নতুন টাকা সংগ্রহের ভোগান্তির অবসান
বাংলাদেশ ব্যাংকের মতিঝিল শাখায় পরীক্ষামূলকভাবে প্রথমবারের মতো নতুন টাকার নোট বিতরণে আঙুলের ছাপ নেওয়ার পদ্ধতি চালু করা হয়েছে। গতকাল সোমবার নতুন টাকা নিতে আসা গ্রাহকদের আঙুলের ছাপ নেওয়া হচ্ছে l লাইনে দাঁড়িয়ে মাত্র ১৩-১৪ মিনিটের মধ্যেই নির্দিষ্ট যন্ত্রের কাছে পৌঁছা গেল। হাতের ছাপ দিতেই মুহূর্তে যন্ত্র থেকে বেরিয়ে এল টোকেন। তারপর টাকাসহ টোকেনটি কাউন্টারে জমা দিতেই হাতে চলে এল সমপরিমাণ টাকার চকচকে নোট।
পুরো প্রক্রিয়াটি শেষ হতে সময় লাগল মাত্র ১৭ মিনিট। ঈদ উপলক্ষে নতুন নোট বিতরণে বাংলাদেশ ব্যাংকের মতিঝিল শাখায় বায়োমেট্রিক বা আঙুলের ছাপ পদ্ধতি চালু করা হয়েছে। পরীক্ষামূলকভাবে চালু করা এই পদ্ধতিতে প্রত্যেক গ্রাহক একবার ২, ৫, ১০ ও ২০ টাকার নতুন নোট এক বান্ডিল বা ১০০টি করে নিতে পারছেন। দ্বিতীয়বার নিতে গেলেই যন্ত্রের মাধ্যমে ধরা পড়ছে। এতে সাধারণ মানুষের সময় কম লাগছে। তবে দালাল চক্র সক্রিয় আছে। তারা নতুন নোট সংগ্রহে কৌশল পাল্টেছে। সে জন্য বাংলাদেশের ব্যাংকের সামনে অল্প কিছু অর্থ খরচ করলেই পাওয়া যাচ্ছে যেকোনো মূল্যমানের নতুন নোট।
বাংলাদেশ ব্যাংক এবার ২৫ হাজার কোটি টাকার নতুন নোট বিতরণ করবে। সারা দেশে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কার্যালয়ের পাশাপাশি বিভিন্ন বাণিজ্যিক ব্যাংকের শাখা থেকে এই নোট গ্রাহকেরা কাল বুধবার পর্যন্ত নিতে পারবেন।
ঈদুল আজহা উপলক্ষে বাংলাদেশ ব্যাংক এবার ২৫ হাজার কোটি টাকার নতুন নোট বিতরণ করবে। সারা দেশে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কার্যালয়ের পাশাপাশি বিভিন্ন বাণিজ্যিক ব্যাংকের শাখা থেকে এই নোট গ্রাহকদের দেওয়া হচ্ছে। সুষ্ঠুভাবে নতুন নোট বণ্টনের জন্য গত বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ ব্যাংকের মতিঝিল শাখায় প্রথমবারের মতো পরীক্ষামূলকভাবে আঙুলের ছাপ পদ্ধতির উদ্বোধন করেন গভর্নর আতিউর রহমান।
গতকাল সোমবার দুপুর ১২টার দিকে বাংলাদেশ ব্যাংকের এনেক্স ভবনের দ্বিতীয় তলায় গিয়ে দেখা যায়, নতুন নোট সংগ্রহের জন্য মানুষের লম্বা লাইন। গুনে দেখা গেল ২৬ জন। এই প্রতিবেদক ওই লাইনে দাঁড়ান। কাউন্টারে থাকা ব্যাংকের কর্মকর্তারা একটি ওয়েবক্যাম দিয়ে প্রত্যেকের ছবি ও আঙুলের ছাপ নিয়ে একটি নম্বর-সংবলিত টোকেন দিচ্ছেন। এ ক্ষেত্রে কেউ দ্বিতীয়বার নতুন নোট নিতে এলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে শনাক্ত হচ্ছেন।
