ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকল সম্প্রদায়ের মানুষের দীর্ঘকালের স্বাধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলনের চূড়ান্ত পরিণতি মুক্তিযুদ্ধ। ৯ মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পর লাখো শহীদের রক্তের বিনিময়ে আমরা পেয়েছি স্বাধীনতা।

১৯৭৫ সালে স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যাকাণ্ডের পর পাকিস্তানি ভাবাপন্ন বাংলাদেশের নতুন সামরিক শাসকরা সুপরিকল্পিতভাবে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও মূল্যবোধকে ধ্বংস করতে শুরু করে। আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসকে বিকৃত করে সম্পূর্ণরূপে পাল্টে দেওয়ার চক্রান্ত শুরু হয়। এসব কারণে আমাদের নতুন প্রজন্মের তরুণ-তরুণীদের মধ্যে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস সম্বন্ধে নানারকম বিভ্রান্তির সৃষ্টি হয়েছে। বর্তমান সময়েও একটি দেশদ্রোহী মহল মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃত করার অপচেষ্টা করে যাচ্ছে।

মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃত করার এই অপচেষ্টাকে রুখে দেয়ার লক্ষ্যে এবং মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস সংগ্রহ, সংরক্ষণ, গবেষণা ও প্রচার নিয়ে কাজ করার উদ্দেশ্যে সাব্বির হোসাইনের উদ্যোগে ২০০৭ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় 'বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ পাঠাগার ও গবেষণা কেন্দ্র'। সংগঠনটি এই লক্ষ্যে কয়েকটি উদ্যোগ গ্রহণ করেছে- মুক্তিযুদ্ধ ই-আর্কাইভ, মুক্তিযুদ্ধ পাঠশালা এবং মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক গবেষণা ও প্রকাশনা কেন্দ্র।

মুক্তিযুদ্ধ ই-আর্কাইভ: ২০১৪ সালের ০৪ মে যাত্রা শুরু করে 'মুক্তিযুদ্ধ ই-আর্কাইভ', যা মুক্তিযুদ্ধের বই, দলিল, ডকুমেন্টারী, ভিডিও ফুটেজ, চলচ্চিত্র, অডিও ও ছবির ডিজিটাল লাইব্রেরী; যা পাঠকদের জন্য সম্পূর্ণ বিনামূল্যে উন্মুক্ত। বর্তমানে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের উপর সবচেয়ে বড় ডিজিটাল লাইব্রেরী।

মুক্তিযুদ্ধ ই-আর্কাইভে আছে মুক্তিযুদ্ধের হাজারখানেক বইয়ের পিডিএফ, যা সম্পূর্ণ বিনামূল্যে পাঠক পড়তে পারছেন। এছাড়া রয়েছে মুক্তিযুদ্ধের ভিডিও ফুটেজ, ডকুমেন্টারী, অডিও, চলচ্চিত্র ও ছবির বিশাল সংগ্রহ, যা পাঠক কয়েক ক্লিকেই পেতে পারছে। 

মুক্তিযুদ্ধ পাঠশালা: 'মুক্তিযুদ্ধ পাঠশালা' হলো মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক উন্মুক্ত পাঠশালা কার্যক্রম, যার মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধের অপপ্রচার নিয়ে পাড়া-মহল্লায়-আড্ডায় উন্মুক্ত আলোচনা করা হয়।

মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক গবেষণা ও প্রকাশনা: সংগঠনটি মুক্তিযোদ্ধাদের ভিডিও সাক্ষাৎকার, বাঙালির মুক্তির সংগ্রামের দিনলিপি, মুক্তিযুদ্ধের রিপোর্ট সংকলন, মুক্তিযুদ্ধের ছবি, দন্ডপ্রাপ্ত একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বৃত্তান্ত, প্রোপাগান্ডা খন্ডনসহ নানাবিধ গবেষণা কাজে নিজেদেরকে সম্পৃক্ত করেছে।

স্বেচ্ছাশ্রমের ভিত্তিতে 'বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ পাঠাগার ও গবেষণা কেন্দ্র' পরিচালনা করে 'টিম মুক্তিযুদ্ধ'। 'টিম মুক্তিযুদ্ধে' আছেন- সাব্বির হোসাইন, এম আই খান, এস এ খান এবং মারুফ হোসেন। সংগঠনটির রয়েছে বৃহৎ শুভাকাঙ্খী গোষ্ঠী, যাদের প্রতি ওয়েবসাইটে আনুষ্ঠানিকভাবে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা হয়েছে।

মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃতিরোধে এবং সঠিক ইতিহাস সংরক্ষন ও প্রচারের কাজে 'বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ পাঠাগার ও গবেষণা কেন্দ্র' ইতোমধ্যেই সর্বত্র প্রশংসীত হয়েছে।

মুক্তিযুদ্ধ ই-আর্কাইভের মাধ্যমে সংগঠনটি সত্যিকার অর্থেই মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস মানুষের একদম হাতের নাগালে পৌঁছে দিয়েছে।

মুক্তিযুদ্ধের ডিজিটাল লাইব্রেরীর ঠিকানা: www.liberationwarbangladesh.org