কলারোয়ায় একের পর এক বাল্য বিয়ে
সাতক্ষীরার কলারোয়া উপজেলায় চলছে বাল্য বিবাহের হিড়িক। ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে দ্রুত ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা করবেন বলে জানালেন কলারোয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা উত্তম কুমার। বৃহস্পতিবার চন্দনপুর ইউনিয়নে আজিজুল ইসলামের মেয়ে হাজিরা খাতুন(১৪) এর বাল্যবিয়ে বন্ধ করলেও গয়ড়া গ্রামের ইসমাইল মোড়লের মেয়ে রুপা আক্তার(১৪)এর বিয়ে বন্ধ করতে পারেনি প্রশাসন।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার প্রেরিত প্রতিনিধি উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা ঘটনাস্থলে পৌছানোর পূর্বেই বাল্যবধু রুপা আক্তারকে নিয়ে বরযাত্রী ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন। আজ (শুক্রবার) বিয়ে হচ্ছে গয়ড়া গ্রামের আনার আলীর মেয়ে ৭ম শ্রেণীর ছাত্রী সুমাইয়া আক্তারের।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, চন্দনপুর ইউনিয়ন পরিষদের ৬নং ওয়ার্ড সদস্য মনিরুল ইসলাম মনি একের পর এক পরিকল্পিতভাবে বাল্য বিবাহের সহায়তা প্রদান করে চলেছেন। ভিন্ন ভিন্ন কৌশল অবলম্বন করে প্রশাসনের চোঁখকে ফাঁকি দিচ্ছেন। কলারোয়া উপজেলার সীমান্তবর্তী যশোর জেলার শার্শা উপজেলার বাগআচড়া এলাকার রেজিষ্টার মহসিন আলীর নিকট থেকে ছেলে-মেয়ের বিবাহ সম্পন্ন করা হচ্ছে। তার ৪/৫দিন পর মেয়ের বাড়ীতে অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এ সময় প্রশাসনের কোন কর্মকর্তা ঘটনাস্থলে উপস্থিত হলে বলা হয়, এখানে কোন বিয়ে অনুষ্ঠান হচ্ছে না।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে চন্দনপুর এলাকার একাধিক ব্যক্তি জানান, মনিরুল ইসলাম এলাকার একজন চিহ্নিত চোরাকারবারী। তিনি ইউপি সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে নানা অনিয়ম-দূর্ণীতি সহ অসদাচারণ করে এলাকার মানুষদের অতিষ্ট করে তুলেছেন। তার ভয়ে কেউ মুখ খুলতে সাহস পায় না। মারপিটসহ খুন-জখমের হুমকি দেন। বর্তমানে এলাকার একাধিক অল্প বয়সী মেয়েদের বাবার কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা নিয়ে পরিকল্পিতভাবে বাল্য বিবাহ সম্পন্ন করে দিচ্ছেন। গত একমাসে কমপক্ষে ২০টি বাল্য বিবাহ সংঘটিত হয়েছে।
তবে এসব ব্যাপারে ইউপি সদস্য মনিরুল ইসলাম মনি তার বিরুদ্ধে সকল অভিযোগ অস্বীকার করে জানান, মেয়েদের বাল্য বিবাহ দেওয়া উচিত নয়। আমি কোন বাল্য বিবাহের সাথে সহযোগিতার সাথে যুক্ত নই।
এসব বিষয়ে চন্দনপুর ইউপি মোঃ রজমান আলী ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে জানান, দুঃখজনক হলেও সত্য আমাদের এলাকায় প্রতিদিন বাল্য বিবাহ সংগঠিত হচ্ছে। বিয়ে দেওয়ার জন্য জন্ম নিবন্ধন কার্ডের বয়স বাড়াতে পরিষদে আসছে অনেকেই। বয়স বাড়াতে অস্বকৃতি জানালে উদ্যোক্তাদের উপর আক্রমন করা হয়। তারপরও আমার মাধ্যমে কেউ জন্ম নিবন্ধন কার্ডের বয়স বাড়াতে পারেনি। তবে অনেকেই ভূয়া নিবন্ধন কার্ড বানিয়ে বিবাহ সম্পন্ন করছেন।
কলারোয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা উত্তম কুমার জানান, গত একমাস পূর্বে যোগদান করার পর থেকেই বাল্য বিবাহ বন্ধ একটা চ্যালেজ্ঞ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বাল্য বিবাহ বন্ধে উপজেলার সকল রেজিষ্টারদের নিয়ে একটি মতবিনিময় ও কঠোর নির্দেশনা প্রদান করবো। তাছাড়া প্রতিদিন উপজেলার কোথাও না কোথাও সময় বাল্য বিবাহ সংঘঠিত হচ্ছে। যার সব তথ্য আমাদের কাছে পৌছায় না।
সাতক্ষীরা অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক(সার্বিক) মোঃ এহতেশানুল আলম বাল্য বিবাহের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করবেন বলে জানান।
সাহস২৪ ডটকম-এর প্রকাশিত প্রচারিত কোনো সংবাদ তথ্য, ছবি, রেখাচিত্র, ভিডিও, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
মন্তব্যে প্রকাশিত মত মন্তব্যকারীর একান্তই নিজস্ব। সাহস২৪ ডটকম-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে এসব মন্তব্যের কোনো মিল নাও থাকতে পারে। মন্তব্যকারীর বক্তব্যের বিষয়বস্তু নিয়ে সাহস২৪ ডটকম-এর কর্তৃপক্ষ আইনগত বা অন্য কোনো দায় নেবে না।