যেভাবে শিরচ্ছেদ থেকে রক্ষা পেলেন লিটন
মধ্যপ্রাচ্যের দেশ সৌদি আরবে ভারতীয় এক নারীকে ধর্ষণের অভিযোগ উঠে বাংলাদেশি মোঃ লিটন জহির উদ্দিন (২৫) বিরুদ্ধে। সৌদি পুলিশ এ ঘটনায় তাকে গ্রেপ্তার করে এবং পরবর্তীতে সৌদি শরিয়াহ আদালত তাকে মৃত্যুদণ্ড প্রদান করেন। তবে অবিশ্বাস্য হলেও সত্যি, মৃত্যুদণ্ডের ওই আদেশের বিরুদ্ধে আপিল করার সময় শেষ হয়ে যাওয়ার পরও নাটকীয়ভাবে সে দণ্ডের হাত থেকে বেঁচে গেছেন লিটন।
নিজের মুখে অপরাধের কথা স্বীকার করার কারণে তার পক্ষে লড়তে অপারগতা প্রকাশ করেছিলেন আইনজীবীরা। সেই সঙ্গে শেষ হয়েছিল রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করার সময়ও। ফলে লিটনের দণ্ড কার্যকর সময়ের ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছিল।
২০১০ সালের ৭ জুন সৌদি আরবের মোরাব্বা এলাকার আব্দুর রহিম আব্দুল্লাহ আল গামদির বাসার ভাড়াটিয়া ময়েজ উদ্দিনের স্ত্রী আসমা বেগম (৩১) বাসায় একা ছিলেন। লিটন ময়েজের বাসায় ঢুকে আসমার হাত বেঁধে ফেলেন এবং তাকে হত্যার হুমকি দিয়ে ধর্ষণ করেন। পরে ছয় হাজার সৌদি রিয়াল, পাঁচ হাজারের মতো ভারতীয় রুপী, দুটি সোনার চেইন এবং একটি মোবাইল চুরি করে পালিয়ে যান তিনি। পরে এসব অভিযোগে লিটনকে গ্রেপ্তার করে মোরাব্বা পুলিশ।
শরিয়াহ আদালতে লিটনের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় আদালতের সম্মলিত বোর্ড তার মৃত্যদণ্ডের রায় প্রদান করে। ২০১১ সালের ১৯ অক্টোবর সেই রায় পর্যালোচনা করে দেখা যায়, আদালতে লিটন তার ডাকাতি ও ধর্ষণের অভিযোগ স্বীকার করেছেন। পরে এই রায়ের বিরুদ্ধে ৩০ দিনের মধ্যে আপিল করার সুযোগ ছিল। কিন্তু তিনি নির্দিষ্ট সময়ে আপিল করতে পারেননি। এমনকি তার মামলা পরিচালনার জন্য যে আইনজীবী কাগজপত্র সংগ্রহ করেছিলেন, তিনিও পরে মামলা লড়তে অপরাগতা প্রকাশ করেন। আর এসব ঘটনায় মৃত্যদণ্ড কার্যকর এক রকমের নিশ্চিতই হয়ে গিয়েছিল।
ওই বছরের ৩ নভেম্বর এসব ঘটনা জানতে পেরে লিটনের মা জাহানার বেগম সরাসরি দূতাবাসে আবেদন করেন। সেখানে তার মা বলেন, ‘আমার ছেলে দীর্ঘদিন সৌদি আরবে কর্মরত আছে। আমি লোক মারফত জানতে পারলাম একজন ভারতীয় নারী উদ্দেশ্য প্রণোদিত হয়ে আমার ছেলে বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা করে। যে মামলায় তার বিরুদ্ধে মৃত্যদণ্ড ঘোষণা করা হয়েছে। কিন্তু ওই ভারতীয় নারী মামলার করার পর থেকে নিরুদ্দেশ। বর্তমানে আমার ছেলে মালাজ সেন্ট্রাল জেলের ৪ নম্বর রুমে আছে। তার দণ্ড মওকুফ করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য আবেদন করছি।’
পরবর্তী বছরের ১১ ফেব্রুয়ারি লিটনের মৃত্যদণ্ডের রায়ের কপিও পাঠানো হয়েছিল কারাগারে। তাই যেকোন সময় এ রায় কার্যকর হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু জনশক্তি ব্যুরো ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় তার মায়ের আবেদনপত্র পাওয়ার পর ২০১২ সালের মার্চ মাসের দিকে এই দণ্ডের বিষয়টি দূতাবাসের নজরে আনে। তখন দূতাবাস থেকে সৌদিতে থাকা লিটনের আত্মীয়-স্বজন ও সৌদি কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। পরে সেই রায়ের কপিসহ রিয়াদের সৌদি ল’ ফার্ম মেসার্স আল খোরাইজির সঙ্গ পরামর্শ করা হয়। ওই ফার্মের আইনজীবী আবু আব্দুল্লাহ আল খোরাইজি মামলার যাবতীয় কাগজপত্র ও রায় পর্যবেক্ষণ করেন। ওই আইনজীবীও জানান, অভিযুক্তের স্বীকারোক্তির কারণে এ মামলার রায়ের বিরুদ্ধে কোনো বক্তব্য রাখার সুযোগ নেই। তাছাড়া আপিল আবেদন করার সময় না থাকায় আপিলও করা যাবে না।
তবে হাল ছাড়েননি লিটনের মা মোসাঃ জাহানারা বেগম। ২০১২ সালেই বিএমইটির মাধ্যমে সরাসরি সৌদি আরবের শরিয়াহ আদালতে ছেলেন প্রাণ ভিক্ষা চান তিনি। এই আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আপিল আবেদনের আবারও সুযোগ করে দেন সৌদি আদালত। তখন দূতাবাসের উদ্যোগে ২০১৪ সালের ৭ আগস্ট আপিল গ্রহণের শুনানি হয়। সেই শুনানিতে দূতাবাসের প্রতিনিধি হিসেবে প্রথম সচিব মোহাম্মদ মিজানুর রহমান এবং অনুবাদক এসএম দোহা উপস্থিত ছিলেন। পরে দূতাবাসের মাধ্যমে লিটনের লিখিত বক্তব্যের আপিলটি কোর্টে গৃহীত হয়। পরে তার বক্তব্য পর্যালোচনা করে ১৭ আগস্ট আপিলের রায় দেয়া হয়। আপিলের রায়ে মৃত্যদণ্ডের পরিবর্তে তাকে ১০ বছরের কারাদণ্ড প্রদান করা হয়। আর এভাবে মৃত্যদণ্ডের হাত থেকে বেঁচে গেলেন লিটন।
লিটনের বাড়ি মুন্সিগঞ্জ জেলার গজারিয়া থানার গোসাইচর গ্রামে।
সাহস২৪ ডটকম-এর প্রকাশিত প্রচারিত কোনো সংবাদ তথ্য, ছবি, রেখাচিত্র, ভিডিও, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
মন্তব্যে প্রকাশিত মত মন্তব্যকারীর একান্তই নিজস্ব। সাহস২৪ ডটকম-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে এসব মন্তব্যের কোনো মিল নাও থাকতে পারে। মন্তব্যকারীর বক্তব্যের বিষয়বস্তু নিয়ে সাহস২৪ ডটকম-এর কর্তৃপক্ষ আইনগত বা অন্য কোনো দায় নেবে না।