জঙ্গিবাদের উর্বর ক্ষেত্রে পরিণত হচ্ছে দেশ!
যুক্তরাজ্য ও অস্ট্রেলিয়ার পর কানাডাও তাদের নাগরিকদের বাংলাদেশ ভ্রমণের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বনের পরামর্শ দিয়েছে। ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাস তার নাগরিকদের বাংলাদেশে অবস্থানকালে সতর্কতা অবলম্বনের পরামর্শ দিয়েছে। সেই সাথে বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে ঢাকায় আমেরিকান ক্লাব ও আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল স্কুল।
এদিকে ঢাকায় ইতালীয় এক নাগরিককে হত্যা, আইএসের হত্যার দায় স্বীকার এবং অব্যাহত হুমকি নিয়ে বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রাখার কথা জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর। উগ্রপন্থার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে বাংলাদেশকে তারা একটি শক্তিশালী আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক অংশীদার মনে করে বলে মঙ্গলবার (২৯ সেপ্টেম্বর) পররাষ্ট্র দপ্তরের এক বিবৃতিতে বলা হয়।
যদিও মধ্যপ্রাচ্যের জঙ্গিগোষ্ঠী ইসলামিক স্টেট (আইএস) ওই হত্যাকান্ডের দায় স্বীকার করেছে বলে জঙ্গি হুমকি পর্যবেক্ষণকারী সংস্থাটি জানালেও বাংলাদেশে এই গোষ্ঠীর তৎপরতার কথা নাকচ করে দয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।
এই হত্যাকান্ডের সম্পর্কে অবগত থাকার কথা জানিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর বলেছে, নিহতের পরিবার ও বন্ধুবান্ধব এবং ইতালির প্রতি আমরা গভীর সমবেদনা জানাচ্ছি।
এর আগে বাংলাদেশসহ দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোয় মার্কিন স্বার্থের ওপর জঙ্গি হামলার সম্ভাব্য পরিকল্পনার তথ্য পাওয়ার কথা জানিয়ে যুক্তরাষ্ট্রও তাদের নাগরিকদের সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছিল।
ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাস সোমবার (২৭ সেপ্টেম্বর) হালনাগাদ করা বার্তায় তাদের নাগরিকদের বলেছে, বাংলাদেশে জঙ্গিরা অস্ট্রেলিয়ার স্বার্থে আঘাত হানতে পারে বলে নতুন তথ্য তারা পেয়েছে। এ ধরনের হামলা হলে যুক্তরাষ্ট্রসহ অন্যান্য দেশের নাগরিকরাও ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারেন।
বার্তায় বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্র সরকার যেসব নতুন তথ্য পাচ্ছে তাতে ধারণা করা যায় দক্ষিণ এশিয়ার জঙ্গি দলগুলো এই অঞ্চলের মার্কিন স্থাপনা, মার্কিন নাগরিক ও মার্কিন স্বার্থের ওপর হামলার পরিকল্পনা করে থাকতে পারে। তাই পরবর্তী নির্দেশনা না দেয়া পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রের সব কর্মকর্তা-কর্মচারীকে তাদের আঞ্চলিক নিরাপত্তা দপ্তরের অনুমতি ছাড়া বাংলাদেশে বড় ধরনের কোন জমায়েত বা আন্তর্জাতিক হোটেলে আয়োজিত অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ থেকে বিরত থাকতে বলা হয়েছে।
এদিকে বাংলাদেশে অবস্থানরত যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকদেরও একই পরামর্শ দিয়ে রেস্তোরাঁ, হোটেলসহ সব জনসমাগমস্থলে চলাফেরার ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ মাত্রার সতর্কতা অবলম্বন করতে বলেছে মার্কিন দূতাবাস।
নিরাপত্তা ঝুকির কথা জানিয়ে অস্ট্রেলিয়া ক্রিকেট দল গত শনিবার বাংলাদেশ সফর পিছিয়ে দিলে হঠাৎ করেই জঙ্গি হামলার প্রসঙ্গটি সামনে আসে। তার আগের দিন অস্ট্রেলিয়ার ডিপার্টমেন্ট অব ফরেন অ্যাফেয়ার্স অ্যান্ড ট্রেড (ডিএফএটি) বাংলাদেশে ভ্রমণের বিষয়ে সতর্কতা জারি করে এক বার্তায় তাদের নাগরিকদের জানায়, জঙ্গিরা বাংলাদেশে অস্ট্রেলিয়ার স্বার্থের ওপর আঘাত হানার পরিকল্পনা করছে এমন তথ্য তাদের হাতে রয়েছে।
