পিরোজপুরে আশঙ্কাজনক হারে বেড়েছে নারী-শিশু নির্যাতন
পিরোজপুর জেলায় নারী ও শিশু নির্যাতনের ঘটনা আশঙ্কাজনক বেড়ে গেছে। গত আট মাসে শিশু ও নারী নির্যাতন, ধর্ষণ, অপহরণ, হত্যা, যৌতুক ও যৌন পীড়নসহ বিভিন্ন ঘটনায় আদালত ও থানায় মামলা হয়েছে ৭শতাধিক।
সংশ্লিষ্ট বিভাগের সূত্র মতে, জানুয়ারি থেকে জুলাই সাত মাসে আদালতে শিশু ও নারী নির্যাতন সংক্রান্ত বিচারাধীন মামলার সংখ্যা রয়েছে ৫৮১ এবং নিষ্পত্তি হয়েছে মাত্র ১৬টি। এ সাত মাসে ৩৩ জন নারী ধর্ষণের শিকার হয়েছেন। এছাড়া, তিনজন নারীকে হত্যা, ৩৫ জন নারীকে অপহরণ, চারজন নারীকে ধর্ষণের চেষ্টা, ২১টি যৌতুক ও ১৯টি যৌন পীড়নের ঘটনাও ঘটেছে।
জানা গেছে, শিশু ও নারী নির্যাতন দমন আদালতে গত ছয় মাসে শিশু ও নারী নির্যাতনের ৩০টি দরখাস্ত জমা হলেও তা থেকে আদালত মাত্র দু'টি দরখাস্ত নিষ্পত্তি করেছেন। চলতি আগস্টের ২৩ তারিখ পর্যন্ত আদালতে আরও জমা পড়েছে ৭টি দরখাস্ত। জেলার সাত উপজেলায় নারী নির্যাতনের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে রয়েছে নাজিরপুর, মঠবাড়িয়া ও স্বরূপকাঠি। এ তিন উপজেলায় সাত মাসে নারী ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে অন্তত ২৩টি। এছাড়া, যৌন পীড়নের শিকার ১৯ জন, ধর্ষণের চেষ্টা চারজন, নারী হত্যা তিনজন ও যৌতুকের শিকার হয়েছেন ২১ জন নারী।
শুধু গত আগষ্ট মাসে উল্লেযোগ্য এসব ঘটনার মধ্যে রয়েছে, নাজিরপুর উপজেলার উত্তর হোগলাবুনিয়া গ্রামের হত দরিদ্রের মেয়ে পঞ্চম শ্রেণীর এক ছাত্রীকে শিকল দিয়ে বেঁধে ৩ দিন আটকে রেখে ধর্ষণ করা হয়েছে। গত ৩১ আগষ্ট তাকে অপহরণ করা হয়। এ ঘটনার অভিযোগে বৃহস্পতিবার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ও অপহরণ আইনে মামলা দায়ের করা হয়েছে। একই উপজেলার মাটিভাংগা ডিগ্রী কলেজের একাদশ শ্রেণির এক ছাত্রীকে জোড় করে তুলে নিয়ে ধর্ষণ করা হয়েছে। ধর্ষণের পর দুর্বৃত্তরা মোটর সাইকেলে করে ঢাকা-পিরোজপুর আঞ্চলিক মহাসড়কের বাঘাজোড়া নামক স্থানে'র একটি জলাশয়ে এনে তাকে পানিতে চুবিয়ে হত্যার চেষ্টা করলে তার ডাক-চিৎকারে স্থানীয়রা এগিয়ে এলে তারা পালিয়ে যায়। এ ঘটনার অভিযোগে বুধবার রাতে ধর্ষিতা কলেজ ছাত্রী বাদী হয়ে ২ জনকে আসামী করে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ও অপহরণ আইনে মামলা দায়ের করেছেন। ছাত্রীটির বাড়ি পার্শ্ববর্তী বাগেরহাট জেলার চিতলমারী উপজেলার চরবানিয়ারী ইউনিয়নের চর ডাকাতিয়া গ্রামে।
মঠবাড়িয়া উপজেলার পাঁচশতকুড়া টিকিকাটা গ্রামের দারিদ্র হোটেল শ্রমিক স্বামী-স্ত্রীর অনুপস্থিতিতে তাদের ৫ম শ্রেণীর স্কুল ছাত্রীকে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে ধর্ষণ করেছে একই এলাকার শাহিন নামের লম্পট। ধর্ষণের শিকার ওই ছাত্রী অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়লে ঘটনাটি এলাকায় জানাজানি হয়। এ ঘটনায় ওই ছাত্রীর পিতা বাদী হয়ে ৩০ আগস্ট থানায় মামলা করলে পুলিশ ধর্ষক শাহিনকে (১৮) গ্রেফতার করে। শাহিন উপজেলার পাঁচশতকুড়া টিকিকাটা গ্রামের হারুন হাওলাদারের ছেলে। একই উপজেলার পশ্চিম লক্ষণা গ্রামে গত ১৩ আগস্ট মাদরাসার ছাত্রীকে (১২) ধর্ষণ করেছে সৌদি প্রবাসীর বখাটে ছেলে হাসান আকন (১৮)। এ ঘটনায় পরেরদিন কিশোরীর দরীদ্র বাবা বাদী হয়ে বখাটে হাসানকে আসামি করে মঠবাড়িয়া থানায় একটি মামলা করেন। পুলিশ ও মেয়েটির পারিবার সূত্রে জানা গেছে, মেয়েটির মা প্রবাসী। বাবা শ্রমিক হিসেবে কাজ করেন। ঘটনার দিন রাতে মেয়েটি ছোট বোনকে নিয়ে ঘরে ছিল। রাত সাড়ে নয়টার দিকে হাসান আকন মেয়েটির বাড়িতে গিয়ে দেশলাই চায়। এ সময় মেয়েটি দেশলাই দেয়ার জন্য দরজা খুললে হাসান মেয়েটিকে ধর্ষণ করেন।
গত ১ আগস্ট মঠবাড়িয়া উপজেলার পূর্ব সাপলেজার ঝাটিবুনিয়া গ্রামের জমি নিয়ে বিরোধের জের ধরে প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করার জন্য দুই ভাড়াটে লম্পট দিয়ে ৭ম শ্রেণীর স্কুলছাত্রী ও তার নানিকে দুই রাত চেতনানাশক ওষুধ খাইয়ে গণধর্ষণ করা হয়। এ ঘটনায় এদিন স্কুলছাত্রীর নানা বাদী হয়ে মঠবাড়িয়া থানায় ৩ জনকে আসামি করে একটি মামলা করেছেন। এদিকে নাজিরপুরে পৃথক ঘটনায় পঞ্চম শ্রেণীর ও এক কলেজছাত্রী ধর্ষণের ঘটনায় দায়েরকৃত মামলার কোনো অগ্রগতি নেই। আসামিদের একজন গ্রেফতার হলেও অন্যরা রয়েছে ধরাছোঁয়ার বাইরে। এদিকে হুমকিতে দুই পরিবারের সদস্যরা আতঙ্কিত রয়েছেন। ধর্ষণের শিকার ওই দুই ছাত্রী এক রকম গৃহবন্দী জীবনযাপন করছে বলে এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে।
পিরোজপুর জেলা মহিলা পরিষদের সভানেত্রী মনিকা মণ্ডল এসব ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, প্রতিটি ধর্ষণের ঘটনা শনাক্ত হলেও মুল আসামিরা রাজনৈতিক দলের প্রভাব খাটিয়ে পার পেয়ে যাচ্ছে। পুলিশের তৎপরতা থাকলেও রাজনৈতিক মহলের চাপে তাদের তদন্তের অগ্রগতিও অনেকটা ঢিলেঢালা। ফলে ন্যায় বিচারের আশায় এলাকার মাতুব্বরদের দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন অসংখ্য নির্যাতিত পরিবার। শিশু ও নারী নির্যাতন দমন আদালত পিরোজপুরের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) অ্যাডভোকেট আবদুর রাজ্জাক খান বাদশা বলেন, এসব মামলার ক্ষেত্রে বাদী পক্ষ ও গ্রাম্য কতিপয় প্রভাবশালীর হুমকি-ধামকির কারণে মামলা পরিচালনায় বিঘ্ন ঘটে। যে কারণে মামলা নিষ্পত্তিতে বিলম্ব ঘটে।
সুত্রঃ সংবাদ
সাহস২৪ ডটকম-এর প্রকাশিত প্রচারিত কোনো সংবাদ তথ্য, ছবি, রেখাচিত্র, ভিডিও, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
মন্তব্যে প্রকাশিত মত মন্তব্যকারীর একান্তই নিজস্ব। সাহস২৪ ডটকম-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে এসব মন্তব্যের কোনো মিল নাও থাকতে পারে। মন্তব্যকারীর বক্তব্যের বিষয়বস্তু নিয়ে সাহস২৪ ডটকম-এর কর্তৃপক্ষ আইনগত বা অন্য কোনো দায় নেবে না।