ঈদকে সামনে রেখে তাহিরপুর সীমান্তে বেপরোয়া চোরাচালানীরা
ঈদকে সামনে রেখে সুনামগঞ্জ জেলার তাহিরপুর সীমান্তে বেপরোয়া হয়ে উঠেছে চোরাকারবারীরা। লক্ষ লক্ষ টাকা রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে প্রতিদিন ভারত থেকে আনা হচ্ছে কয়লা, চুনাপাথর, কাঠ, গাছ ও ঘোড়া।
এতেই ক্ষান্ত নয় চোরাচালানীরা। সিন্ডিকেডের মাধ্যমে অবৈধ পথে নিয়ে আসছে সর্বনাশা মাদক ইয়াবা, হেরোইন, যৌন উত্তেজক ট্যাবলেট, মদ, গাঁজা ও অস্ত্র।
জানা যায়, ইতিমধ্যে কয়লা চোরাচালান করতে গিয়ে লালঘাট সীমান্তের গুহায় চাপা পড়ে ১ যুবক ও লাকমা সীমান্তে ৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। এছাড়া বিএসফের তাড়া খেয়ে যাদুকাটা নদীতে ডুবে মৃত্যু হয়েছে আরো ২ শ্রমিকের। চোরাচালান করতে গিয়ে বিএসএফের হাতে নির্যাতিত হয়ে জেল খেটেছে অনেকেই।
তবে সম্প্রতি লাউড়েরগড় সীমান্ত থেকে ৮টি ঘোড়া, বড়ছড়া থেকে ইয়াবাসহ ১ মাদক ব্যবসায়ী ও বুরুঙ্গাছড়া থেকে অস্ত্রসহ ১ ব্যবসায়ীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ ও বিজিবি।
এলাকাবাসী জানায়, সীমান্তে চোরাচালান প্রতিরোধের জন্য সুনামগঞ্জ ৮-ব্যাটালিয়নের বিজিবি অধিনায়ক গোলাম মহিউদ্দিন তাহিরপুর উপজেলা সীমান্ত এলাকায় গিয়ে স্থানীয় লোকজনকে নিয়ে সভা-সমাবেশ করছেন। তিনি চোরাচালান প্রতিরোধে বিশেষ ভূমিকা রাখলেও শুধুমাত্র সীমান্তে অবস্থিত ক্যাম্পগুলোতে দায়িত্বে থাকা বিজিবি সদস্যদের দায়িত্বে অবহেলার কারণে চোরাচালানীরা বেপরোয়া হয়ে উঠে।
বর্তমানে উপজেলার বাদাঘাট ইউনিয়নের লাউড়েরগড় বিজিবি ক্যাম্প সংলগ্ন যাদুকাটা নদী দিয়ে প্রতিদিন ভারত থেকে অবাধে আসছে কয়লা, মদ, বিড়ি ও গাছ। সীমান্তের বারেকটিলা, দশঘর, পুরান লাউড়, উত্তর মুকশেদপুর এলাকা দিয়ে ঘোড়া, মদ, গাজা, নাসির বিড়ি ও হেরোইন পাঁচার করে বিন্নাকুলি ও কামড়াবন্দ গ্রামের চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ীদের বাড়িতে নিয়ে মুজদ করা হয়। পাঁচারকৃত প্রতিটি ঘোড়া থেকে ৩ হাজার টাকা, প্রতি গাছ থেকে ১ হাজার টাকা, কয়লার বস্তা থেকে ১০০ টাকা ও মদ, গাঁজা, নাসির বিড়ি, হেরোইন থেকে সপ্তাহিত ১০ হাজার টাকা হারে বিজিবি ক্যাম্পের চাঁদা উত্তোলন করছে ক্যাম্পের সোর্স পরিচয় দিয়ে লাউড়েরগড় গ্রামের নুর মিয়া, নবীকুল, এজাদ মিয়া ও সাখাওয়াত হোসেন।
অন্যদিকে উত্তর বড়দল ইউনিয়নের চানপুর বিজিবি ক্যাম্প সংলগ্ন নয়াছড়া জিরো পয়েন্ট থেকে চোরাচালানী সম্রাট মিয়া, আবুল কালাম, লাল মিয়া, নাজমুল ও আবু বক্করের নেতৃত্বে চুনাপাথার পাঁচারের পর ট্রলিতে করে বারেকটিলার ছিলাবাজার সংলগ্ন যাদুকাটা নদীর তীরে অবস্থিত উত্তর বড়দল ইউনিয়ন চেয়ারম্যান জামাল উদ্দিনের চাচাত ভাই চোরাচালানী আব্দুল গফ্ফারের মিলে নিয়ে প্রথমে মজুত করা হয়। পরে সেই চুনাপাথর মেশিনে ভেঙ্গে নৌকা বোঝাই করে যাদুকাটা নদী দিয়ে পাঁচার করা হচ্ছে। এছাড়াও এই সীমান্তের রাজাই এলাকা দিয়ে চোরাচালানী জম্মত আলীর নেতৃত্বে কয়লা পাঁচার করা হচ্ছে। অন্যদিকে টেকেরঘাট বিজিবি ক্যাম্প সংলগ্ন বুরুঙ্গাছড়া জিরো পয়েন্ট সংলগ্ন ইউপি সদস্য রহিমা বেগমের বাড়ির পিছন থেকে চোরাচালানী আব্দুল হান্নান, কাসেম মিয়া, আলী রহমান, নজরুল মিয়া, রমিজ মিয়ার নেতৃত্বে চুনাপাথর পাঁচার করে বড়ছড়া বারুদখানা সংলগ্ন নদীর ঘাটে নৌকা বোঝাই করাসহ টেকেরঘাট চুনাপাথর কোয়ারী থেকে রাতে আঁধারে বারকি নৌকা দিয়ে চুনাপাথার পাঁচার করা হচ্ছে।
