ঝালকাঠিতে ১ টাকার বিকল্প চকলেট
১ টাকার খুচরা সমস্যা কাটছে না; বরং দিন দিন তা বাড়ছে। বর্তমানে লেনদেনের ক্ষেত্রে ১ টাকার (কয়েন) ব্যবহার উঠে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে। কেনাকাটার ক্ষেত্রে চকলেটই এখন ১ টাকার বিকল্প হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। এর ফলে দোকানি লাভবান হলেও ঠকছেন ক্রেতারা। তবে যানবাহনে যাত্রী কিংবা কন্ডাক্টরকে পুরো এক টাকাই ছাড় দিতে হচ্ছে। কারণ এখানে বিনিময়ের কোনো দ্রব্যই নেই।
ঝালকাঠি সোনালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপক সোলায়মান বলেন, বাজারে ১ টাকার কয়েনের কোনো সংকট নেই। এটা দোকানি ও মানুষের সৃষ্ট সমস্যা। কারণ যে কেউ চাইলেই বাণিজ্যিক ব্যাংকের শাখা থেকে ১ টাকার কয়েনসহ খুচরা টাকা সংগ্রহ করতে পারেন।
জানা গেছে, দীর্ঘদিন ধরে ১ টাকার কাগজের নোট ছাপানো বন্ধ আছে। এ পরিপ্রেক্ষিতে চলতি বছরের মার্চের দিকে বাজারে ১ টাকার কাগুজে নোট প্রচলন একেবারে বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। ফলে বাজারে এখন আর ১ টাকার কাগুজে নোট চোখে পড়ে না। এর পরিবর্তে নিয়মিত বাজারে ছাড়া হচ্ছে ১ টাকা মূল্যমানের ধাতব মুদ্রা (কয়েন)। বর্তমানে বাজারে প্রচলিত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানে ছবি সংবলিত ১ টাকার কয়েনটি ছাড়া হয় ২০১০ সালে।
রাষ্ট্রায়ত্ত কৃষি ও সোনালী ব্যাংকে খোঁজ নিয়ে জানাগেছে, ১, ২ ও ৫ টাকার কয়েনের পর্যাপ্ত মজুদ রয়েছে। যে কেউ ব্যাংকের শাখা অফিস থেকে যত খুশি কয়েন সংগ্রহ করতে পারেন। পাশাপাশি দেশের সব বাণিজ্যিক ব্যাংকের শাখায় একই মূল্যমানের কয়েন বিনিময়ের নির্দেশনা দেওয়া আছে। যদিও অনেক সময় ব্যাংকগুলো বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে ভাংতি টাকা নিতে চায় না। এজন্য কর্তৃপক্ষ প্রতিদিনই অন্যান্য নোটের সঙ্গে ভাংতি টাকা নিতে ব্যাংকগুলোকে বাধ্য করে থাকেন। যাতে মানুষ ব্যাংকে গিয়ে চাওয়া মাত্র কয়েন পেতে পারেন।
শুধু তা-ই নয়, ব্যাংকগুলো খুচরা টাকা বিনিময় করছে কিনা, সেটি পর্যবেক্ষণও করা হয়। এসব পর্যবেক্ষণে আমরা দেখেছি, তারাও এ দায়িত্ব এড়ানোর চেষ্টা করে থাকে। বিশ্বের বেশিরভাগ দেশে সর্বনিম্ন মূল্যমানের ধাতব মুদ্রার প্রচলন বেশি হলেও বাংলাদেশ পিছিয়ে রয়েছে। কারণ এখানে সবনিম্ন মূল্যমানের নোটই হলো ১ টাকার কয়েন। তা-ও আবার ঠিকভাবে বিনিময় হয় না, যা দেশ ও অর্থনীতির জন্য ক্ষতি। লেনদেনে ১ টাকা ছাড় দেওয়ার যে চর্চা গড়ে উঠেছে, তা পাল্টানো দরকার। কারণ ১ টাকা করে ছাড় দিতে দিতে অনেক বড় অঙ্ক লেনদেন জিডিপি থেকে হারিয়ে যাচ্ছে। এজন্য দেশ ও অর্থনীতির স্বার্থে প্রত্যেকটি লেনদেনই বিনিময় হওয়া উচিত বলে মনে করেন তিনি।
ভুক্তভোগীরা বলছেন, এখন কেনাকাটা করতে গেলেই খুচরা না থাকার অজুহাতে বিক্রেতারা ১ টাকার বদলে একটি চকোলেট ধরিয়ে দিচ্ছেন। চা, সিগারেট, পানের দোকান, কনফেকশনারি কিংবা সুপার শপ- সবখানেই এ ঘটনা এখন নিত্যনৈমিত্তিক। এর ফলে দোকানি লাভবান হলেও ঠকছেন ক্রেতারা। কারণ ওই চকোলেটের প্রকৃত মূল্য ৩০ থেকে ৪০ পয়সার বেশি নয়। এটি জেনেও বেশিরভাগ ক্রেতাই মুখ বুঝে এ ক্ষতি মেনে নিচ্ছেন। আবার অনেকেই ১ টাকা নিয়ে দোকানির সঙ্গে বাকবিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়ছেন।
শুধু কেনাকাটার ক্ষেত্রেই নয়, যানবাহনে চলাচলের ক্ষেত্রেও ১ টাকার ভাংতি নিয়ে বাসের সুপারভাইজার ও সাধারণ যাত্রীদের মধ্যে বাকবিতণ্ডা এখন নিত্যদিনের ঘটনা। ১ টাকার খুচরা না থাকার অজুহাতে এখানে হয় সুপারভাইজারকে না হয় যাত্রীকে পুরো ১ টাকাই ছাড় দিতে হচ্ছে।
এদিকে ছোট ছেলেমেয়ে থেকে শুরু করে প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যেও কয়েন জমানোর প্রবণতা থাকে। তারা বাঁশের খুঁটি, মাটির ব্যাংক, আলমারি কিংবা বিছানার নীচেও কয়েন জমিয়ে থাকেন। তাছাড়া ইদানিং অনেক ক্ষেত্রে কয়েন গলিয়ে অলঙ্কারও প্রস্তুত করা হচ্ছে। এসব কারণে বাজার থেকে কয়েন উধাও হয়ে যায়।
সাহস২৪ ডটকম-এর প্রকাশিত প্রচারিত কোনো সংবাদ তথ্য, ছবি, রেখাচিত্র, ভিডিও, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
মন্তব্যে প্রকাশিত মত মন্তব্যকারীর একান্তই নিজস্ব। সাহস২৪ ডটকম-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে এসব মন্তব্যের কোনো মিল নাও থাকতে পারে। মন্তব্যকারীর বক্তব্যের বিষয়বস্তু নিয়ে সাহস২৪ ডটকম-এর কর্তৃপক্ষ আইনগত বা অন্য কোনো দায় নেবে না।