- হোম
- >
- ধর্ম ও জীবন
- >
- চাঁপাইনবাবগঞ্জে ১২২টি মন্ডপে শারদীয় দুর্গোৎসব শুরু
চাঁপাইনবাবগঞ্জে ১২২টি মন্ডপে শারদীয় দুর্গোৎসব শুরু
চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলায় মহাসমারোহে শুরু হয়েছে বাংলাদেশের সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় অনুষ্ঠান শারদীয় দুর্গোৎসব। জেলায় এবছর ১’শ ২২টি মন্ডপে পুজা অর্চণা হচ্ছে। এর মধ্যে চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলায় ৫৩টি (চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌর এলাকায় ২৭টি ও বিভিন্ন ইউনিয়নে ২৬টি), শিবগঞ্জ উপজেলায় ৩১টি, গোমস্তাপুরে ২৬টি, নাচোলে ১০টি ও ভোলাহাট উপজেলায় ২টি।
সোমবার সকাল থেকে নারিকেল বা ডাব এর সাথে আম শাখাসহ ঘট স্থাপনের পর ষষ্ঠির কল্পনার মধ্য দিয়ে বাংলা ১৪২২ সনের শারদীয় দূর্গা পুজা শুরু হয়েছে। শারদীয় দূর্গোৎসব সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করার জন্য জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসনসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে নেওয়া হয়েছে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা।প্রতি বছরের মত এবছরও জেলায় সনাতন সম্প্রদায়ের মানুষ নির্বিঘ্নে তাদের পুঁজা শুরু এবং শেষ করবে বলে আশা করছেন জেলা পুঁজা উদযাপন কমিটির সভাপতি মোহিত কুমার দাঁ।
এ বছর সদর উপজেলার বারঘরিয়ার ঐতিহ্যবাহী ২২ পুতুল প্রমিতার মৃত শিল্পী শ্রী অসিত পাল। মন্দিরের পুরোহিত শ্রী বিশ্বনাথ চক্রবর্তী। তার সহায়তাকারী তাপস চাটার্জী।
মহানন্দা নদীর তীরে জেলা শহরের অপর পাড়ে অবস্থিত বারঘরিয়া এলাকায় বাইশ পুতুল মন্ডপে বাংলাদেশ ও ভারতের পশ্চিমবঙ্গের মধ্য সবচেয়ে বড় এবং অনন্য প্রতিমা নিয়ে পুঁজা অনুষ্ঠিত হয় বলে প্রচলিত আছে।
এছাড়া গোমস্তাপুর উপজেলার চৌডালা এলাকায় বাইশ পুতুল বিশিষ্ট আরও একটি দুর্গাপুঁজা অনুষ্ঠিত হয়। চৌডালা বাইশ পুতুল প্রতিমা জমিদার ও ধর্মপ্রাণ ব্যক্তি প্রাণ চন্দ্র সাহা ১৬৯০ খ্রীঃ ৮৮৭ বঙ্গাব্দ এবং বারঘরিয়া বাইশ পুতুল প্রতিমা বিত্তশালী ও ধর্মপ্রাণ ব্যক্তি ধনঞ্জয় সাহা মহাশয় কর্তৃক ১৭০৭ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। একই কাঠামোর ভিতর ২২টি দেবদেবীর পুতুল সমন্বয়ে গঠিত দুর্গা মায়ের পুঁজা বাংলাদেশ ও ভারতের আর কোথাও হয় না বলেই দাবি আয়োজকদের।
এই দৃষ্টিনন্দন, সুশোভিত, বৈচিত্রময়, অনন্য প্রতিমা দর্শনের জন্য বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলা ও ভারত থেকেও বহু সংখ্যক দর্শনার্থীরা আসেন। এই প্রতিমা কাঠামোতে যে সমস্ত দেব-দেবী থাকে তার মধ্যে রয়েছে গঙ্গা, শিব, দুর্গা, লক্ষ্মী, সরস্বতী, কার্তিক, গণেশ, সিংহ, অসুর, জয়া, বিজয়া, নন্দী, বিন্দী, ময়ুর, ইঁদুর, ষাঁড়, সর্প ২টি, মগর মাছ ২টি, রাম, লক্ষণ প্রভৃতি।