ব্ল্যাটারকে জেলে নেওয়ার হুমকি দিয়েছিলেন প্লাতিনি!
মারাত্মক মেরুকরণ চলছে আন্তর্জাতিক ফুটবলের অভিভাবক সংস্থা ফিফায়। দুর্নীতির অভিযোগে এমনিতেই টালমাটাল ফিফা। যার জের ধরে মে’তে অনুষ্ঠিত ফিফা নির্বাচনের দু’দিন আগেই ২ সহসভাপতিসহ ৯জন কর্মকর্তাকে গ্রেফতার করে সুইস পুলিশ। যে কারণে পঞ্চমবারেরমত নির্বাচিত হয়েও নিজের চেয়ার টিকিয়ে রাখতে পারেননি ১৭ বছর ফিফার একচ্ছত্র অধিপতি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত সেপ ব্ল্যাটার। পদত্যাগের ঘোষণা দিয়েছিলেন তিনি।
তবে, ব্ল্যাটার এবার গুরুতর অভিযোগ করলেন। ডাচ একটি পত্রিকাকে সাক্ষাৎকার দিতে গিয়ে তিনি জানালেন উইরোপিয়ান ফুটবলের সংস্থা উয়েফা প্রেসিডেন্ট মিশেল প্লাতিনি তাকে হুমকি দিয়েছিলেন, যদি প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে নিজের প্রার্থীতা প্রত্যাহার না করেন, তাহলে তাকে জেলে প্রবেশ করানো হবে।
ডাচ প্রভাবশালী পত্রিকা ডি ভলস্ক্রান্ত-এর সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে প্লাতিনির ওপর এমন গুরুতর অভিযোগ আনলেন ফিফার বর্তমান প্রেসিডেন্ট। নেদারল্যান্ডসের ওই পত্রিকাটিকে ব্ল্যাটার বলেন, ‘মে মাসে ফিফার যে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল, তার আগে প্রেসিডেন্ট পদে আমার মনোনয়ন পত্র তুলে নেয়ার জন্য খুব চাপ দিয়েছিলেন প্লাতিনি। এমনকি তিনি আমার ভাইকে, যিনি ফিফার কর্মকর্তাও বটে, এটাও বলেছিলেন যে, মনোনয়ন পত্র তুলে না নিলে আমাকে জেলেও যেতে হবে।’
তবে প্লাতিনি ব্ল্যাটারের এই অভিযোগকে স্রেফ হেসেই উড়িয়ে দিলেন। এএফপি থেকে প্লাতিনির একটি ঘনিষ্ট সূত্রের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। যেখানে তিনি এটাকে ‘হাস্যকর’ বলেই মন্তব্য করেছেন।
ডাচ পত্রিকাটিকে ব্ল্যাটার বলেন, ‘গত মে’তে জুরিখে ফিফা কংগ্রেসে আমি হঠাৎ খেয়াল করলাম ৮০ বছর বয়সী আমার ভাই পিটার কাঁদছে।’ ওই কংগ্রেসেই অনুষ্ঠিত ফিফা নির্বাচনে ৭৯ বছর বয়সী ব্ল্যাটার পঞ্চমবারের জন্য প্রেসিডেন্ট পদে পুনঃনির্বাচিত হন। যদিও এর চারদিন পর ফিফার প্রেসিডেন্ট পদ থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দেন তিনি এবং নতুন নির্বাচনের ঘোষণা দেন। যা অনুষ্ঠিত হবে আগামী বছর ২৬ ফেব্রুয়ারি।
ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে ব্ল্যাটার বলেন, ‘মধ্যাহ্ন ভোজের সময় প্লাতিনি আমার ভাইয়ের সঙ্গে একই টেবিলে বসে। সেখানেই তিনি আমার ভাইকে বলেছিলেন, সেপকে (ব্ল্যাটার) বলুন তাড়াতাড়ি নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়াতে। না হয় তাকে জেলে যেতে হবে।’