প্রত্যেকের জন্য ২০-২৫ সেকেন্ড সময় লাগে। এরপর সামনে থাকা দুটি এলসিডি মনিটরে কত নম্বর টোকেনধারী কোন কাউন্টারে যাবেন, সেটি ভেসে উঠছে। ১, ২ ও ৩ নম্বর কাউন্টার থেকে প্রত্যেক গ্রাহককে সর্বোচ্চ ৩ হাজার ৭০০ টাকার বিপরীতে ২, ৫, ১০ ও ২০ টাকার একটি করে বান্ডিল দেওয়া হচ্ছে। প্রত্যেক বান্ডিলে থাকে ১০০টি নোট।
নতুন চালু হওয়া পদ্ধতিটি তদারক করছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের উপপরিচালক মো. আবদুল আজিজ। জানালেন, গত ঈদেও নতুন নোট নিতে আসা গ্রাহকদের লম্বা লাইনে ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থাকতে হতো। তবে এবার চিত্রটি পুরোই ভিন্ন। তিনি আরও বলেন, সবাই যাতে নতুন নোট পেতে পারেন, সে জন্যই বাংলাদেশ ব্যাংক পরীক্ষামূলকভাবে এটি চালু করেছে। এ জন্য নতুন একটি সফটওয়্যার ব্যবহার করা হচ্ছে।
চকচকে নোটআরেক উপপরিচালক সুজন কান্তি বড়ুয়া বললেন, প্রথম দিন ৬০৪ জন, দ্বিতীয় দিন ৫২৯ এবং গতকাল দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত ২৭২ জন গ্রাহক নতুন নোট সংগ্রহ করেছেন। এ ছাড়া প্রথম দিন একজন, দ্বিতীয় দিন সাতজন ও গতকাল দুপুর পর্যন্ত তিনজন দ্বিতীয়বার নোট নিতে এসে যন্ত্রের মাধ্যমে শনাক্ত হয়েছেন।
নতুন নোট নিয়ে বের হয়ে পাশের সেনাকল্যাণ ভবনের প্রধান ফটকে যেতেই চোখে পড়ল আরেক চিত্র। ৯-১০ জন নারী হাতে ও ব্যাগে নতুন নোট নিয়ে খদ্দর খুঁজছেন। এই টাকার কারবারিদের ২ টাকার বান্ডিলে ৩০ টাকা, ৫ ও ১০ টাকার বান্ডিলে ৬০ টাকা, ২০ টাকার বান্ডিলে ৫০ এবং ৫০ টাকার বান্ডিলে ৩০-৪০ টাকা বাট্টা বা অতিরিক্ত দিতে হয়। বছরের পর বছর ধরেই ব্যবসা করেন এই ব্যবসায়ীরা। তবে ঈদের আগে চাহিদা বৃদ্ধি পাওয়া বাট্টার হার বাড়িয়ে দেন তাঁরা। জানালেন, কয়েকজন দালালই নিয়মিতভাবে তাঁদের এই নোট সরবরাহ করেন।
২০-২৫ বছর ধরে মতিঝিলে নতুন টাকার ব্যবসা করেন ময়মনসিংহের মরিয়ম বেগম। বললেন, ‘বাংলাদেশ ব্যাংকে আমরা তো যেতে পারি না। আপনাদের মতো লোকজনই আমাদের কাছে বিক্রি করেন।’ তাঁর হাতে থাকা ৫০ টাকার ১০টি বান্ডিল দেখে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ব্যাংকের লোকজনের হাত না থাকলে কি এগুলো পাওয়া যায়?’
সাহস২৪ ডটকম-এর প্রকাশিত প্রচারিত কোনো সংবাদ তথ্য, ছবি, রেখাচিত্র, ভিডিও, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
মন্তব্যে প্রকাশিত মত মন্তব্যকারীর একান্তই নিজস্ব। সাহস২৪ ডটকম-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে এসব মন্তব্যের কোনো মিল নাও থাকতে পারে। মন্তব্যকারীর বক্তব্যের বিষয়বস্তু নিয়ে সাহস২৪ ডটকম-এর কর্তৃপক্ষ আইনগত বা অন্য কোনো দায় নেবে না।