বিশ্ববিদ্যালয়ের বিবিএর ছাত্র করিমন চালক
কুষ্টিয়ার খোকসা বাসস্ট্যান্ডে দাঁড়িয়ে আছে একটি করিমন। করিমনের চালক অপেক্ষা করছেন মালামাল নিয়ে। চালকের নাম গাফফারুল ইসলাম।
রাত নামলেই গাফফার একজন করিমন চালক। আর দিনের বেলায় তিনি ছাত্র। গাফফার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের বিবিএর ছাত্র।
করিমন চালিয়েই তিনি গত বছর সুযোগ পেয়েছিলেন ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে। ভেবেছিলেন রাতে করিমন চালিয়ে দিনে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাসটা করা যাবে। এক বছর পর গাফফার আর চালাতে পারলেন না বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়াশোনা।
এই ব্যাপারে তার সাথে কথা হলে তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে হলে কুষ্টিয়াতে থাকতে হয়। করিমন চালানোর সুযোগটা পাওয়া যায় না। পুরো সংসারটা আমাকে চালাতে হয়। আর এজন্য করিমনই ভরসা।
মেহেরপুর সদর উপজেলার হোসনাবাদ গ্রামে থাকেন গাফফার। তিন বছর ধরে গাফফারের বাবা অসুস্থ। তাই তিনি ছাড়া সংসারের হাল ধরার কেউ নেই।
গাফফারুল ইসলাম বলেন, ‘সংসারে অভাবের কারণে ছোট বেলা থেকেই লেখাপড়ার পাশাপাশি বিভিন্ন কাজ করে বাবার সঙ্গে সংসারের হাল ধরেছি। বাড়ির ভিটেমাটি ছাড়া আর কিছুই নেই। বাবা অন্যের বাড়িতে কাজ করে যা আয় করতেন তা দিয়েই কোনোমতে সংসার চলত। বাবা অসুস্থ হয়ে পড়লে কাজে যেতে না পারলে সেদিন না খেয়েই দিন কাটাতে হতো। তাই আমি লেখাপড়ার পাশাপাশি ছোট চাচার করিমন নিয়ে রাতে চালানো শুরু করি আর দিনে স্কুলে ক্লাস করতে থাকি।’
করিমন চালিয়ে ২০১২ সালে রাজনগর দাখিল মাদ্রাসা থেকে দাখিল এবং ২০১৪ সালে মেহেরপুর আহম্মেদ আলী টেকনিক্যাল কলেজ বিএম শাখা হতে এইচএসসি পাস করেন গাফফার। পরে কুষ্টিয়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০১৪-১৫ শিক্ষাবর্ষের ভর্তি পরীক্ষায় কৃতকার্য হয়ে বিবিএতে হিসাব বিজ্ঞান বিভাগে ভর্তি হন।
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের হিসাব বিজ্ঞান বিভাগে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গাফফারুল ইসলাম হিসাব বিজ্ঞান বিভাগের ২০১৪-১৫ শিক্ষাবর্ষের ছাত্র। তার রোল নং ৩০৬। বিশ্ববিদ্যালয়ে এখনো গাফফারের ছাত্রত্বের মেয়াদ আছে। তবে নিয়মিত ক্লাস বা পরীক্ষায় অংশ নিতে হবে। ওই দুই কাজ না করলে আগামী বছর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গাফফারের ছাত্রত্ব বাতিল হয়ে যাবে।
কিন্তু কঠিন বাস্তবতায় হেরেছে গাফফারের স্বপ্ন। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে হলে কুষ্টিয়ায় থাকতে হবে। আর কুষ্টিয়ায় থেকে গেলে সংসারটা যে বসে যাবে পথে।
সাহস২৪ ডটকম-এর প্রকাশিত প্রচারিত কোনো সংবাদ তথ্য, ছবি, রেখাচিত্র, ভিডিও, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
মন্তব্যে প্রকাশিত মত মন্তব্যকারীর একান্তই নিজস্ব। সাহস২৪ ডটকম-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে এসব মন্তব্যের কোনো মিল নাও থাকতে পারে। মন্তব্যকারীর বক্তব্যের বিষয়বস্তু নিয়ে সাহস২৪ ডটকম-এর কর্তৃপক্ষ আইনগত বা অন্য কোনো দায় নেবে না।