- হোম
- >
- আইন-মানবাধিকার
- >
- মুজাহিদ ও সাকার ফাঁসি যেভাবে কার্যকর হবে
মুজাহিদ ও সাকার ফাঁসি যেভাবে কার্যকর হবে
একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে মৃত্যুদণ্ডাদেশপ্রাপ্ত জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ ও বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর আপিল মামলার পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশের পর বুধবার (৩০ সেপ্টেম্বর) অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেন, পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশের দিন থেকেই ১৫ দিনের মধ্যে রায় পুনর্বিবেচনার (রিভিউ) আবেদন করতে পারবেন মুজাহিদ ও সাকা চৌধুরী। রাষ্ট্র এ রিভিউ আবেদনের জন্য বসে থাকবে না, দণ্ড কার্যকরের প্রক্রিয়া এগিয়ে নিয়ে যাবে। তবে আসামিরা রিভিউ করলে দণ্ড কার্যকর প্রক্রিয়া স্থগিত থাকবে।
দুপুরে মুজাহিদের ১৯১ পৃষ্ঠার এবং সাকা চৌধুরীর ২১৭ পৃষ্ঠার এ পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ করেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। এর আগে রায়ে স্বাক্ষর করেন প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহাসহ আপিল মামলার রায় প্রদানকারী চার বিচারপতি। অন্য বিচারপতিরা হচ্ছেন, বিচারপতি নাজমুন আরা সুলতানা, বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন ও বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী।
এর পরই নিজ কার্যালয়ে প্রেস ব্রিফিংয়ে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম জানান, রায় কার্যকর করতে আর মাত্র তিনটি ধাপ অতিক্রম করতে হবে তাদের।
এর মধ্যে প্রথম ধাপে পূর্ণাঙ্গ রায়টি বিচারিক আদালত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে পাঠাবেন আপিল বিভাগ। ট্রাইব্যুনাল মৃত্যু পরোয়ানা জারি করবেন।
দ্বিতীয় পর্যায়ে পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশের দিন থেকে ১৫ দিনের মধ্যে রায় পুর্নবিবেচনার (রিভিউ) আবেদন করতে পারবেন আসামিরা। সর্বোচ্চ আদালত এ রিভিউ আবেদন খারিজ করে দিলে চূড়ান্ত ও শেষ পর্যায়ে রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষা চাইতে পারবেন আসামিরা।
মাহবুবে আলম বলেন, আইন অসুসারে পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশের পর থেকেই দণ্ড কার্যকরে উদ্যোগ নিতে পারবে রাষ্ট্র। আর আপিল বিভাগের দেওয়া সময় অনুসারে রায় পুনর্বিবেচনার আবেদনের জন্য ১৫ দিন সময় পাবেন আসামিপক্ষ। যখনই পুনর্বিবেচনার আবেদন করবেন তারা, তখনই মৃত্যু পরোয়ানা ও দণ্ড কার্যকর প্রক্রিয়া স্থগিত থাকবে।
আসামিপক্ষের প্রধান আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন বুধবার (৩০ সেপ্টেম্বর) রায় প্রকাশের পরে বলেন, তারা রায় পুনর্বিবেচনার জন্য আবেদন করবেন। তবে রায় প্রকাশের দিন থেকে নয়, পূর্ণাঙ্গ রায়ের সত্যায়িত অনুলিপি পাওয়ার পর থেকে ১৫ দিনের সময় পাবেন বলে দাবি করেন তিনি।
এদিকে অ্যাটর্নি জেনারেল জানান, যদি পুনর্বিবেচনার আবেদন খারিজ হয়ে যায় তাহলে শুধু রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষার ধাপটি থাকবে। আর আসামি যদি ক্ষমা না চান তাহলে যেকোনো সময় রাষ্ট্র দণ্ড কার্যকর করতে পারবে।
আইনজীবীদের মতে, এ ক্ষেত্রে উদাহরণ হিসেবে সামনে রয়েছে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মুহাম্মদ কামারুজ্জামানের ফাঁসির দণ্ড কার্যকরের প্রক্রিয়া।
