কক্সবাজার বীচে নিরাপদে গোসল নিয়ে উদ্বেগ কাটেনি
গত শনিবার (২৬ সেপ্টেম্বর) দুপুরে কক্সবাজার সৈকতের কলাতলী পয়েন্টে বীচে গোসল করতে গিয়ে তাসমিন আকতার ও মিনা আকতার নামের দুই শিশুর পানিতে ডুবে মৃত্যু হয়। আর গতকাল রোববার পালিত হলো বিশ্ব পর্যটন দিবস।
অথচ কয়েক বছর ধরেই কক্সবাজার সমুদ্রে নিরাপদে গোসল করা নিয়ে পর্যটকদের উদ্বেগ বাড়েই যাচেছ।
এর আগে গত জুন ও জুলাই মাসে কক্সবাজার সমু্দ্র সৈকতে গোসল করতে গিয়ে চারজন পর্যটকের মৃত্যু হয়। নিহত শিশু তাসমিন আকতারের (১২) বাবা কক্সবাজার শহরের কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল এলাকার বাসিন্দা লোকমান হাকিম।
তিনি বলেন, এই সমুদ্রকে কেন্দ্র করে বছরে হাজার হাজার কোটি টাকার ব্যবসা হয়। তারপরও সমুদ্রে নেমে গোসল শেষে ফিরে আসার কোন নিশ্চয়তা নেই। সেদিন তাসমিনের সঙ্গে ডুবে মারা গেছে তার খালাতো বোন মিনা আকতার (১৩)।
সমুদ্রে গোসলে নামা নিখোঁজ পর্যটকদের উদ্ধার তৎপরতায় নিয়োজিত ইয়াছির লাইফ গার্ড স্টেশনের পরিচালক ও নৌবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত ডুবুরি মোস্তফা কামাল বলেন, সমুদ্রের কোথাও নিরাপদে গোসলের কোন ব্যবস্থা নেই। গত ১১ বছরে সমুদ্রে গোসলে নেমে মারা গেছেন ৭৮ জন পর্যটক। মুমূর্ষাবস্থায় উদ্ধার করা হয়েছে তিন হাজারেরও বেশি পর্যটককে।
ঈদের ছুটি কাটাতে বিশ্বের এই দীর্ঘতম সৈকতে দলে দলে পর্যটক ছুটে এলেও পাথুরে সৈকত ইনানী, হিমছড়ি, দরিয়ানগর, টেকনাফ ও সেন্ট মার্টিনে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে গোসলে নামছেন পর্যটকেরা। এসব সৈকতে গোসলে নেমে কেউ নিখোঁজ হলে উদ্ধার করার মতো কেউ নেই।
ট্যুরিস্ট পুলিশ কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোঃ আলমগীর হোসেন বলেন, ভাটার সময় গোসল করতে না নামতে সৈকতের বিভিন্ন অংশে লাল নিশানা উড়ানো হলেও পর্যটেকদের অনেকেই নিষেধাজ্ঞার বিষয়টি মানতে চান না। ফলে দুর্ঘটনার ঝুঁকি বেড়ে যায়।
এ ব্যাপারে কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক অনুপম সাহা বলেন, সৈকতের লাবণী পয়েন্টকে সুইমিং জোন ঘোষণা করা হয়েছে। এখানে জোয়ার-ভাটা হিসাব করে পর্যটকদের গোসলে নামার কথা। কিন্তু নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে গোসলে নেমে অনেকে বিপদে পড়ছেন। সুইমিং জোনের কিছু এলাকা লোহার নেট দিয়ে ঘিরে পর্যটকদের নিরাপদ গোসলের ব্যবস্থা তৈরির চেষ্টা চলছে।
এদিকে বিশ্ব পর্যটন দিবস উপলক্ষে গতকাল সকালে কক্সবাজার সাংস্কৃতিক কেন্দ্র থেকে শোভাযাত্রা বের করে শোভাযাত্রাটি সাগরে লাবণী পয়েন্টে গিয়ে শেষ হয়। সেখানে সাগরে পরিচ্ছন্নতা অভিযান, পর্যটকদের মধ্যে ফুল বিতরণ ও সংক্ষিপ্ত আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়।
