চিরচেনা গাড়ির হর্নের শব্দ, যানজট আর জনজটের নগরী ঢাকা এখন অনেকটাই ফাঁকা। নেই কোন কালো ধোয়া, রিকশার বেলের শব্দ। হালকা বৃষ্টিতে পথের ধুলা কমেছে খানিকটা। বলা যায় ঢাকা এখন ধুলা, ধোয়া আর শব্দমুক্ত শান্তির শহর। পথে নেই চিরচেনা দুর্ভোগ, নেই পথচারীদের ভিড়ও। ঢাকার এই ভিন্নরূপ উপভোগ্য হয়ে ওঠেছে ঢাকাবাসীর কাছে।

আজ দুপুরের দিকে নিউমার্কেট এলাকায় দেখা যায় রাস্তা একদম ফাঁকা। রাজধানীর নিউমার্কেট মোড়ে মিরপুরগামী বিকল্প বাস সার্ভিসের একজন হেলপার যাত্রীদের এভা্বেই ডাকছিলেন, ‘এই মিরপুর আসেন মিরপুর; সিট খালি, বাস খালি, রাস্তা খালি; উঠবেন আর যাইবেন’। 

রাস্তার পাশের পরিচিত এক চা দোকানদার ওই হেলপারকে ডাকছিলেন চা খেয়ে যাওয়ার জন্য। হেলপারের উত্তর- ‘আইতাছি, আজকা রাস্তা ক্লিয়ার (খালি)। আরেকটা ট্রিপ মাইরা আহি। এই যামু আর আসমু।’

নয়ন মিয়া নামের এই হেলপারের কাছে জানা গেল অন্যদিন মিরপুর থেকে আজিমপুরে ছয় থেকে সাতটি ট্রিপ মারতে (যাওয়া-আসা) পারেন। আজকে ডাবল ট্রিপ হবে বলে আশা তার।

অবশ্য ট্রিপ বেশি হলেও লাভের পাল্লা খুব ভারী হয় না জানিয়ে নয়ন মিয়া বলেন, ‘যাত্রী তো কম। তাই ছুটির দিনে ট্রিপ বেশি হলেও আয় প্রায় সমান। মাঝে-মধ্যে বেশিও হয়।’

টানা তিন দিনের ছুটিতে বৃহস্পতিবারের ঢাকা অনেকটাই ফাঁকা। হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের দুর্গাপূজা এবং মুসলিমদের আশুরার সঙ্গে সাপ্তাহিক ছুটি। সব মিলিয়ে বৃহস্পতিবার থেকে শনিবার তিন দিন ছুটি পেয়েছেন সকল সরকারি এবং অনেক বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মজীবীরা।

এ কারণে সপ্তাহের শেষ দিনের পরিচিত দৃশ্যের বিপরীত চিত্র দেখা গেছে রাজধানীর বিভিন্ন রাস্তায়। স্বাভাবিক দিনের তুলনায় বাসের সংখ্যা কম। ব্যক্তিগত গাড়ির সংখ্যা আরও কম। তবে, রিকশা ও সিএনজিচালিত অটোরকিশার সংখ্যা তুলনামূলক বেশি।

অন্যদিন যেসব রাস্তায় রিকশা চলাচলে নিষেধাজ্ঞা থাকে, আজ সেটিও নেই। হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা বাহারি পোশাক গায়ে জড়িয়ে বিভিন্ন পূজা মণ্ডপে যাচ্ছেন রিকশায় চড়ে। যানজট না থাকায় এক মণ্ডপ থেকে আরেক মণ্ডপে খুব সহজ ও সাচ্ছন্দেই যেতে পারছেন তারা।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জগন্নাথ হলের সামনে কথা হয় অবনি রায়ের সঙ্গে। ঢাকেশ্বরী এলাকা থেকে পরিবার নিয়ে জগন্নাথ হলের পূজা দেখতে এসেছিলেন তিনি। এখান থেকে যাচ্ছেন বনানীর উদ্দেশ্যে।

‘অন্যদিন যানজটের ভয়ে দূরের মণ্ডপে যাওয়া হয়নি। আজকে রাস্তাঘাট খালি, তাই বনানীর মণ্ডপে যাচ্ছি’, বলেন অবনি রায়।

দুপুর ১২ টার আগেই প্রায় পাঁচশ টাকা পকেটে ভরেছেন রিকশাওয়ালা হাকিম শেখ। শাহবাগ মোড়ে আয়েসি ভঙ্গিতে চা পানকালে এই রিকশাচালক বলেন, ‘বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই পূজা দেখতে বের হয়েছেন অনেকে। সব রাস্তায় রিকশা চালাতে পারছি। এই কারণে আয় একটু বেশি হচ্ছে।’