বাংলাদেশে পশ্চিমা স্বার্থের ওপর জঙ্গি হামলা হতে পারে, এমন আশঙ্কায় ঢাকায় কর্মরত বিদেশি কূটনীতিকরা তাদের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বিগ্ন।

গতকাল মঙ্গলবার (২৯ সেপ্টেম্বর) সকালে ঢাকায় যুক্তরাজ্যের হাইকমিশনার ও কূটনৈতিক কোরের ডিন রবার্ট গিবসনের বাসায় এক বৈঠকে কূটনীতিকেরা এই উদ্বেগ প্রকাশ করেন। তাঁরা খুব শিগগিরই বাংলাদেশ সরকারের কাছ থেকে সার্বিক পরিস্থিতি সম্পর্কে জানতে চাইবেন বলে একটি সূত্র জানায়।

এদিকে সোমবার (২৮ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় গুলশানে ইতালির নাগরিক তাবেলা সিজারকে হত্যার পর গতকাল ঢাকায় মার্কিন দূতাবাসে ছুটি ঘোষণা করা হয়। আমেরিকান ক্লাব সাময়িকভাবে বন্ধ ঘোষণা করে। আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল স্কুলও গতকাল বন্ধ ছিল। গতকাল দ্বিতীয় দিনের মতো ভ্রমণসংক্রান্ত সকল বার্তা হালনাগাদ করেছে মার্কিন দূতাবাস। এতে মার্কিন সরকারি কর্মকর্তা ও তাঁদের পরিবারের সদস্যদের সীমিতভাবে চলাফেরা করার পরামর্শ দেওয়া হয়। আর যুক্তরাজ্যও গতকাল তাদের ভ্রমণবিষয়ক বার্তা হালনাগাদ করে জানিয়েছে, ঢাকায় ইতালির নাগরিককে হত্যার দায় স্বীকার করেছে আইএস।

সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসেবে ঢাকার বেশ কয়েকটি ইন্টারন্যাশনাল স্কুল ও বিদেশী ক্লাব গতকাল বন্ধ ছিল।

ঢাকার অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ড কমিউনিটি তাদের আগামী শুক্রবার অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া গ্লিটার পার্টি স্থগিত করেছে। একটি পাঁচ তারা হোটেলে এই অনুষ্ঠানে দেশি-বিদেশি প্রায় ৪০০ অতিথির অংশগ্রহনের কথা ছিল। আয়োজকদের পক্ষ থেকে জানানো হয়, ১৯৮০ সাল থেকে প্রতিবছরই অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ড কমিউনিটি ঢাকায় এই গ্লিটার পার্টির আয়োজন করে আসছে। এবার নিরাপত্তাজনিত কারনে এটি স্থগিত করা হয়েছে। হোটেল কর্তৃপক্ষও অনুষ্ঠান স্থগিতের বিষয়টি নিশ্চিত করেন।

গতকাল সকালে যুক্তরাজ্যের হাইকমিশনারের বাসায় অনুষ্ঠিত বৈঠকে ঢাকায় কর্মরত প্রায় সব দেশের কূটনৈতিকেরাই অংশ নেন।

কূটনৈতিক সূত্রে জানা যায়, থাইল্যান্ডের বিদায়ী রাষ্ট্রদূত ও তুরস্কের নতুন রাষ্ট্রদূতের সম্মানে চা–চক্র হিসেবে এ বৈঠকটি পূর্বনির্ধারিত ছিল। তবে প্রাসঙ্গিকভাবে বৈঠকে আলোচনা হয় বাংলাদেশের নিরাপত্তা পরিস্থিতি নিয়ে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে মিসরের রাষ্ট্রদূত মাহমুদ ইজ্জাত বলেন, আলোচনার একপর্যায়ে আমরা কূটনৈতিক কোরের ডিনকে বাংলাদেশ সরকারের কাছে একটি চিঠি লিখতে অনুরোধ জানাই। ২৮ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় ইতালির নাগরিক হত্যার যে ঘটনা ঘটেছে তার আসল কারণ কী, তা জানাতে অনুরোধ জানানো হবে এই চিঠিতে। একই সঙ্গে কূটনৈতিক এলাকায় নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদারেরও অনুরোধ জানানো হবে।

