‘খাদ্য অধিকার আইন’ প্রণয়নের দাবি
সম্প্রতি বিশ্ব নেতৃবৃন্দ টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য (এসডিজি) গ্রহণের মধ্য দিয়ে ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত বিশ্ব গড়ার যে প্রত্যয় ঘোষণা করেছে তার মাধ্যমে পৃথিবীর সকল মানুষের ‘খাদ্য অধিকার’কে স্বীকৃতি প্রদান করা হয়েছে।
সরকারি ঘোষণা অনুয়ায়ী, এসডিজি অর্জনে বাংলাদেশের ৭ম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে, যা এখন অনুমোদনের চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। সমন্বিত প্রবৃদ্ধির মাধ্যমে দারিদ্রতা দূরীকরণ এর অন্যতম উদ্দেশ্য।
এছাড়াও রয়েছে সাংবিধানিক নির্দেশনা, জাতীয় খাদ্য নীতিসহ সংশ্লিষ্ট অন্যান্য নীতি ও আইন। এসব নীতি ও আইন যথাযথ বাস্তবায়নের মাধ্যমেই কাক্সিক্ষত লক্ষ্য অর্জন করা সম্ভব। অর্থাৎ রাষ্ট্র হিসেবে পর্যাপ্ত খাদ্যের যোগানের মাধ্যমে ক্ষুধা ও দারিদ্র্যকে মোকাবিলার দায়বদ্ধতা জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবেই বাংলাদেশের রয়েছে। সে প্রেক্ষিতে সকল মানুষের জন্য পর্যাপ্ত খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণের নিশ্চয়তা প্রদান করে ‘খাদ্য অধিকার আইন’ প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করা আজ জরুরি হয়ে পড়েছে।
১৯ অক্টোবর ২০১৫ ঢাকার সিরডাপ মিলনায়তনে খাদ্য অধিকার বাংলাদেশ নেটওয়ার্কের পক্ষ থেকে আয়োজিত টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য (ঝউএ) এবং ৭ম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা: খাদ্য অধিকার প্রেক্ষিত শীর্ষক এক ‘মতবিনিময় সভা’য় উপস্থিত বক্তারা এসব বলেন।
‘মতবিনিময় সভা’য় সম্মানীয় অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন অধ্যাপক ড. এম এম আকাশ, অর্থনীতি বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, ড. নাজনীন আহমেদ, সিনিয়র রিসার্চ ফেলো, বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান, এ কে এম মামুনুর রশীদ, জলবায়ু পরিবর্তন বিশেষজ্ঞ, ইউএনডিপি, সুজিত চৌধুরী, উপদেষ্টা, উপকূলীয় অঞ্চলের জীবিকায়ন অভিযোজন প্রকল্প, জিআইজেড প্রমুখ। এতে সভাপতিত্ব করেন ড. কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ, চেয়ারম্যান, খাদ্য অধিকার বাংলাদেশ ও পিকেএসএফ এবং প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন মহসিন আলী, সম্পাদক, খাদ্য অধিকার বাংলাদেশ ও নির্বাহী পরিচালক, ওয়েভ ফাউন্ডেশন। এছাড়া আয়োজকদের পক্ষে বক্তব্য রাখেন রঞ্জন কর্মকার (স্টেপস্ টুয়ার্ডস ডেভেলপমেন্ট), ড. নিলুফার বানু (বিইউপি), আব্দুর রশিদ (এনজিও ফোরাম), মাকসুদুর রহমান (ওয়ার্ল্ডভিশন বাংলাদেশ), আব্দুর রহমান (ড্যানচার্চ বাংলাদেশ), তালেয়া রেহমান (ডেমক্রেসিওয়াচ), রেজভিনা পারভিন (ব্র্যাক), মঞ্জু রাণী প্রামাণিক, ওমর ফারুখ প্রমুখ।
প্রবন্ধ উপস্থাপনকালে মহসিন আলী বলেন, সকল উন্নয়নশীল দেশের প্রধান সমস্যা ক্ষুধা ও দারিদ্র্য। শুধুমাত্র খাদ্য চাহিদা পূরণ হলেই দারিদ্র্য দূর হয় না, দারিদ্র্যের বহুমাত্রিক দিক আছে। এমডিজির বিভিন্ন দিক বিশেষভাবে দারিদ্র্যের হার হ্রাস বাংলাদেশের অন্যতম বড় সাফল্য হিসেবে সারা বিশ্বে সমাদৃত। এর ধারাবাহিকতায় ‘টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য-২০৩০’ গৃহীত হয়েছে। যেখানে ‘ক্ষুধামুক্তি’ এবং ‘দারিদ্র্য নির্মূল’-এর অঙ্গীকারের কথা বলা হয়েছে। দেশে এখনো ৩ কোটি ৮৫ লাখ মানুষ দরিদ্র, যার মধ্যে ১ কোটি ৫৭ লাখ মানুষ অতি দরিদ্র যা মোট জনগোষ্ঠীর ১০.৬৪ শতাংশ। অর্থাৎ দারিদ্র্যের হার কমলেও দরিদ্র মানুষের সংখ্যা একইরকম, প্রায় ৪ কোটি। এ প্রেক্ষাপটে এসডিজি-এর লক্ষ্য অর্জনে বিশেষভাবে ক্ষুধা ও দারিদ্র দূরীকরণে খসড়া ৭ম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা বর্তমান বিধানসহ গৃহীত হলে যথাযথ ভূমিকা পালন করবে কিনা তা পর্যালোচনার দাবি রাখে। তিনি খাদ্য অধিকার আইন প্রণয়নের দাবিতে সকল শ্রেণী-পেশার মানুষ, নাগরিক সমাজের সকল সংগঠন ও নেটওয়ার্ক এবং গণমাধ্যমসহ সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি সোচ্চার হওয়ার আহ্বান জানান।