এরপর ক্রিকেটে অস্ট্রেলিয়ার নিরাপত্তাপ্রধান শন ক্যারল নিরাপত্তা পরিস্থিতি ও পরিকল্পনা খতিয়ে দেখতে বাংলাদেশে আসেন এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের সঙ্গে বৈঠক করেন। তাকে আশ্বস্ত করে বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়, জঙ্গি হামলার আশঙ্কার বিষয়টি ভিত্তিহীন, বাংলাদেশে অস্ট্রেলীয় ক্রিকেটাররা সম্পূর্ণ নিরাপত্তা পাবে।
এর মধ্যেই সোমবার সন্ধ্যায় ঢাকার কূটনীতিকপাড়া গুলশানে তাবেলা সিজার নামে এক ইতালীয় নাগরিককে গুলি করে হত্যা করা হয়। এবং রাতেই ইসলামিক স্টেট (আইএস) ওই হত্যাকান্ডের দায় স্বীকার করেছে বলে সাইট ইন্টেলিজেন্স নামের একটি ওয়েবসাইট এ তথ্য দেয়। যারা জঙ্গি হুমকি পর্যবেক্ষণ করে থাকে।
এরই মধ্যে অস্ট্রেলিয়ার পদাঙ্ক অনুসরণ করে যুক্তরাজ্য সরকারও বাংলাদেশে তাদের নাগরিকদের চলাফেরা সীমিত করে আনার পরামর্শ দিয়েছে। যুক্তরাজ্য বলেছে, বাংলাদেশে জঙ্গিরা পশ্চিমা স্বার্থের ওপর আঘাত হানতে পারে বলে তথ্য রয়েছে তাদের কাছে।
জঙ্গিদের কাছ থেকে হুমকিও রয়েছে। সেপ্টেম্বরের শেষদিকে বাংলাদেশে পশ্চিমা স্বার্থের ওপর জঙ্গিদের আঘাত হানার পরিকল্পনার নির্ভরযোগ্য তথ্যও রয়েছে তাদের কাছে।
ঢাকা মহানগর পুলিশের যুগ্ম কমিশনার মনিরুল ইসলাম বলেন, বাংলাদেশের পুলিশের কাছে এ ধরনের কোনো তথ্য যে নেই তা অস্ট্রেলিয়ার সতর্কতা জারির পরদিনই তারা জানিয়েছিলেন । সেদিন তিনি বলেছিলেন, ঢাকা মহানগর পুলিশের কাছে এমন কোন তথ্য নেই। কোন দূতাবাস থেকেও আমাদের কিছু জানানো হয়নি। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালও অস্ট্রেলিয়ার আশঙ্কা ভিত্তিহীন বলে উড়িয়ে দেন।
ধর্মীয় উগ্রপন্থী তৎপরতার অভিযোগে বাংলাদেশে গত কয়েক বছরে কয়েক’শ ব্যক্তিকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী গ্রেপ্তার করেছে। তাদের সঙ্গে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক জঙ্গি দলের যোগসাজেসের কথাও পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে। তবে বড় কোনো জঙ্গি হামলার ঘটনা সাম্প্রতিক সময়ে দেশে ঘটেনি।
বিএনপি-জামায়াত জোট আমলে বাংলাদেশে ধর্মীয় উগ্রপন্থীদের বিস্তার ঘটে। বাংলাদেশ জঙ্গিবাদের উর্বর একটি ক্ষেত্রে পরিণত হচ্ছে বলে কথা ওঠে আন্তর্জাতিক পর্যায়েও।
সারাদেশে ধারাবাহিক বোমা হামলা চালানোর জন্য দায়ী দল জেএমবি পরবর্তীতে র্যাব-পুলিশের কঠোর অবস্থানের কারণে সাংগঠনিকভাবে দুর্বল হয়ে পরে। জনমনে আতঙ্কও অনেকটা কমে যায়।
গত দুই বছরে একের পর এক ব্লগার হত্যাকান্ডের ঘটনায় বার বার জঙ্গিগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে অভিযোগের উঠেছে, পুলিশও জোরের সঙ্গে উগ্রপন্থীদের সংশ্লিষ্টতার সন্দেহের কথা জানিয়েছে। তবে বাংলাদেশে বিদেশি কোনো নাগরিক জঙ্গি হামলায় খুন হওয়ার অভিযোগ এর আগে কখনো ওঠেনি। তাই পর্যবেক্ষক ও বিশ্লেষকদের অভিমত বিষয়টিকে সরকারের অত্যন্ত গুরুত্তের সহিত একটি বিশ্লেষনমূলক সমাধানের পথে পৌছানো উচিৎ।
সাহস২৪ ডটকম-এর প্রকাশিত প্রচারিত কোনো সংবাদ তথ্য, ছবি, রেখাচিত্র, ভিডিও, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
মন্তব্যে প্রকাশিত মত মন্তব্যকারীর একান্তই নিজস্ব। সাহস২৪ ডটকম-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে এসব মন্তব্যের কোনো মিল নাও থাকতে পারে। মন্তব্যকারীর বক্তব্যের বিষয়বস্তু নিয়ে সাহস২৪ ডটকম-এর কর্তৃপক্ষ আইনগত বা অন্য কোনো দায় নেবে না।