গ্যাস ও বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধির আদেশ বাতিল করতে হবে : ক্যাব
কনজুমারস এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) আয়োজিত ‘অন্যায় ও অযৌক্তিভাবে গ্যাস ও বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে’ এক সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।
আজ ০৫ সেপ্টেম্বর ২০১৫ শনিবার সকাল ১১টায় সেগুনবাগিচা, ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি (ডিআরইউ)-তে উক্ত সভায় ধারণাপত্র উপস্থাপন করেন ক্যাব-এর জ্বালানি উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. এম শামসুল আলম।
অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন ক্যাব-এর কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের সদস্য ডা. মোঃ শাহনেওয়াজ চৌধুরী, কর্নেল (অব:) খন্দকার হাবীব-ই-রব্বানী ও জনাব মোসাব্বের হোসেন।
সংবাদ সম্মেলনে ক্যাব-এর জ্বালানি উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. এম শামসুল আলম তার লিখিত বক্তব্যে বলেন, গত ২৭ আগস্ট ২০১৫ তারিখে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি) ভোক্তা পর্যায়ে গ্যাসের দাম গড়ে ২৬.২৯ শতাংশ ও বিদ্যুতের ২.৯৩ শতাংশ বাড়ানোর আদেশ দিয়েছে যা ১ সেপ্টেম্বর ২০১৫ থেকে কার্যকর হয়েছে। বিশ্ববাজারে যখনই জ্বালানি তেলের দাম বেড়েছে, দেশে তখনই বিদ্যুতের দামও বেড়েছে। কিন্তু দীর্ঘ দিন ধরে তেলের দরপতন অব্যাহত থাকা সত্ত্বেও দেশে তেলের দাম কমেনি। বিগত ১ বছরে বিশ্ববাজারে তেলের দর প্রতি ব্যারেল ১২০ ডলার থেকে নেমে ৪০ ডলারে নেমে এসেছে।
তিনি আশংকা প্রকাশ করে বলেন, জ্বালানির দাম বৃদ্ধিতে উৎপাদিত পণ্যের দাম বৃদ্ধি পাবে। সমতা ও ন্যায্যতার প্রশ্নে তেলের দরপতন সমন্বয় করে বিদ্যুতের দাম পুনঃনির্ধারণ করতে হবে। অথচ সে সমন্বয় না করে বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হয়েছে। ফলে ভোক্তারা ন্যায় বিচার থেকে বঞ্চিত হয়েছে। বিদ্যুৎ ও গ্যাসের দামবৃদ্ধির আদেশ বিইআরসি আইনের সাথে সামঞ্জস্যহীন হওয়ায় ন্যায় বিচারের স্বার্থে এ আদেশ বাতিল করতে হবে।
সংবাদ সম্মেলনে ক্যাব-এর পক্ষ থেকে ভোক্তাস্বার্থ ও অধিকার সুরক্ষার জন্য যেসব দাবি তুলে ধরা হয় তা হলো:
১.বিদ্যুৎ ও গ্যাসের দামবৃদ্ধির আদেশ বিইআরসি আইনের সাথে সামঞ্জস্যহীন হওয়ায় ন্যায় বিচারের স্বার্থে এ আদেশ বাতিল করতে হবে। ইউটিলিটিদের নিকট থেকে নতুনভাবে গৃহীত দামবৃদ্ধির প্রস্তাবের ওপর নতুনভাবে গণশুনানি হতে হবে। সে আদেশে জ্বালানি তেলের দরপতন অবশ্যই বিদ্যুতের উৎপাদন ব্যয়ে সমন্বয় হতে হবে। আদেশ ন্যায্যতা ও সমতাভিত্তিক হতে হবে।
২.বিদ্যুৎ ও জ্বালানিখাত উন্নয়নে সরকারি বিনিয়োগ নিশ্চিত করার লক্ষ্যে বিইআরসি’র নিয়ন্ত্রণাধীনে ইউটিলিটির সকল সঞ্চিত অর্থে একটি তহবিল গঠিত হতে হবে।
