রোগীকে বিবস্ত্র করে যৌন লালসা মেটাতেন চিকিৎসক
পিরোজপুরের ভাণ্ডারিয়ার শাপলা ক্লিনিকে রোগীকে বিবস্ত্র করে যৌন লালসা মেটাতেন নজরুল ইসলাম নামে এক চিকিৎসক। আলট্রাসনোগ্রাফিসহ যে কোন ধরনের ডাক্তারি পরীক্ষার সময় নারী রোগীদের যৌন নিপীড়নের অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।
চিকিৎসকের নাম মো. নজরুল ইসলাম (৪০)। তিনি ময়মনসিংহ সদর উপজেলার চর কালিবাড়ী গ্রামের মো. সিরাজুল ইসলামের ছেলে। ২০০৩ সালে তিনি বরিশাল শেরে বাংলা মেডিক্যাল কলেজ থেকে এমবিবিএস পাস করেন। কয়েক বছর ধরে তিনি পিরোজপুরের বিভিন্ন ক্লিনিকে চাকরি করছেন।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, নারী রোগীদের অস্ত্রোপচারের আগে অচেতন করে যৌন হয়রানি করতেন। এরপর এই দৃশ্য মোবাইল ফোনে ভিডিও করতেন। অভিযুক্ত চিকিৎসককে আটকের পর সংবাদ সম্মেলন করে এ তথ্য জানিয়েছেন পিরোজপুরের পুলিশ সুপার (এসপি) মো. ওয়ালিদ হোসেন।
গত মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ভাণ্ডারিয়া উপজেলার শাপলা ক্লিনিকে ভর্তি হন প্রসূতি নাসরিন আক্তার (২৪)। তিনি বরিশালের উজিরপুর উপজেলার সেলিম হাওলাদারের স্ত্রী এবং ভাণ্ডারিয়া উপজেলার মধ্য ভাণ্ডারিয়া গ্রামের মো. শাহজাহান হাওলাদারের মেয়ে। নাসরিনকে পরদিন সকাল ৮টায় সিজারিয়ান অস্ত্রোপচার করার কথা। অস্ত্রোপচার করা হয় দুপুর আড়াইটায়। ওই ক্লিনিকে কোনো অবেদনবিদ চিকিৎসক নেই। ঝুঁকি নিয়ে ওই রোগীকে অনুভূতিনাশক প্রয়োগ করেন ডা. নজরুল। বিকেল ৫টার দিকে রোগীর নাক-মুখ থেকে রক্ত পড়া শুরু হয়। এরপর হাসপাতালের ব্যবস্থাপকসহ অন্যরা পালিয়ে যান। নজরুল ক্লিনিকের মধ্যে আত্মগোপন করেন।
নাসরিনের আত্মীয়রা তাঁকে দ্রুত ভাণ্ডারিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায়। কর্তব্যরত চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে স্থানীয়রা ওই ক্লিনিকে ভাঙচুর করে। পরে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে ওই ক্লিনিক থেকে ডা. নজরুল ও মালিকের ভাই আজিজুরকে আটক করে। উপজেলা প্রশাসন ক্লিনিকটি সিলগালা করে দেয়। নাসরিন একটি ছেলে সন্তান জন্ম দিয়েছেন। নবজাতক সুস্থ আছে।
ভাণ্ডারিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. কামরুজ্জামান তালুকদার বলেন, 'প্রসূতি মৃত্যুর ঘটনায় মৃতের বাবা থানায় একটি মামলা করেছেন। মামলায় ডা. নজরুল, ক্লিনিকের মালিক স্বপন এবং অস্ত্রোপচারে সহায়তাকারী তাঁর ভাই আজিজুর রহমান ও দুই-তিনজন অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তিকে আসামি করা হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার নজরুল ও আজিজুরকে আদালতে হাজির করে সাত দিনের রিমান্ড আবেদন করেছে পুলিশ।'
এদিকে পিরোজপুরের এসপি মো. ওয়ালিদ হোসেন গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুর ২টায় তাঁর কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে জানান, নজরুল নারী রোগীদের আল্ট্রাসনোগ্রাফিসহ যেকোনো ধরনের ডাক্তারি পরীক্ষা করার সময় যৌন নিপীড়ন করতেন।
এ ধরনের নিপীড়নের অনেক ভিডিও ক্লিপ পুলিশ উদ্ধার করেছে। ওই চিকিৎসকের ব্যক্তিগত মোবাইলে ধারণ করা ভিডিও ক্লিপগুলো পুলিশ পর্যবেক্ষণ করছে। পুলিশ এটাও জানতে পেরেছে, পরবর্তী সময়ে ওই নারীদের ফোন করে চিকিৎসক অনৈতিক প্রস্তাব দিতেন। নারী রোগীদের যৌন নিপীড়নের অভিযোগে পিরোজপুরের দুটি ক্লিনিক থেকে এর আগে ডা. নজরুলকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। একটি ক্লিনিকে যৌন নিপীড়নের অভিযোগে তাঁকে গ্রেপ্তারও করেছিল পুলিশ।
এসব ঘটনার পর ওই চিকিৎসক শহরের শতাব্দী ডায়াগনস্টিকের সামনে একটি চেম্বার খুলেছেন। এ ছাড়া শহরের বাইরে বিভিন্ন উপজেলার ক্লিনিকে তিনি রোগী দেখা ও অস্ত্রোপচার করতেন।
সাহস২৪ ডটকম-এর প্রকাশিত প্রচারিত কোনো সংবাদ তথ্য, ছবি, রেখাচিত্র, ভিডিও, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
মন্তব্যে প্রকাশিত মত মন্তব্যকারীর একান্তই নিজস্ব। সাহস২৪ ডটকম-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে এসব মন্তব্যের কোনো মিল নাও থাকতে পারে। মন্তব্যকারীর বক্তব্যের বিষয়বস্তু নিয়ে সাহস২৪ ডটকম-এর কর্তৃপক্ষ আইনগত বা অন্য কোনো দায় নেবে না।