জালিয়াতি করে করণিক থেকে মাদ্রাসার অধ্যক্ষ
ঝালকাঠির কাঠালিয়া উপজেলার হেতাল বুনিয়া মাদ্রাসার করণিক থেকে কৈখালী বলতলা মাদ্রাসার অধ্যক্ষ পদে শেখ মোঃ ওবায়দুল হক অদুদ অবৈধভাবে আসীন হওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এঘটনায় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ একাধিকবার তদন্ত করে সনদ জালিয়াতিসহ নানান অপকর্মের ঘটনা জ্ঞাত হয়ে তাকে বরখাস্ত করেছে।
অভিযোগে জানাগেছে, শেখ মোঃ ওবায়দুল হক ১৯৯০ সালের ১ জানুয়ারি হেতালবুনিয়া মাদ্রাসায় করণিক পদে যোগদান করেন। করণিক পদ থেকে ২ বছরের ব্যবধানে ১৯৯২ সালের ৫ জানুয়ারি জুনিয়র মৌলভী হিসেবে পদোন্নতি নেন। ১ বছরের ব্যবধানে পরের বছর ১৯৯৩ সালের ১ জানুয়ারি ইবতেদায়ী প্রধান পদে পদোন্নতি নিয়ে ২ বছরের ব্যবধানে ১৯৯৬ সালের ২৭ এপ্রিল সহকারী মৌলভী পদে পদোন্নতি নেন।
২০০২ সালের ২৮ এপ্রিল সুপার পদে পদোন্নতি নেন। ওই সময়ের দায়িত্বপালনকারী সুপার ৪১ দিনে প্রশিক্ষণে থাকার সুযোগটি ব্যবহার করে শূন্য পদ দেখিয়ে তিনি সুপার হয়ে যান।
পরবর্তিতে ২০১২ সালের ১ জানুয়ারি অবৈধভাবে নিযোগপ্রক্রিয়া সম্পন্ন করে একই উপজেলার কৈখালী বলতলা আলিম মাদ্রাসার অধ্যক্ষ পদে যোগদান করেন। ৮ বছর পরে টাইম স্কেল পাবার নিয়ম থাকলেও নিয়মবহির্ভূত ৪ বছরের মাথায় তিনি টাইমস্কেল গ্রহণ করেন।
১৯৮৭ সালে দাখিল পাশ করে ১৯৯০ সালে করণিক পদে যোগদান করে নিয়মিত চাকুরী করে আলিম, ফাজিল ও কামিল পরীক্ষায়ও নিয়মিত ছাত্র হিসেবে অংশ গ্রহণ করেন। দাখিল, আলিম ও ফাজিল পরীক্ষায় তৃতীয় স্থান করেছেন। কিন্তু কোন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সুপার কিংবা অধ্যক্ষ পদে সার্টিফিকেটের কোনটিতেই ৩য় স্থান থাকলে তিনি অযোগ্য হিসেবে বিবেচিত হবেন বলে নীতিমালায় সুস্পষ্ট উল্লেখ রয়েছে।
এছাড়াও তার বিরুদ্ধে চাকুরীকালী সময়ে নারী কেলেঙ্কারী এবং দুর্নীতি-অনিয়মের পাহাড় থাকায় কয়েকবার বরখাস্ত হয়েছেন। বর্তমানে তিনি কৈখালী আলিম মাদ্রাসার অধ্যক্ষ পদে কর্মরত আছেন।
অধ্যক্ষ পদে নিয়োগও অবৈধ হওয়ায় বোর্ড প্রতিনিধি ঝালকাঠি সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর নুরুল আমীনের কাছে ১০ হাজার টাকা উৎকোচের প্রস্তাব দিয়ে স্বাক্ষর নিতে এসে না পেয়ে স্বাক্ষর জাল করে বিল পাশ করায়।
এ বিষয়ে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের দপ্তর থেকে সরকারি কলেজ অধ্যক্ষ প্রফেসর নুরুল আমীনকে তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য নির্দেশ দেন। তিনি তদন্ত করে চাকুরী থেকে বরখাস্ত, জালিয়াতির মাধ্যমে উত্তোলিত বেতনভাতা সরকারি কোষাগারে জমা দেওয়ার ব্যবস্থা, আলিম পরীক্ষার জাল সনদে ফৌজদারী কার্যবিধির আওতায় বিচারের মুখোমুখি করা এবং অবৈধ নিয়োগ বোর্ডের সদস্যদের বিরুদ্ধেও শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য সুপারিশ করেন।
এব্যাপারে অধ্যক্ষ শেখ মোঃ ওবায়দুল হক অদুদ বলেন, ১৯৯৪ সালেই আমার ইনডেক্স হয়েছে। সে অনুযায়ী চাকুরী করছি। সার্টিফিকেটে তৃতীয় বিভাগ থাকলে অধ্যক্ষ হওয়া যাবে না এ সার্কুলারটি দেওয়া হয়েছে ১৯৯৫ সালে। সরকারি কলেজের অধ্যক্ষের সাথে আমার একটি পারিবারিক বিষয়ে দ্বন্দ্ব থাকায় তিনি আমার বিরোধীতা করছেন।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অডিটর এনামুল হক বলেন, যোগ্য এবং অযোগ্যের বিষয়টি বিবেচনা করে নিয়োগ দেওয়ার এখতিয়ার পরিচালনা কমিটির। নিয়োগ বাতিল করে পুনরায় নিয়োগ দেওয়ার দায়িত্বও পরিচালনা কমিটির। তার নিয়োগপ্রক্রিয়া ত্রুটিপূর্ণ হওয়ায় মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের দপ্তর থেকে ২ বছর যাবত তার সব ধরণের বেতন ভাতা বন্ধ রয়েছে।
মাদ্রাসা পরিচালনা কমিটির সভাপতি ও শৌলজালিয়া ইউপি চেয়ারম্যান মাহমুদুল হাসান রিপন বলেন, তাকে নিয়োগের বিষয়ে একটা জটিলতা আছে। আমার কাছে কোন তদন্ত বা সুপারিশ এলে দ্রুত ব্যবস্থা নেব।
সাহস২৪ ডটকম-এর প্রকাশিত প্রচারিত কোনো সংবাদ তথ্য, ছবি, রেখাচিত্র, ভিডিও, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
মন্তব্যে প্রকাশিত মত মন্তব্যকারীর একান্তই নিজস্ব। সাহস২৪ ডটকম-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে এসব মন্তব্যের কোনো মিল নাও থাকতে পারে। মন্তব্যকারীর বক্তব্যের বিষয়বস্তু নিয়ে সাহস২৪ ডটকম-এর কর্তৃপক্ষ আইনগত বা অন্য কোনো দায় নেবে না।