুষ হতাশা ব্যক্ত করেছেন।
দীর্ঘদিন যাবত উক্ত সড়কে চলাচলকারী সাধারণ মানুষ ও ব্যবসায়ীদের জোর দাবির পরও প্রায় ১০ বছর পার হলেও স্থানীয় কাউন্সিলর, পৌরসভার মেয়র, উপজেলা চেয়ারম্যান ও স্বয়ং সাংসদও কোন ব্যবস্থা গ্রহণ না করায় সড়কটিতে দেখা দেয় চরম খানাখন্দ। তারপর ও স্থানীয় লোকজন আশার আলো দেখেছেন, কবে নাগাদ রাস্তাটি পুনঃসংস্কার হবে।
অবশেষে রামগঞ্জ পৌরসভার মেয়রের ঐকান্তিক প্রচেষ্ঠায় গত মাসখানেক পূর্বে রামগঞ্জ পৌরসভা টেন্ডার আহবান করলে তিনটি ভাগে বিভক্ত হয়ে উক্ত সড়কটির কাজ পায় আওয়ামী লীগ নেতা দেলোয়ার হোসেন (এসপি দেলু), উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক রফিকুল্লাহ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা ফেয়ার আলী। সাধারণ মানুষের দীর্ঘদিনের দূর্ভোগ লাঘব হবে আশা প্রকাশ করেন অনেক ব্যবসায়ী। কিন্তু উক্ত রাস্তায় চলাচলকারী লোকজন ও ব্যবসায়ীরা রাস্তা সংস্কারে ব্যবহৃত ইট, বালু, পাথর ও নিন্মমানের কাজ দেখে হতাশা প্রকাশ করেন। কাজের মান নিয়ে প্রশ্ন তুলে জানান, কতদিন টিকবে এ সড়কটি?
সূত্রে জানায়, প্রায় ৮১০ ফুট রাস্তাটি সংস্কার করতে প্রথম অংশ সাড়ে ৯ লক্ষ, দ্বিতীয় অংশ সাড়ে ১৪ লক্ষ ও তৃতীয় অংশ সাড়ে ১৫ লক্ষ, প্রায় ৩৯ লক্ষ টাকা বরাদ্ধ নিয়ে কাজ শুরু করেন, রফিকুল্লাহ ও ফেয়ার আলী। রাস্তাটির কিছু অংশ খোড়াখুড়ির পর বাইপাস অংশের (সাতারপাড়া চৌরাস্তা পর্যন্ত) কাজ দেখতে গেলে হামলার শিকার হন রফিকুল্লাহ। এসময় নিন্মমানের কাজের অভিযোগ তোলা হলে রফিকুল্লাহর ছেলে প্রতিবাদ করলে তাকে শারিরীকভাবে লাঞ্চিত করে স্থানীয় লোকজন।
দুই দিন কাজ বন্ধ থাকার পর আবারো চলতে থাকে সংস্কার কাজ। কিন্তু রাস্তায় ফেলা বিটুমিন ও পাথর দেখে সাধারণ মানুষের মনে প্রশ্ন জাগে এ যেন মেকআপের কাজ চলছে। এখানে ওখানে নামকাওয়াস্তে বিটুমিন দিয়ে ঢালাই করায় স্থানীয় লোকজনদের এমন বক্তব্য।
এদিকে নারিকেল বাজার হয়ে কাঠবাজারের ২য় অংশের কাজ শুরু করেন ঠিকাদার ফেয়ার আলী। তিনি কাজ শুরু করে ব্যবসায়ীদের দোকানের সিড়ি ভেঙ্গে সংস্কার শুরু করেন। কিন্তু ঠিকাদারের লোকজন রাস্তাগুলোর গর্তগুলো পূরণ করলেও রাস্তা খুড়ে পাথর না পেলার কারণে সাধারণ মানুষের অভিযোগ রাস্তাটির স্থায়িত্ব কয়েকমাস হবে না। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ রাস্তায় কত ইঞ্চি ঢালাই করবেন, সে ব্যপারেও কোন জবাব দিতে রাজি হননি।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায় পিচঢালাইয়ের কাজ চলছে দুর্বার গতিতে। হাফ ইঞ্চি ঢালাইও দেওয়া হয়নি রাস্তাটিতে। উপরুন্ত ইসলামী ব্যাংক লাগোয়া রাস্তার একটি অংশে বিদ্যুতের খুটিও রয়েছে সেখানে। সেটা সরানোর জন্য কোন ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। ফলে রাতের আধারে দুর্ঘটনায় পতিত হয়ে প্রাণহানীর আশংকাও রয়েছে।
