আগৈলঝাড়ায় প্রশাসনের উদাসীনতায় সরকারের উন্নয়ন মেলা ব্যাহত
প্রচার-প্রচারণা ও লোক সমাগম ছাড়াই শেষ হল বরিশালের আগৈলঝাড়া প্রশাসন কর্তৃক আয়োজিত তিনদিন ব্যাপী উন্নয়ন মেলা।
‘ব্র্যান্ডিং শেখ হাসিনা’ শ্লোগানকে সামনে রেখে বর্তমান ডিজিটাল সরকারের তথ্যপ্রযুক্তির মাধ্যমে আয়োজন করা হয় উন্নয়ন মেলার। এলাকার শিক্ষা, চলমান অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নের বিভিন্ন প্রকল্প ও গৃহীত কর্মসূচী জনগণের সামনে তুলে ধরতে এ মেলার আয়োজন করা হলেও কর্তৃপক্ষের উদাসীনতা ও পূর্ব প্রচারণার অভাবে দর্শণার্থীর উল্লেখযোগ্য সমাগম ঘটেনি। মেলা প্রাঙ্গণ ছিল নীরব নিথর ও নিরস।
ফলে সরকারের বিভিন্ন উন্নয়ন কার্যক্রমের চিত্র জনসমক্ষে প্রকাশের উদ্দেশ্য দারুণভাবে ব্যাহত হয়েছে বলে আগত দর্শণার্থীরা অভিযোগ করেছেন। মেলা শুরুর দিন থেকে শেষ পর্যন্ত ছিল একই অবস্থা। এর সাথে ছিল অব্যাহত লোডশেডিং-এর নিদারুণ যন্ত্রণা।
আগৈলঝাড়া উপজেলা প্রশাসনের আয়োজনে ও উপজেলা পরিষদের তত্বাবধানে উপজেলা সদরের শ্রীমতি মাতৃমঙ্গল বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয় চত্বরে গত ২৮ সেপ্টেম্বর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা দেবী চন্দ’র সভাপতিত্বে উপজেলা চেয়ারম্যান গোলাম মোর্তুজা খান প্রধান অতিথি থেকে মেলার উদ্বোধন করেন। ৩০ সেপ্টেম্বর তিনদিনের উন্নয়ন মেলা বুধবার রাতে সমাপ্ত হয়েছে।
মেলার প্রথমদিন বিকেলে উপজেলা প্রশাসন ও ইউনিয়ন তথ্য সেবা কেন্দ্রের স্টলে কোন কর্মকর্তা বা পরিচালনার জন্য কোন লোকজন না থাকার ব্যাপারটি আগত দর্শণার্থীদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। সকাল ৯টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত মেলা উন্মুক্ত থাকলেও লোক সমাগম না হওয়ায় মেলার দ্বিতীয়দিন থেকে বিকেল ৩টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত দর্শণার্থীদের জন্য মেলা উন্মুক্ত থাকার কথা থাকলে স্টলে লোক না থাকায় দর্শনার্থীর অভাবে সন্ধ্যার পরপরই মেলার সমাপ্তি ঘটে।
উন্নয়ন মেলায় উপজেলা প্রশাসন, সমাজসেবা অধিদপ্তর, মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তর, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, মাধ্যমিক শিক্ষা, প্রাথমিক শিক্ষা, পরিবার পরিকল্পনা বিভাগ, প্রাণী সম্পদ বিভাগ, একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্প, ইউনিয়ন তথ্য সেবা কেন্দ্র, জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর, এনজিও সমন্বয় পরিষদসহ মোট ১২টি স্টল বসেছিল।