তিনি বলেন, সামগ্রিকভাবে নিরাপত্তা পরিস্থিতি নিয়ে শিগগিরই আমরা সরকারের কাছে ব্রিফিং শুনতে চাই। এ বিষয়গুলো উল্লেখ করে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠানোর প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।

এক প্রশ্নের উত্তরে মিসরের রাষ্ট্রদূত বলেন, এক ঘণ্টারও বেশি সময়ের ওই আলোচনার প্রায় শেষের দিকে পৌঁছান ঢাকায় অস্ট্রেলিয়ার হাইকমিশনার গ্রেগ উইলকক।

সকালের ওই বৈঠকের পর দুপুরে ভারপ্রাপ্ত পররাষ্ট্রসচিব রিয়ার অ্যাডমিরাল (অব.) ম. খুরশেদ আলমের সঙ্গে তাঁর দপ্তরে দেখা করেন ঢাকায় ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) রাষ্ট্রদূত পিয়েরে মায়াদু। তাঁরা আসন্ন বাংলাদেশ-ইইউ যৌথ কমিশনের বৈঠকসহ দ্বিপক্ষীয় বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনার একপর্যায়ে ইতালীয় নাগরিক তাবেলা সিজার হত্যাকাণ্ড ও বাংলাদেশের নিরাপত্তা পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করেন। এ সময় পিয়েরে মায়াদু বাংলাদেশের পক্ষ থেকে একটি ব্রিফিংয়ের অনুরোধ জানিয়ে সরকারকে চিঠি পাঠানোর পরিকল্পনার কথাও জানান বলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে।

অপরদিকে বাংলাদেশে জঙ্গি হামলার আশঙ্কা জানিয়ে অস্ট্রেলিয়া, যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের পর এবার কানাডা তাদের ভ্রমণবিষয়ক বার্তা হালনাগাদ করেছে। গতকাল কানাডিয়ান হাইকমিশনের ফেসবুক অ্যাকাউন্টে এ বার্তার কথা উল্লেখ করেছে।

এতে বলা হয়, সেপ্টেম্বরের শেষে পশ্চিমা স্বার্থে জঙ্গিরা হামলা চালাতে পারে। নির্ভরযোগ্য তথ্যের বরাত দিয়ে অস্ট্রেলিয়া ও যুক্তরাজ্য সরকার বাংলাদেশে তাদের নাগরিকদের সতর্ক করেছে। হামলার আশঙ্কা উড়িয়ে দেওয়া যায় না এবং ওই হামলা নির্বিচারে চলতে পারে। সন্ত্রাসী হামলা যেকোনো সময় ঘটতে পারে। বিদেশি নাগরিক ও বিদেশি পর্যটকরা চলাচল করে এমন জায়গাই হামলার লক্ষ্যবস্তু হতে পারে।

ঢাকার একাধিক কূটনৈতিক সূত্র জানিয়েছে, ভ্রমণবিষয়ক বার্তা হালনাগাদ করার আগে পশ্চিমা একটি দেশ গত সোমবার দুপুরে বাংলাদেশ সরকারকে অবগত করেছিল। তারা জানায় যে, ভ্রমণবিষয়ক বার্তাগুলো সে সব দেশের রাজধানী থেকে হালনাগাদ করা হয়।

গতকাল ব্রাসেলসে ইইউর সদর দপ্তর থেকে একটি বিবৃতিতে তাবেলা সিজারকে হত্যার ঘটনায় শোক ও নিন্দা জানানো হয়। ইইউর মুখপাত্র বলেন, ওই হত্যায় জড়িত ব্যক্তিদের অবশ্যই বিচার করতে হবে।