ব্ল্যাটার জানান, প্লাতিনির সঙ্গে তার ভাইয়ের এই কথা হয়েছিল নির্বাচেরন ঠিক আগ মুহূর্তে। তবে তার ভাই এই কথা তাকে বলেছিলো নির্বাচনের পর। ব্ল্যাটারের এমন গুরুতর অভিযোগের পর প্লাতিনির একটি ঘনিষ্ট সূত্র এএফপিকে বলেন, ‘ফিফায় যে সংকট চলছে তাতে রং দেওয়ার জন্যই নতুন করে এই গল্প ফাঁদা হচ্ছে। যাতে এই সংকট থেকে সবা্র দৃষ্টি অন্য দিকে সরিয়ে নেওয়া যায়। উয়েফা প্রেসিডেন্ট এমন হাস্যকর কোন কথা কখনও বলতেই পারেন না।’
ব্ল্যাটার তার সাক্ষাৎকারে পত্রিকাটির সাংবাদিককে আরও বলেন, ‘আপনি জানেন যে, এমন একটা সময় ছিল প্লাতিনি (৬০ বছর বয়সী) আর আমার মাঝে সম্পর্ক ছিল, পিতা এবং পূত্রের ন্যায়। ১৯৯৮ সালে ফ্রান্স বিশ্বকাপের পর সে আমার জন্য চার বছর অসাধারণ কাজ করেছিল। আমিই উয়েফা এবং ফিফায় তাকে বোর্ড সদস্যপদ লাভ করার ব্যবস্থা করে দিয়েছি। এবং ২০০৭ সালে এসে উয়েফা প্রেসিডেন্ট পদে নির্বাচিত হওয়ার জন্য তার পক্ষে লড়াই করেছি।’
ব্ল্যাটার বিশ্বাস করেন প্লাতিনি ‘পরিবর্তণ’ হয়ে গেছেন। তবে কেন ফ্রান্সের সাবেক একজন ফুটবলার, কোচ এবং বর্তমান উয়েফা প্রেসিডেন্ট এভাবে পরিবর্তন হয়ে গেলেন, তার কোন কারণ খুঁজে পাচ্ছেন না তিনি। ‘আপনি তাকে তার চরিত্র সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করতে পারেন। আমি বুঝতে পারছি না, তার মাথায় আসলে কি প্রবেশ করেছে।’
পঞ্চমবারেরমত প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার চার দিনের মাথায় সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দিতে বাধ্য হয়েছেন ব্ল্যাটার। কেন এভাবে পদত্যাগের ঘোষণা দিলেন তিনি। জানতে চাওয়া হলে ব্ল্যাটার বলেন, ‘আমার এবং ফিফার ওপর পাহাড়ের মত যে চাপ তৈরী হয়েছিল তাতে করেই আমাকে এই সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে। এছাড়া আর কোন পথ আমার সামনে খোলা ছিল না। আমি যেন সত্যি সত্যি একটা সুনামির মুখোমুখি হয়ে পড়েছিলাম।’
অবশ্য ব্ল্যাটারের এসব অভিযোগের দিকে কান দেওয়ার এখন আর সময় কোথায় প্লাতিনির! তিনি এখন ব্যাস্ত ফিফা পূনর্গঠনের কাজ নিয়ে। তার ঘনিষ্ট সূত্রটিই এএফপিকে জানিয়েছেন, ‘মিশেল প্লাতিনি এখন ফিফার যে সূনাম ক্ষয় হয়েছে তা পূনরুদ্ধারের প্রতিই সবচেয়ে বেশি মনযোগি।’
সাহস২৪ ডটকম-এর প্রকাশিত প্রচারিত কোনো সংবাদ তথ্য, ছবি, রেখাচিত্র, ভিডিও, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
মন্তব্যে প্রকাশিত মত মন্তব্যকারীর একান্তই নিজস্ব। সাহস২৪ ডটকম-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে এসব মন্তব্যের কোনো মিল নাও থাকতে পারে। মন্তব্যকারীর বক্তব্যের বিষয়বস্তু নিয়ে সাহস২৪ ডটকম-এর কর্তৃপক্ষ আইনগত বা অন্য কোনো দায় নেবে না।