৩.ইউটিলিটির সুশাসন নিশ্চিত করাসহ কারিগরি দক্ষতা উন্নয়নের লক্ষ্যে ইউটিলিটি’র বোর্ডসহ সকল পর্যায়ের নির্বাহী দায়িত্ব থেকে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি বিভাগের সকল কর্মকর্তাদেরকে অনতিবিলম্বে প্রত্যাহার করতে হবে। ইউটিলিটি’র শেয়ার বিক্রির ওপর নিষেধাজ্ঞা থাকতে হবে।
৪.বিদ্যুৎ ও জ্বালানিখাত থেকে সরকারের অর্জিত রাজস্বের কমপক্ষে ৫০ শতাংশ এ খাত উন্নয়নে বিনিয়োগ হতে হবে। এ অর্থেও একটি তহবিল গঠিত হতে হবে।
৫.বিইআরসি’র যেসব আদেশ সঠিকভাবে লেখা বা সংশোধনীর জন্য ভোক্তাদের পক্ষ থেকে আবেদন করা হয়েছে, তা লেখা বা সংশোধনপূর্বক অনতিবিলম্বে বিইআরসি’র আদেশ হতে হবে।
৬.ইউটিলিটিদেরকে কেবলমাত্র বিদ্যুৎ বা জ্বালানি কেনা-বেচায় সীমাবদ্ধ রাখতে হবে। তাদের জনবল নিয়োগ এবং উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণ ও বাস্তবায়ন স্বার্থ-সংশ্লিষ্ট নয় এমন কোন তৃতীয় পক্ষের ওপর ন্যস্ত করতে হবে।
৭.বিইআরসি কর্তৃক অনুমোদিত গ্যাস উন্নয়ন তহবিল নীতিমালা বিইআরসি’কে কার্যকর করতে হবে এবং ভোক্তাদের দেয়া সমুদয় অর্থ এ তহবিলে জমা হওয়া নিশ্চিত করতে হবে এবং এ তহবিলের ব্যবহারের কৌশলগত পরিকল্পনা বিইআরসি’কে প্রণয়ন করতে হবে এবং তার বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে হবে।
৮.বিইআরসি’র আইন ও আদেশ লঙ্ঘনের দায়ে পেট্রোবাংলা ও জ্বালানি বিভাগের বিরুদ্ধে ভোক্তাদের পক্ষ থেকে আনীত অভিযোগ বিইআরসি’কে অনতিবিলম্বে নিষ্পত্তি করতে হবে।
৯.বিদ্যুৎ ও জ্বালানিখাত লেভেল প্লেইং ফিল্ড হিসেবে এ খাত উন্নয়নে নিয়োজিত ব্যক্তিখাত ও সরকারিখাত উভয়ের জন্য যেন একই রকম সমতল হয়, সেজন্য কৌশলগত পরিকল্পনা বিইআরসি’কে প্রণয়ন করতে হবে এবং তা বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে হবে।
১০.ভোক্তা পর্যায়ে সকল প্রকার জ্বালানি তেলের দাম নির্ধারণের একক এখতিয়ার বিইআরসি’র। অথচ তা নির্ধারণ করে জ্বালানি বিভাগ। জ্বালানি বিভাগকে এমন বেআইনী কাজসহ সকল বেআইনী কাজ থেকে বিরত থাকতে হবে।
১১.বিদ্যুৎ, গ্যাস ও জ্বালানি তেল বন্টন ও বিতরণ এবং দামহার নির্ধারণে ন্যায্যতা ও সমতা নিশ্চিত করার জন্য কৌশলগত নীতি বিইআরসি’কে প্রণয়ন করতে হবে এবং তা বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে হবে।
সাহস২৪ ডটকম-এর প্রকাশিত প্রচারিত কোনো সংবাদ তথ্য, ছবি, রেখাচিত্র, ভিডিও, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
মন্তব্যে প্রকাশিত মত মন্তব্যকারীর একান্তই নিজস্ব। সাহস২৪ ডটকম-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে এসব মন্তব্যের কোনো মিল নাও থাকতে পারে। মন্তব্যকারীর বক্তব্যের বিষয়বস্তু নিয়ে সাহস২৪ ডটকম-এর কর্তৃপক্ষ আইনগত বা অন্য কোনো দায় নেবে না।