- হোম
- >
- বাংলা ও বাঙালি
- >
- নয়ীম গহর : হারিয়ে গেলেন বিস্মৃতির অন্তরালে
নয়ীম গহর : হারিয়ে গেলেন বিস্মৃতির অন্তরালে
সে দিনের সেই দিপ্ত চেহারা কোথায় যেন হারিয়ে গেছে। যে কণ্ঠ একাত্তরের রণাঙ্গনে মুক্তিযোদ্ধাদের অনুপ্রেরণা দিত আর পাক হায়নাদের বুকে ধরাত ভয়ের কাঁপন। সেই কণ্ঠও আজ নিস্প্রাণ হয়ে গেছে। যে দূরন্ত স্বপ্ন চেখে নিয়ে সেদিন দেশ মা’কে রক্ষা করার জন্য যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল হয়ত যুদ্ধ পরবর্তী সময়ে সেই স্বপ্নগুলো চোখের সামনে ম্লান হয়ে গেছে।
হয়তো সে কারনেই অতি সংগোপনে নিজেকে গুটিয়ে নিয়েছেন সবার কাছ থেকে। আর খুজবে না সেই উত্তাল মার্চ, পাক হানাদার বাহিনীর গণহত্যা, ৩০ লক্ষ শহিদের রক্তস্নাত দেশ, ২লক্ষ মা-বোনের সম্ভ্রমের দামে কেনা এই প্রিয় দেশ, বাঙালি জাতির স্থপতি জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর সেই ডাক।
মনে পড়বে না আর ২৫ মার্চ কাল রাতের কথা। সেদিন নিজের জীবন বিপন্ন করে বঙ্গবন্ধুর নির্দেশমতো অত্যন্ত বিশ্বস্ততার সঙ্গে বঙ্গবন্ধুর জরুরি বার্তা অতিগোপনে চট্টগ্রামে এম আর সিদ্দিকীর কাছে পৌঁছে দিয়েছিলেন। যুদ্ধ পরবর্তী সময়ে তাঁর এই অসামান্য কৃতিত্বেও জন্য পেয়েছেন স্বাধীনতা পদক (২০১২) সহ অনেক সম্মাননা।
এতক্ষণ যার কথা হচ্ছিল তিনি বীর মুক্তিযোদ্ধ নয়ীম গহর। একাধারে গীতিকার, ঔপন্যাসিক, গায়ক, নায়ক, নাটক রচয়িতা, বিবিসির (লন্ডন) বাংলা ভাষ্যকার ও খবর পাঠক।
বিক্রমপুরের এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্ম বাংলা ১৩৪৪ সনের ২৯ শ্রাবণ, ইংরেজি ১৪ আগস্ট, ১৯৩৬ খ্রিস্টাব্দে। মৃত্যু ৭ অক্টোবর ২০১৫। ছাত্রজীবনেও তিনি অত্যন্ত মেধার পরিচয় দেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকে প্রথম স্থান অধিকার করেছিলেন।
বহুমুখি প্রতিভাবান এই মানুষটি ছোট বেলায় কলেজ জীবনে ইংরেজী কবিতা দিয়ে তাঁর প্রতিভা প্রকাশ করেন, তখনকার প্রথম শ্রেণির ইংরেজী পত্রিকা ‘অবজারভার’ এ। প্রকাশিত হয় বাংলা কবিতার বই ‘শব ও স্বগতোক্তি এবং নিষিদ্ধ বিছানা’। গল্পগ্রন্থ- ‘রাহুগ্রাস’।
পত্র-পত্রিকাতে অসংখ্য কবিতা, ছোট গল্প রচনা করেছেন। কিন্তু কবি বড় অগোছালো। তার এই মূল্যবান রচনা গুলি নানা দিকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে।
তাঁর সবচেয়ে সর্বজনীন পরিচয়টি, তিনি সৃষ্টি করেছেন বহু আধুনিক ও মুক্তিযুদ্ধের হৃদয়স্পর্শীগান। ১৯৭১ সালের রক্তঝরা দিনগুলোতে যাঁর গান মুক্তিযোদ্ধাদের যুদ্ধের প্রেরণা জুগিয়েছে।
যেমন ‘নোঙ্গর তোলো তোলো সময় যে হলো হলো’, ‘সাগর পাড়িতে ঝড় জাগে যদি জাগতে দাও’, ‘পুবের ওই আকাশে সূর্য উঠছে আলোকে আলোকময়’, ‘জয় জয়জয় জয় বাংলা’ ‘জন্ম আমার ধন্য হলো মাগো’। দেশাত্মবোধক গানের পাশাপাশি অনেক জনপ্রিয় আধুনিক, উচ্চাঙ্গসংগীত রচনা করেন তিনি। যার সংখ্যা প্রায় ২০০।
স্বাধীন বাংলাদেশে তাঁর রচনায় প্রথম নাটক বিটিভিতে প্রচারিত হয় ‘পাখি আমার জয়ন্ত’ (জয়ন্ত তাঁর ছেলের নাম)। ফজলে লোহানী ও নয়ীম গহর মিলে একটি নতুন ধারার টিভি অনুষ্ঠান করেন ‘যদি কিছু মনে না করেন’ শিরোনামে। ‘ইচ্ছে করেই যাঁরা ভুল করেন, জেনেও না জানার ভান করেন, তাঁদের কিছু ভুল বুঝিয়ে দেব’ এ গানটিও তাঁরই রচনা।
প্রখ্যাত চলচ্চিত্র পরিচালক এহতেশাম তাঁর ছবিতে নায়কের ভূমিকায় অভিনয় করার জন্য নয়ীম গহরকে বারবার অনুরোধ করেছিলেন। তখনকার চলচ্চিত্র ম্যাগাজিন ‘রূপছায়া’ নয়ীম গহরের ছবিসহ লিখেছিল, ‘সম্ভাবনাময় একটি মুখ, আগামীতে এর পরিচয় পাবেন। কেউই ভাবছেন না তাঁকে নিয়ে। কিছুই করছেন না নয়ীম গহরের জন্য।’
এই দেশ ও জাতির জন্য অনেক অবদান রেখেও পরিণত বয়সে নিজ বাড়িতে নিভৃতচারী ছিলেন নয়ীম গহর। বিধ্বস্ত ম্লান অবয়বে ক্ষীণ হয়ে আসা চোখে আজ আর কোন প্রশ্ন ভাসছে না। দীর্ঘশ্বাসে ঝরে পড়ছে না কোন অব্যক্ত বেদনা।
সাহস২৪ ডটকম-এর প্রকাশিত প্রচারিত কোনো সংবাদ তথ্য, ছবি, রেখাচিত্র, ভিডিও, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
মন্তব্যে প্রকাশিত মত মন্তব্যকারীর একান্তই নিজস্ব। সাহস২৪ ডটকম-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে এসব মন্তব্যের কোনো মিল নাও থাকতে পারে। মন্তব্যকারীর বক্তব্যের বিষয়বস্তু নিয়ে সাহস২৪ ডটকম-এর কর্তৃপক্ষ আইনগত বা অন্য কোনো দায় নেবে না।