অধ্যাপক ড. এম এম আকাশ বলেন, ৭ম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনায় খাদ্য নিরাপত্তার ক্ষেত্রে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে খাদ্যের পর্যাপ্ততা ও ব্যবহারের উপরে। যদিও দরিদ্র মানুষের জন্য বেশি প্রয়োজন খাদ্যে তার অভিগম্যতা ও খাদ্যের ক্ষেত্রে স্থায়িত্বশীলতা। এক্ষেত্রে বাজার ব্যবস্থার মধ্যে থেকেও রাষ্ট্রের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। ভারত এ লক্ষ্যে একটি আইন করেছে ইতিমধ্যে। বাংলাদেশেও আইন প্রণয়নের দাবির প্রতি সমর্থন জানিয়ে তিনি ‘খাদ্য অধিকার’ বিষয়ক আইনের একটি খসড়া প্রস্তুতের জন্য আন্দোলনকারী আয়োজক নেটওয়ার্কের প্রতি আহ্বান জানান। পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট সকল পক্ষকে সংগঠিত হওয়ার আহ্বান জানান।
ড. নাজনীন আহমেদ বলেন, খাদ্য মৌলিক চাহিদা সেটা আমরা সবাই জানি এবং আমাদের নানা পদক্ষেপও রয়েছে এ লক্ষ্যে। এখন শুধু খাদ্য নিশ্চিত করাটাই প্রধান বিষয় নয়, পুষ্টি ইস্যুটিও সমান গুরুত্বপূর্ণ। এ প্রেক্ষিতে পুষ্টির ক্ষেত্রে জেন্ডার বৈষম্য এষনও অনেক প্রকট। সার্বিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে মানুষের যে উৎপাদনশীলতার উৎস তাও পুষ্টিকর খাদ্যের সঙ্গে যুক্ত। বিশেষ বিশেষ পরিস্থিতিতে দরিদ্র মানুষের খাদ্যে অভিগম্যতা, মজুতদারি, খাদ্য অপচয় ইত্যাদির ক্ষেত্রেও আমাদের সচেতনতা ও নজরদারি জরুরি। খাদ্য অধিকার আইন প্রণয়নের ক্ষেত্রে এ বিষয়গুলো বিবেচনায় নিতে হবে।
এ কে এম মামুনুর রশীদ বলেন, শুধুমাত্র এসডিজি বা ৭ম পঞ্চবার্ষিকীর আলোকেই ‘খাদ্য অধিকার’ ইস্যুটিকে ব্যাখ্যা করলে বিষয়টি খুব সীমাবদ্ধ হয়ে যাবে। একটিপরও আইন প্রণয়ন করে তা কার্যকর করার পর্যায়ে আমরা যথেষ্ট প্রস্তুত কি-না তাও পর্যালোচনার দাবি রাখে। খাদ্য অধিকার একটি বহুমাত্রিক বিষয়। আমরা যে অর্থে খাদ্য গ্রহণের মাপকাঠিতে দারিদ্র্যকে বিশ্লেষণ করে থাকি তাতেও সমস্যা রয়েছে। সকল ক্ষেত্রে রাষ্ট্রের ভূমিকার পাশাপাশি সামাজিক-সাংস্কৃতিক দিকটির উপরও গুরুত্ব আরোপ করেন তিনি।
সভাপতির বক্তব্যে ড. কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ বলেন, বাংলাদেশে পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনায় কিছু দিক-নির্দেশনা থাকলেও কার্যকর ভূমিকা পালন করে থাকে বাৎসরিক পরিকল্পনা। এমডিজির বেশকিছু ভালো অর্জন সত্ত্বেও শুধুমাত্র আয়ের প্রেক্ষিতে নয়, বহুমাত্রিকভাবে পরিমাপ করলে আমাদের দারিদ্র্যের হার আরো বাড়বে। খাদ্য অধিকারের ক্ষেত্রে অতি দরিদ্রদের দিকে বিশেষভাবে নজর দিতে হবে। জনসংখ্যা বৃদ্ধির পাশাপাশি কৃষিজমির পরিমাণ ও উৎপাদনশীলতা, জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাতের বিষয়গুলোর উপরও নজর দিতে হবে জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবেও।
সাহস২৪ ডটকম-এর প্রকাশিত প্রচারিত কোনো সংবাদ তথ্য, ছবি, রেখাচিত্র, ভিডিও, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
মন্তব্যে প্রকাশিত মত মন্তব্যকারীর একান্তই নিজস্ব। সাহস২৪ ডটকম-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে এসব মন্তব্যের কোনো মিল নাও থাকতে পারে। মন্তব্যকারীর বক্তব্যের বিষয়বস্তু নিয়ে সাহস২৪ ডটকম-এর কর্তৃপক্ষ আইনগত বা অন্য কোনো দায় নেবে না।