দুনিয়া কাঁপানো নাইন ইলেভেন আজ
নিজস্ব প্রতিবেদক, প্রকাশ : ১১ সেপ্টেম্বর, ২০১৫
প্রিন্টঅঅ-অ+
আজ ১১ সেপ্টেম্বর। যুক্তরাষ্ট্র তথা বিশ্বের ইতিহাসের স্মরণকালের সবচেয়ে দুঃসাহসী ও ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলার ১৫তম বার্ষিকী আজ।
২০০১ সালের এই দিনে বিশ্বের একক সুপার পাওয়ার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক ও অর্থনৈতিক প্রাণকেন্দ্রে তাদেরই আকাশ থেকে ছিনতাই করা উড়োজাহাজ নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে সন্ত্রাসী গ্রুপ আল কায়েদার আত্মঘাতী সদস্যরা।
ধ্বংস হয় যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনৈতিক শ্রেষ্ঠত্বের গৌরবদণ্ড ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারের গগনচুম্বী দু’টি টাওয়ার। এদিন সমরসজ্জায় বলীয়ান বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক প্রাণকেন্দ্র পেন্টাগনও।
২০০১ সালের সেপ্টেম্বর মাসে আল কায়েদার ওই ভয়াবহ তাণ্ডবে প্রাণ হারান কমপক্ষে ৩ হাজার মানুষ। মুহূর্তে বিনষ্ট হয় শত শত কোটি ডলারের সম্পদ। থমকে দাঁড়ায় বিশ্বের অর্থনীতির ব্যারোমিটার হিসেবে পরিচিত ওয়াল স্ট্রিট।
২০০১ সালের ১১ই সেপ্টেম্বরে নিউইয়র্কের টুইন টাওয়ারে যাত্রীবাহী বিমানের সাহায্যে হামলা করার পর বিশ্বের প্রায় সকল দেশই মার্কিন সরকার ও সেদেশের জনগণের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছিল। তবে আমেরিকার ইউরোপীয় মিত্ররা ন্যাটো চুক্তির ধারা অনুযায়ী আমেরিকার অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা ও শান্তি বিঘ্নিতকারীদের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করার জন্য সম্মিলিত প্রস্তুতির কথা ঘোষণা করে। ১৯৪১ সালে মার্কিন পার্ল হার্বর পোর্টে জাপানি হামলার পর এটাই ছিল আমেরিকায় বড়ো ধরনের কোনো হামলা।
ওয়াশিংটনে অবস্থিত মার্কিন প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় পেন্টাগন এবং নিউইয়র্কের টুইন টাওয়ারে হামলায় সব মিলিয়ে তিন হাজারেরও বেশি মানুষ মারা গিয়েছিল। উন্নত নিরাপত্তা প্রযুক্তিতে সমৃদ্ধ বলে দাবীদার যুক্তরাষ্ট্রের মতো একটি দেশে যাত্রীবাহী বিমানের সাহায্যে এভাবে হামলা চালানোর ঘটনাটা ছিল একেবারেই অভিনব এবং অবিশ্বাস্য।
এই ভয়াবহ ওই সন্ত্রাসী হামলার জন্য সন্ত্রাসীরা বেছে নেয় চারটি বাণিজ্যিক যাত্রীবাহী বিমানকে।
এর মধ্যে আমেরিকান এয়ারলাইন্সের ‘ফ্লাইট ১১’ ও ইউনাইটেড এয়ারলাইন্সের ‘ফ্লাইট ১৭৫’ আঘাত হানে যথাক্রমে ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারের উত্তর ও দক্ষিণ টাওয়ারকে।
বিমান দু’টির আঘাতে ভেঙ্গে পড়ে ১১০ তলা উচ্চতার সুউচ্চ ওই ভবন দু’টি। আর তাদের ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়ে আরও কমপক্ষে দশটি ছোটো বড় স্থাপনা।
অপর দিকে ছিনতাই হওয়া তৃতীয় উড়োজাহাজ আমেরিকান এয়ারলাইন্সের ফ্লাইট ৭৭ আঘাত হানে মার্কিন সমর দফতর পেন্টাগনের পঞ্চভুজাকার মূল ভবনে।
তবে চতুর্থ উড়োজাহাজ ইউনাইটেড এয়ারলাইন্সের ফ্লাইট ৯৩ চূড়ান্ত লক্ষ্যতে আঘাত হানার আগেই বিধ্বস্ত হয় রাজধানী ওয়াশিংটনের নিকটবর্তী শ্যাকসভিলের একটি মাঠে। ধারণা করা হয় ওই বিমানটির লক্ষ্যবস্তু ছিলো স্বয়ং হোয়াইট হাউজ।
পরিকল্পিতভাবে নারকীয় এ ধ্বংস ও হত্যাযজ্ঞের জন্য ইসলামি জঙ্গি সংগঠন আল-কায়েদাকে দায়ী করে যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা বিভাগ। গোয়েন্দা প্রতিবেদন অনুযায়ী, আল-কায়েদার তখনকার নেতা ওসামা বিন লাদেনই ছিলেন হামলার রূপকার। ২০১১ সালে পাকিস্তানের অ্যাবোটাবাদে আত্মগোপন করে থাকা লাদেনকে হত্যা করে যুক্তরাষ্ট্রের বিশেষ বাহিনী ‘নেভি সিল'।
লাদেনের মৃত্যু সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়ার পর জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রকে একরকম বিজয়ীই ঘোষণা করেছিলেন বারাক ওবামা। চার বছর পরও কিন্তু বাস্তব পরিস্থিতি ভিন্ন। এখনো বিশ্বের এখানে-ওখানে চলছে জঙ্গি হামলা। জঙ্গি গোষ্ঠী আল-কায়েদা দৃশ্যত কিছুটা দুর্বল হয়ে পড়লেও আফ্রিকায় স্কুল থেকে দুই শতাধিক ছাত্রীকে তুলে নিয়ে যাচ্ছে বোকো হারাম৷ বাণিজ্যিক বিপনীতে অতর্কিত হামলায় প্রাণ যাচ্ছে মানুষের৷ ইরাকের বেশ বড় একটা অংশ দখল করে নিয়ে বিশ্বজুড়ে ইসলামি খেলাফত কায়েমের ঘোষণা দিচ্ছে ইসলামিক স্টেট (আইএস বা আইসিস)৷ আইএস-এর বিরুদ্ধেও ‘যুদ্ধ পরিকল্পনা' প্রণয়ন করতে হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রকে৷
কি হয়েছিল নাইন ইলেভেনে?