গত বছরের ৩ নভেম্বর আপিল মামলার চূড়ান্ত রায়ে কামারুজ্জামানকে দেওয়া ট্রাইব্যুনালের মৃত্যুদণ্ডাদেশ বহাল রাখেন আপিল বিভাগ। ওই দিন সংক্ষিপ্ত আদেশ দেন সর্বোচ্চ আদালত। চলতি বছরের ১৮ ফেব্রুয়ারি রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি প্রকাশ পায়। এরপর ট্রাইব্যুনাল কামারুজ্জামানের মৃত্যু পরোয়ানা জারি করলে আসামির আইনজীবীরা ৫ মার্চ রিভিউ আবেদন করেন। সে সময় সেই পরোয়ানার কার্যকারিতা স্থগিত হয়ে যায়।
এদিকে তখন সুপ্রিম কোর্টের অবকাশকালীন ছুটির প্রাক্কালে (১৭-৩১ মার্চ) কামারুজ্জামানের পক্ষে করা সময়ের আবেদনের প্রেক্ষিতে ১ এপ্রিল শুনানির জন্য দিন ধার্য করেন আপিল বিভাগ। শুনানি শেষে ৬ এপ্রিল তার রিভিউ আবেদন খারিজ করে দেন আপিল বিভাগ।
রিভিউ খারিজের পর প্রাণভিক্ষা না চাওয়াতে গত ১১ এপ্রিল রাতে কামারুজ্জামানের ফাঁসির রায় কার্যকর করা হয়।
এর আগে ২০১৩ সালের ১২ ডিসেম্বর রাতে কার্যকর করা হয়েছিল জামায়াতের অপর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আব্দুল কাদের মোল্লার ফাঁসি।
কাদের মোল্লার মামলার চূড়ান্ত নিষ্পত্তি হয় ২০১৩ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর। ওই দিন ৬টি মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে তাকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। ৬টির মধ্যে ৫টি অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে উল্লেখ করে ট্রাইব্যুনাল-২ এর ২০১৩ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি দেওয়া যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের সাজা বাড়িয়ে চূড়ান্ত এ রায় প্রদান করেন সর্বোচ্চ আদালত।
২০১৩ সালের ৫ ডিসেম্বর পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হয় এবং ১২ ডিসেম্বর রাতে কার্যকর করা হয় কাদের মোল্লার ফাঁসি।
এ সময়কালের মধ্যে অবশ্য বিতর্ক তৈরি হয়েছিল, তিনি চূড়ান্ত রায়ের বিরুদ্ধে রিভিউ করতে পারবেন কি না। এ কারণে কাদের মোল্লার ফাঁসি কার্যকরের সময় ১০ ডিসেম্বর রাতে নির্ধারিত হলেও মাত্র দু’ঘণ্টা আগে তার আইনজীবীরা দু’টি আবেদন করেন।
এর একটি আবেদনে ওই রায় পুনর্বিবেচনার আবেদন করা হয় এবং দ্বিতীয় আবেদনে রায় পুনর্বিবেচনা করে কাদের মোল্লার খালাসের আবেদন করা হয়। সর্বোচ্চ আদালত এসব আবেদন খারিজ করে দিলে তার ফাঁসির দণ্ড কার্যকর করা হয়।
কিন্তু রিভিউ গ্রহণ ও খালাসের আবেদন একত্রে খারিজ হওয়ায় এ ধরনের মামলায় রিভিউ আদৌ চলবে কি না, সে অস্পষ্টতা থেকে যায়।
রিভিউয়ের এ পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হয় গত বছরের ২৫ নভেম্বর। এতে যুদ্ধাপরাধের মামলাতেও সর্বোচ্চ আদালতের দেওয়া রায় পুনর্বিবেচনার (রিভিউ) জন্য আবেদন করা যাবে বলে স্পষ্ট উল্লেখ করে দেন আপিল বিভাগ। ফলে কামারুজ্জামান রিভিউয়ের আবেদন করার সুযোগ পান।
অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলমের মতে, ওই রিভিউ রায়ের আলোকেই সাকা চৌধুরী ও মুজাহিদসহ অন্য সাজাপ্রাপ্তরাও তাদের দণ্ডাদেশের রিভিউয়ের আবেদন করতে পারবেন। একইভাবে জামায়াতের নায়েবে আমির দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর দণ্ড কমিয়ে আপিল বিভাগের দেওয়া যাবজ্জীবন সাজার চূড়ান্ত রায়ের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষও রিভিউ আবেদন করতে পারবেন।
সাহস২৪ ডটকম-এর প্রকাশিত প্রচারিত কোনো সংবাদ তথ্য, ছবি, রেখাচিত্র, ভিডিও, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
মন্তব্যে প্রকাশিত মত মন্তব্যকারীর একান্তই নিজস্ব। সাহস২৪ ডটকম-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে এসব মন্তব্যের কোনো মিল নাও থাকতে পারে। মন্তব্যকারীর বক্তব্যের বিষয়বস্তু নিয়ে সাহস২৪ ডটকম-এর কর্তৃপক্ষ আইনগত বা অন্য কোনো দায় নেবে না।