লাশ দেখে বোঝা যাচ্ছে না বাংলাদেশি কি না
সৌদি আরবের মিনায় পদদলনের ঘটনায় কত বাংলাদেশি মারা গেছেন, তা জানতে সময় লাগবে। পদপিষ্ট হয়ে অনেক লাশ বিকৃত হয়েছে। নাগরিকত্বের বিষয়ে নিশ্চিত হওয়ার মতো প্রয়োজনীয় তথ্য ও কাগজপত্র পাওয়া যাচ্ছে না। এতে লাশ সঠিকভাবে শনাক্ত করতে সময় লাগছে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশের সৌদি দূতাবাস ও হজ কর্মকর্তারা।
পদদলিত হয়ে এখন পর্যন্ত ৪১ জন বাংলাদেশি হাজির মৃত্যুর কথা সৌদি কর্তৃপক্ষ নিশ্চিত করেছে। যার মধ্যে মাত্র ১৮ জনের পরিচয়ের ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়া গেছে।
এই সংখ্যা বাড়বে বলে জানিয়েছেন সৌদি আরবে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত গোলাম মসিহ। তিনি বলেন, মৃত ব্যক্তিদের মধ্যে বাংলাদেশি হাজি অনেকের পরিচয়ের ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়া যাচ্ছে না। এ জন্য মৃতের সঠিক সংখ্যা এখনই নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না।
বাংলাদেশ দূতাবাস জানিয়েছে, এখনো অন্তত ৫২ জন হাজির কোনো খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না। তাঁদের ভাগ্যে কী ঘটেছে, এ ব্যাপারে নিশ্চিত হতে আরও সময় লাগবে বলে মনে করছেন দূতাবাসের কর্মকর্তারা। পুরো প্রক্রিয়া শেষ হতে ও হতাহত হাজিদের সংখ্যা জানতে আরও দুই সপ্তাহ লেগে যেতে পারে বলে মনে করছেন বাংলাদেশি কর্মকর্তারা।
ধর্ম মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব মো. বোরহানউদ্দিন বলেন, পুরো প্রক্রিয়া শেষ হতে সময় লাগবে বলে মনে হচ্ছে। এ জন্য মক্কায় হজ মিশনের কাজ আরও ৪৫ দিন বাড়াতে মন্ত্রণালয় থেকে আবেদন করা হয়েছে। তিনি মনে করেন, নভেম্বরের শুরুতেই সব কাজ শেষ করা সম্ভব হবে।
গত ২৪ সেপ্টেম্বর হজের শেষ দিকে মিনার ২০৪ নম্বর সড়কের ৮ / ২০৮ নম্বর তাঁবু থেকে ১২ / ২০৪ নম্বর তাঁবু বরাবর সড়কে পদদলিত হয়ে বিভিন্ন দেশের ৭৬৯ জন হাজি মারা যান। আট শতাধিক হাজি আহত হন। ইতিমধ্যে মৃতের তালিকা নিয়ে বিভ্রান্তি তৈরি হয়েছে।
নাম না প্রকাশ করার শর্তে সৌদি আরবে বাংলাদেশের হজ মিশনের একজন কর্মকর্তা বলেন, সৌদি সরকারের দেওয়া তথ্য ছাড়া কোনো দেশের পক্ষে নিজ নিজ সূত্রে তথ্য সংগ্রহ করা সম্ভব নয়। পদদলনের ঘটনার পর দেশটির সরকার কিছুটা ধীরে চলছে বলে মনে করেন ওই কর্মকর্তা।
ওই কর্মকর্তা বলেন, ‘আমরা ৭৬৯ জন হাজির মৃত্যুর কথা জানি। কিন্তু ভারত ও পাকিস্তান দূতাবাসের কাছে নিহত এক হাজার ১০০ হাজির তথ্য দেওয়া হয়েছে। আমরা বিভিন্ন সূত্র থেকে ছবি সংগ্রহ করে বাংলাদেশি হাজিদের ব্যাপারে তথ্য নিচ্ছি। সৌদির দেওয়া তালিকার বাইরে আরও কয়েকটি লাশের ছবি দেখে নিশ্চিত হয়েছি, এরা বাংলাদেশি। তাই ধারণা করছি, বাংলাদেশি হাজিদের মৃতের সংখ্যা ঘোষিত সংখ্যার চেয়ে বাড়বে।’
বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় তাদের সর্বশেষ বিজ্ঞপ্তিতে ৪১ জন হাজির মৃত্যুর সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আরও ৩৩ জন বলে জানিয়েছেন। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিজ্ঞপ্তিতেও হাজির সংখ্যা বাড়ার ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে।
বাংলাদেশ দূতাবাসের একজন কর্মকর্তা বলেন, গত সোমবার রাষ্ট্রদূতসহ বাংলাদেশের একটি প্রতিনিধি দল সৌদি আরবের কেন্দ্রীয় মর্গে যায়। সেখান থেকে খুব বেশি তথ্য তাঁরা পায়নি। নিহত ব্যক্তিদের স্বজনদের আসতে বলা হয়েছে। তাঁরা এসে যেন দ্রুত লাশ চিহ্নিত করে। লাশ চিহ্নিত করার পর দাফনের ব্যাপারে কাজ শুরু করবে সৌদি কর্তৃপক্ষ। ওই কর্মকর্তা বলেন, মর্গের কর্মীরা কাগজপত্র ঘেঁটে ২৬ জন বাংলাদেশি নাগরিকের লাশ মর্গে রয়েছে বলে তথ্য দিয়েছেন। কিন্তু তাঁদের সবার পরিচয় নিশ্চিত করতে লাশ দেখার অনুমতি পাওয়া যায়নি। এতে নিহত ২৬ জনের মধ্যে মাত্র ১৩ জনের পরিচয় জানা গেছে।
মিনার ২০৪ নম্বর সড়কে সাধারণত বাংলাদেশি হাজিরা চলাফেরা করেন না। ওই দিন ৫০ থেকে ৬০ জনের মতো হাজিকে হাঁটতে দেখেছিলেন আক্কাস আলী নামের একজন বাংলাদেশি হাজি। শয়তানের উদ্দেশে পাথর ছুড়তে অন্য হাজিদের সঙ্গে তিনিও যাচ্ছিলেন।
আক্কাস আলী বলেন, ওই দিনের ঘটনায় তিনি আহত হন। তবে বেঁচে ফিরেছেন। তিনি বলেন, যেসব বাংলাদেশিকে তিনি হাঁটতে দেখেছিলেন, এর মধ্যে অনেক হাজিকে পরে আর খুঁজে পাননি। কয়েকজনকে দেখেছেন, কথাও বলেছেন।
সাহস২৪ ডটকম-এর প্রকাশিত প্রচারিত কোনো সংবাদ তথ্য, ছবি, রেখাচিত্র, ভিডিও, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
মন্তব্যে প্রকাশিত মত মন্তব্যকারীর একান্তই নিজস্ব। সাহস২৪ ডটকম-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে এসব মন্তব্যের কোনো মিল নাও থাকতে পারে। মন্তব্যকারীর বক্তব্যের বিষয়বস্তু নিয়ে সাহস২৪ ডটকম-এর কর্তৃপক্ষ আইনগত বা অন্য কোনো দায় নেবে না।