এতে বক্তব্য দেন কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মোঃ আলী হোসেন, ট্যুরিস্ট পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোঃ আলমগীর হোসেন, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক অনুপম সাহা, পৌরসভার মেয়র সরওয়ার কামাল, কক্সবাজার হোটেল মোটেল গেস্ট হাউস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবুল কাশেম সিকদার।
আবুল কাশেম সিকদার বলেন, ঈদের দ্বিতীয় দিন থেকে কক্সবাজারে দেড় লাখ পর্যটকের সমাগম হয়েছে এখানে। আগামী ১০ অক্টোবর পর্যন্ত পর্যটকের এই সমাগম থাকবে।
গতকাল বিকেলে সাগরে লাবণী পয়েন্টে গিয়ে দেখা যায়, হাজার হাজার পর্যটকে ভরপুর সাগরের এই এলাকা। পর্যটকদের ছবি তোলার কাজ করা রহিম নামের একজন আলোকচিত্রী বলেন, আগে রাত ১০টার পর সাগরে পর্যটকেরা থাকতে পারতেন না। এখন ট্যুরিস্ট পুলিশ নিরাপত্তা দেওয়ায় ভোর পর্যন্ত পর্যটকেরা সাগরে অবস্থান করতে পারেন। এতে তাঁর আয় বেড়েছে।
রাজশাহী থেকে আসা পর্যটক ছিদ্দিকুল ইসলাম বলেন, ঈদের ছুটির কয়েকটা দিন বেড়াতে ছেলেমেয়েদের নিয়ে এখানে এসেছি। কিন্তু নিরাপদ গোসলের ব্যবস্থা না থাকায় সমুদ্রে নামতে পারিনি। গত শনিবার নাকি দুই শিশু ভেসে গেছে।
ঢাকার মগবাজারের ব্যবসায়ী সাকিল আহমদ বলেন, এত মানুষের সমাগম ঘটবে তা ভাবিনি। পর্যটকদের কয়েক দিন ধরে রাখার মতো বিনোদনের কিছু নেই।
কক্সবাজার হোটেল মোটেল গেস্ট হাউস মালিক সমিতির সভাপতি ওমর সোলতান বলেন, শহরের চার শতাধিক হোটেল মোটেলে ৩০ থেকে ৫০ শতাংশ পর্যন্ত ছাড়ে কক্ষ ভাড়া নিতে পারছেন পর্যটকদেরা। এই সুবিধা ডিসেম্বর পর্যন্ত থাকবে।
কক্সবাজার ট্যুরিস্ট পুলিশ সূত্র জানায়, বিপুলসংখ্যক পর্যটককে সামাল দিতে তাদের হিমশিম খেতে হচ্ছে। সৈকতের শৈবাল, লাবণী, সুগন্ধা ও কলাতলী পয়েন্টে ভ্রমণে আসা পর্যটকদের দিনরাত ২৪ ঘণ্টা নিরাপত্তা দিচ্ছে ট্যুরিস্ট পুলিশ। কলাতলী থেকে মেরিন ড্রাইভ সড়ক ধরে রাত ১০টা পর্যন্ত পর্যটকেরা হিমছড়ি, দরিয়ানগর, ইনানী সৈকত ভ্রমণের সুবিধা পাচ্ছেন।
সাহস২৪ ডটকম-এর প্রকাশিত প্রচারিত কোনো সংবাদ তথ্য, ছবি, রেখাচিত্র, ভিডিও, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
মন্তব্যে প্রকাশিত মত মন্তব্যকারীর একান্তই নিজস্ব। সাহস২৪ ডটকম-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে এসব মন্তব্যের কোনো মিল নাও থাকতে পারে। মন্তব্যকারীর বক্তব্যের বিষয়বস্তু নিয়ে সাহস২৪ ডটকম-এর কর্তৃপক্ষ আইনগত বা অন্য কোনো দায় নেবে না।