মেলায় বিভিন্ন স্টলে সরকারের উন্নয়নের তথ্য উপাত্ত থাকলেও মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসের স্টলে আধুনিক প্রযুক্তির মাধ্যমে অতিরঞ্জিত করে কম্পিউটার ল্যাবের আলোকচিত্র ও তথ্য উপস্থাপনের গুরুতর অভিযোগ উঠেছে।
অভিযোগ রয়েছে, উপজেলা প্রশাসন কর্তৃক গঠিত তদন্ত কমিটির প্রাপ্ত রিপোর্টে অস্তিত্ব বিহীন রাজিহার ভোকেশনাল ইনিস্টিটিউট কম্পিউটার ল্যাব স্থাপন না থাকলেও তথ্যচিত্রে ওই ল্যাবের ছবি প্রদর্শিত হওয়ায় তা মেলায় আগত দর্শণার্থীদের অবাক করেছে। এছাড়াও যেসকল স্কুলের কম্পিউটার ল্যাবের চিত্র দেখানো হয়েছে বাস্তবের সাথে তার কোন মিল ছিলনা। উপজেলা প্রাণী সম্পদ স্টলে ২০১৪ সালের সমবায় মেলায় ব্যবহৃত একটি তথ্যচিত্র গ্যালারীতে থাকায় তা সবার হাসির খোরাক যুগিয়েছে। কোন লোক ছিলনা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের স্টলে।
মেলায় আগত দর্শণার্থীদের কাছে সরকারের উন্নয়নের তথ্য উপস্থাপন বা উন্নয়ন চিত্র তুলে ধরতে অধিকাংশ স্টলগুলোতে ছিলনা সংশ্লিষ্ট দপ্তরের কোন কর্মকর্তা বা কর্মচারী। দ্বিতীয়দিন সন্ধ্যা ৬টা থেকে সাড়ে সাতটা পর্যন্ত মেলা প্রাঙ্গন ঘুরে দেখা গেছে, উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, প্রাণী সম্পদ বিভাগ, পরিবার পরিকল্পনা বিভাগ, ইউনিয়ন তথ্য সেবা কেন্দ্রের স্টলে কোন লোক খুঁজে পাওয়া যায়নি।
ঘটনার সত্যতা স্বীকার করেছেন শ্রীমতি মাতৃমঙ্গল বালিকা বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক নির্মলেন্দু বাড়ৈ, ব্যবসায়ী আ. ছালাম হাওলাদার, এনজিও সমন্বয় পরিষদ নেতা কাজল দাশগুপ্ত। বিষয়টি তাৎক্ষণিকভাবে আয়োজক ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে সাংবাদিকরা ফোনে জানালে তিনি সংবাদ প্রকাশ না করার অনুরোধ করে বলেন- বিষয়টি তিনি দেখছেন। তবে তারপরেও ফলাফল ছিল একই। তবে উর্ধতন কর্মকর্তাদের দেখানোর জন্য ছবির পোজ দিয়েছেন অনেক কর্মকর্তারা।
মেলা শুরুর পর কর্মকর্তারা মাঝে মধ্যে মেলা প্রাঙ্গনে এলেও তারা বন্ধু-বান্ধবের সাথে গল্প গুজবে মশগুল ছিলেন। অফিসের কর্মচারীদের বসিয়ে রেখে তাদের দায় সেরেছেন। কয়েকটি স্টলে কোন কর্মকর্তা বা কর্মচারীদের দেখাও পাওয়া যায়নি। দু’একজন যারাও ছিলেন তারাও ছিলেন কাঠের পুতুল হয়ে। সংশ্লিষ্ট অফিসের উন্নয়নের কোন তথ্য আগত দর্শণার্থীদের জানাতে পারেননি তারা।
সাহস২৪ ডটকম-এর প্রকাশিত প্রচারিত কোনো সংবাদ তথ্য, ছবি, রেখাচিত্র, ভিডিও, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
মন্তব্যে প্রকাশিত মত মন্তব্যকারীর একান্তই নিজস্ব। সাহস২৪ ডটকম-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে এসব মন্তব্যের কোনো মিল নাও থাকতে পারে। মন্তব্যকারীর বক্তব্যের বিষয়বস্তু নিয়ে সাহস২৪ ডটকম-এর কর্তৃপক্ষ আইনগত বা অন্য কোনো দায় নেবে না।