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা পুঁজা উদযাপন কমিটির সভাপতি মোহিত কুমার দাঁ শারদীয় দূর্গোৎসব বিষয়ে জানান, চাঁপাইনবাবগঞ্জে মন্ডপে মন্ডপে দারুন উৎসাহ, উদ্দীপনার ভিতর দিয়ে দুর্গাপুজার আয়োজন হয়েছে। মন্দিরগুলো বিভিন্ন সাজে সজ্জিত হয়েছে। সরকারের পক্ষ থেকে জেলা প্রশাসনের মাধ্যমে প্রতিটি মন্দিরে অনুদান দেওয়া হয়েছে। জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে বিভিন্ন মন্ডপের প্রতিনিধি ও কর্মীদের নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। নির্বিঘ্নে যাতে পুঁজা অনুষ্ঠিত হয়, সেজন্য সবধরনের নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। পুজোকে কেন্দ্র করে প্রতি মন্ডপে দুটি পর্ব অত্যন্ত আকর্ষনীয় ও বিপুল উৎসাহ উদ্দীপনা মধ্যে উদযাপিত হয়। আরতির সময় ধূপাচি নৃত্য এবং দশমীর দিন সধবা মায়েদের সিদুঁর খেলা। ঢাকসহ অন্যান্য বাদ্যের সাথে এ দুটি পর্ব বড় আনন্দ মুখর পরিবেশে অনুষ্ঠিত হয়।
উল্লেখ্য যে, নব পত্রিকা বা কলা বউ এর পুঁজা সর্বপ্রথম শুরু হয়। আদিকাল থেকেই চলে আসছে সুর (দেবতা) আর অসুরের (দানব) মধ্যে দ্বন্দ্ব। সৎ আর অসৎ প্রবৃত্তির মধ্যে যুদ্ধ। সত্য যুগে রাজ্য হারা রাজা সুরথ রাজ্য পুণঃ প্রাপ্তি এবং পারলৌকিক সুখ-শান্তি কামনায় প্রথম দুর্গা পুজা করেন বসন্তকালে। তাই দেবীর নাম হয় বাসন্তী, আর ত্রেতা যুগে রাবণের কবল হতে সীতাকে উদ্ধারের জন্য শরৎকালে শ্রী রামচন্দ্র অকালে দুর্গা পুজা করেন। এজন্য এই পুজাকে অকাল বোধন বা শারদীয় দূর্গা পুজা উৎসব বলে। সেই থেকেই চলমান দুর্গাপুজা। দুর্গাপুজার মূলতত্ত্ব বা উদ্দেশ্য হচ্ছে দুষ্টের দমন ও শিষ্টের পালন, অশুভ শক্তির বিনাশ ও শুভ শক্তির উদয়। ঐক্য, সাম্য, সমত্ব, মৈত্রী, ধৈর্য্য, প্রেম প্রভৃতি মানবিক গুনাবলী অর্জন ও ষড়রিপুর দমন বা বর্জন করাই এ পুঁজোর মূল আদর্শ ও শিক্ষা বলে জানান তিনি।
এদিকে চাঁপাইনবাবগঞ্জ-১ আসনের সংসদ সদস্য ও সংসদে বন ও পরিবেশ বিষয়ক মন্ত্রনালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সদস্য মোঃ গোলাম রাব্বানী বলেছেন “ধর্ম যার যার উৎসব সবার”।
তিনি সোমবার সন্ধ্যায় শিবগঞ্জ উপজেলার কানসাট ইউনিয়নের পুখুরিয়ায় শারদীয় দূর্গাউৎসবের শুভ উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ কথা বলেন। উক্ত অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন শিবগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এ্যাড. আতাউর রহমান।
এসময় অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন কানসাট ইউপি চেয়ারম্যান বেনাউল ইসলাম, শ্রী কূনাল মূখার্যি, পুখুরিয়া পূজা উদযাপন কমিটির সভাপতি শ্রী জয়ন্ত কুমার দাস সহ সনাতন ধর্মীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ।
সাহস২৪ ডটকম-এর প্রকাশিত প্রচারিত কোনো সংবাদ তথ্য, ছবি, রেখাচিত্র, ভিডিও, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
মন্তব্যে প্রকাশিত মত মন্তব্যকারীর একান্তই নিজস্ব। সাহস২৪ ডটকম-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে এসব মন্তব্যের কোনো মিল নাও থাকতে পারে। মন্তব্যকারীর বক্তব্যের বিষয়বস্তু নিয়ে সাহস২৪ ডটকম-এর কর্তৃপক্ষ আইনগত বা অন্য কোনো দায় নেবে না।