পরবর্তীতে পাঁচারকৃত চুনাপাথর নৌকার যোগে আনোয়ারপুর, বারংকা, ফাজিলপুর, গাগড়া, বড়টেক, পাঠানপাড়া ও মিয়ারচর, আমরিয়া নামকস্থানে নিয়ে পাথর ভাঙ্গার মিলে মজুত রেখে জমজমাট হাট বসায় চোরাচালানীরা। আর লাকমা, লালঘাট, বাগলী সীমান্ত দিয়ে কাঠ পাঁচার করার পর সেই কাঠ বালিয়াঘাট বিজিবি ক্যাম্প সংলগ্ন নতুনবাজার ও ডাম্পের বাজারে প্রতি শুক্রবার ও সোমবার হাটবারে প্রকাশে বিক্রি করা হয়। এছাড়া বাঁশতলা, লালঘাট, লাকমা, টেকেরঘাট, বুরুঙ্গাছড়া, জঙ্গলবাড়ি, চাঁরাগাঁও দিয়ে কয়লা পাঁচার করার পর ঠেলাগাড়িতে করে বড়ছড়া, বাগলী ও চাঁরাগাঁও শুল্কষ্টেশনে নিয়ে মজুত করে বিক্রি করা হচ্ছে।
চাঁরাগাঁও সীমান্তের লালঘাট এলাকা দিয়ে চোরাচালানী জানু মিয়া ও রহিম উদ্দিনের নেতৃত্বে কয়লা পাঁচার করে রাতে নৌকা যোগে বালিয়াঘাট ও চাঁরাগাঁও নিয়ে বিক্রি করা হয়। তাদের নেতৃত্বে কয়লা পাঁচার করতে গিয়ে চোরাই কয়লার গুহায় চাপা পড়ে সম্প্রতি ১ যুবকের মৃত্যু হয়েছে। এছাড়া বালিয়াঘাট, টেকেরঘাট সীমান্তের লাকমা চোরাই গুহায় পড়ে এ পর্যন্ত ৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। চোরাই কয়লার ঘাট দখল নিয়ে সংঘর্ষ হয়েছে একাধিক বার। বিএসএসের হাতে নির্যাতিত হয়ে জেল খেটেছে অনেকেই। বর্তমানে লাকমা সীমান্ত দিয়ে চোরাচালানী কামরুল মিয়া, নুর জামাল, আলম মিয়ার নেতৃত্বে কয়লা পাঁচার হচ্ছে। বিজিবি সোর্স পরিচয় দিয়ে মাদক মামলার আসামি চোরাচালানী আবু বক্কর চানপুর ক্যাম্পের নামে প্রতি ট্রলি চুনাপাথার থেকে ১০০ টাকা, টেকেরঘাট ক্যাম্পের কোম্পানী কমান্ডারের নামে ১০০ টাকা চাঁদা উত্তোলন করছে।
এছাড়াও বিজিবি ক্যাম্পের সোর্স পরিচয় দিয়ে লাকমা গ্রামের ইদ্রিস আলী, আব্দুল হাকিম ভান্ডারি, দুধের আউটা গ্রামের জিয়াউর রহমান জিয়া, লালঘাটের আবুল কালাম প্রতি কাঠ থেকে ১০০ টাকা, প্রতিবস্থা কয়লা থেকে ১২০ টাকা চাঁদা উত্তোলন করছে। আর মাদকদ্রব্য থেকে আলোচনা সাপেক্ষে দৈনিক, সাপ্তাহিক ও মাসিক হারে চাঁদা উত্তোলন করা হচ্ছে। আর সাংবাদিকদের নাম ভাঙ্গিয়ে চাঁদা উত্তোলন করছে চোরাচালানী আজাদ ও সাজ্জাদ মিয়া। এছাড়া চাঁদাবাজি করতে গিয়ে সীমান্তে ২ বার গণধোলাই খেয়েছে আজাদ ও সাজ্জাদ মিয়া।
এরপর সালিশে ১০ হাজার টাকা জরিমানা দেওয়াসহ লিখিত বনসই দিয়েছে। সুনামগঞ্জ ৮ব্যাটালিয়নের বিজিবি অধিনায়ক গোলাম মহিউদ্দিন বলেন, চোরাচালান প্রতিরোধের জন্য সীমান্তে গিয়ে এলাকার লোকজনকে নিয়ে মতবিনিময় ও সভা করাসহ চোরাচালান প্রতিরোধের জন্য আমার পক্ষ থেকে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।
সাহস২৪ ডটকম-এর প্রকাশিত প্রচারিত কোনো সংবাদ তথ্য, ছবি, রেখাচিত্র, ভিডিও, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
মন্তব্যে প্রকাশিত মত মন্তব্যকারীর একান্তই নিজস্ব। সাহস২৪ ডটকম-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে এসব মন্তব্যের কোনো মিল নাও থাকতে পারে। মন্তব্যকারীর বক্তব্যের বিষয়বস্তু নিয়ে সাহস২৪ ডটকম-এর কর্তৃপক্ষ আইনগত বা অন্য কোনো দায় নেবে না।