একই সময়ে রাস্তাটির তৃতীয় অংশের সংস্কার কাজ শুরু করেন ঠিকাদার দেলোয়ার হোসেনের লোকজন।
কাজের শুরুতেই প্রতিবাদ জানান, স্থানীয় ব্যবসায়ীরা। এক প্রকার খোড়াখুড়ি না করে রাস্তাটিতে পূর্বে ফেলা স্থানীয় লোকজনদের ইট বালু সুড়কি ট্রলিতে ভরে নিয়ে যান। পুরো রাস্তার কোথাও ড্রেনেজ ব্যবস্থার পরিকল্পনা না করে তিনি মাটি ও নিন্মমানের ইট দিয়ে গর্তগুলো ভরাট করেন। কোথাও কোথাও তাও করা হয়নি।
বর্তমানে রাস্তাটির ঐ অংশের সংস্কার কাজ বন্ধ রয়েছে।
ঠিকাদার রফিকুল্লাহকে কাজের ব্যপারে প্রশ্ন করা হলে তিনি জানান, রাস্তাটি পুনঃসংস্কার নয়, যেখানে গর্ত সেগুলো ভরাট করার কথা। তাছাড়া চওড়ায় ১৬ ফুট রাস্তার সংস্কারের কথা থাকলেও আমি ১৮ থেকে ২১ ফুট চওড়া রাস্তায় ঢালাই দিয়েছি।
অন্য ঠিকাদার ফেয়ার আলী ও একই কথা জানান।
দেলোয়ার হোসেন নামে ঠিকাদারকে বার বার কল করেও পাওয়া যায়নি।
সহকারী প্রকৌশলী দেলোয়ার হোসেনকে মোবাইলে বার বার কল করে অবশেষে পাওয়া গেলে তিনি জানান, কোথাও ১ ইঞ্চি কোথাও ৭ মিলি ঢালাইয়ের কথা রয়েছে। তাছাড়া আপনাকে ফোনে বলবো এক রকম লিখে দিবেন আরেক রকম। আপনার দরকার হলে এসে দেখে যান। এ কথা বলে তিনি লাইন কেটে দেন।
রামগঞ্জ পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী মোতাহার হোসেন জানান, রাস্তা কতদিন টিকবে সেটা আমি কিভাবে বলবো। ট্রলি চলাচল ও পানি আটকে গেলেও তো সমস্যা হবে।
রামগঞ্জ পৌরসভার মেয়র বেলাল আহম্মেদ জানান, আপনি প্রকৌশলী থেকে সিডিউল নিন। প্রকৌশলীকে বলেন, রাস্তা সংস্কার কাজে কোন অনিয়ম হলে ব্যবস্থা নিন। কোথায় কত ইঞ্চি ঢালাইয়ের কথা রয়েছে সেভাবে কাজ করুন। আর রাস্তাটির সংস্কার সাধারণ মানুষের দীর্ঘদিনের দাবির ফল। এখানে কোন অনিয়ম বরদাস্ত করা হবে না। কোন অনিয়ম করলে উক্ত ঠিকাদারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সিডিউল অনুযায়ী কাজও বুঝে নেওয়া হবে। কোন ফাকফোকর চলবে না।
সাহস২৪ ডটকম-এর প্রকাশিত প্রচারিত কোনো সংবাদ তথ্য, ছবি, রেখাচিত্র, ভিডিও, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
মন্তব্যে প্রকাশিত মত মন্তব্যকারীর একান্তই নিজস্ব। সাহস২৪ ডটকম-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে এসব মন্তব্যের কোনো মিল নাও থাকতে পারে। মন্তব্যকারীর বক্তব্যের বিষয়বস্তু নিয়ে সাহস২৪ ডটকম-এর কর্তৃপক্ষ আইনগত বা অন্য কোনো দায় নেবে না।