এই দিনে যুক্তরাষ্ট্রের ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারসহ এক যোগে চালানো চারটি আত্মঘাতি হামলায় নিহত হয় অন্তত ৩ হাজার মানুষ৷ ২০০১ সালের ১১ই সেপ্টেম্বর সকাল ৯টায় এই ঘটনা ঘটে৷ চারটি মার্কিন যাত্রিবাহী বিমান ছিনতাই করে এই হামলা চালানো হয়৷ দুটি বিমান ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারের উত্তর ও দক্ষিণ টাওয়ারে আঘাত হানে৷ গুড়িয়ে ধসে পড়ে ভবন দুটি৷ অ্যামেরিকান এয়ারলাইন্সের ছিনতাই করা আর একটি বিমান নিয়ে হামলা চালানো হয় মার্কিন প্রতিরক্ষা সদর দপ্তর পেন্টাগনে৷ তবে যাত্রীদের চেষ্টায় নির্ধারিত স্থানে হামলা চালাতে ব্যর্থ হয়ে পেনসিলভেনিয়ার আকাশে বিধ্বস্ত হয় চতুর্থ বিমানটি৷
আল-কায়েদা এখনও বড় হুমকি
নাইন ইলেভেনের পর থেকে ওসামা বিন লাদেনের আল-কায়েদা অ্যামেরিকার শত্রুতে পরিণত হয়েছিল৷ ওই ঘটনার এক দশক পর লাদেনের মৃত্যুর পর ওবামা বলেছিলেন, আল-কায়েদার শক্তি ক্ষীণ হয়ে আসছে৷ এরপরও আফগানিস্তান, পাকিস্তান থেকে শুরু করে আরব দেশগুলো, উত্তর আফ্রিকা, এমনকি সিরিয়াতেও তাদের দৌরাত্ম্য কিন্তু এখনও কমেনি৷সিরিয়ায় আল-কায়েদা সমর্থিত জিহাদি দলগুলোর কর্মকাণ্ড যুক্তরাষ্ট্র এবং তার আইন প্রণেতাদের মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে৷
সম্প্রতি অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস বা এপি-র এক জরিপে দেখা গেছে, প্রায় ৯৪ ভাগ অ্যামেরিকান মনে করেন, সন্ত্রাসবিরোধী যুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের জয় হয়নি৷ মাত্র ১৪ ভাগ মনে করেন আগামি ১০ বছরের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র সন্ত্রাসবিরোধী যুদ্ধরে জয়ী হতে পারে৷
সব মিলিয়ে নাইন ইলেভেনের ১৫তম বার্ষিকীতে ৩ হাজার নিহত, অসংখ্য আহত এবং তাদের পরিবার-পরিজনের প্রতি শ্রদ্ধা, সমবেদনা জানাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। নিউ ইয়র্কের ‘দ্য ন্যাশনাল সেপ্টেম্বর ইলেভেন মেমোরিয়াল মিউজিয়াম'-এ জমবে হাজারো দর্শনার্থীর ভিড়। ৯/১১-র বর্ষপূর্তির দিনেও খোলা থাকবে এই জাদুঘর। উন্মুক্ত করে দেওয়া পর ‘সেপ্টেম্বর ইলেভেন মেমোরিয়াল মিউজিয়াম'-এ গিয়ে এ পর্যন্ত নয় লাখেরও বেশি দর্শনার্থী ১৫ বছর আগে নিহত হওয়া মানুষের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়েছেন। আজ দর্শনার্থীর সংখ্যা দশ লক্ষ হয়ে যেতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
সাহস২৪ ডটকম-এর প্রকাশিত প্রচারিত কোনো সংবাদ তথ্য, ছবি, রেখাচিত্র, ভিডিও, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
মন্তব্য
মন্তব্যে প্রকাশিত মত মন্তব্যকারীর একান্তই নিজস্ব। সাহস২৪ ডটকম-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে এসব মন্তব্যের কোনো মিল নাও থাকতে পারে। মন্তব্যকারীর বক্তব্যের বিষয়বস্তু নিয়ে সাহস২৪ ডটকম-এর কর্তৃপক্ষ আইনগত বা অন্য কোনো দায় নেবে না।