- হোম
- >
- বাংলা ও বাঙালি
- >
- আজ বাঙালির কাঁদার দিন
আজ বাঙালির কাঁদার দিন
ফাহাদ মশিউর রহমান
প্রিন্টঅঅ-অ+
পাকিস্তানী কারাগারে বসে যিনি আপোস করেননি স্বাধীনতার প্রশ্নে, যিনি বার বার জীবনের ঝুঁকি নিয়েছিলেন, এ দেশের স্বাধীনতা আর জনসাধারণের আর্থ-সামাজিক মুক্তি, এ জাতি তাঁরই উত্তরসূরি। যিনি ১৫ আগস্ট কালরাতে ঘাতকদের মেশিনগানের মুখেও ছিলেন অকুতোভয়, প্রশ্ন করেছিলেন, ‘তোরা কী চাস? কোথায় নিয়ে যাবি আমাকে?
হায়ানাদের মুখ থেকে সেদিন সেই হিমালয়ে সামনে দাড়িয়ে মুখ থেকে কোন কথা বলতে না পারলেও হাতের অস্ত্র কেঁপে উঠেছিল। আজীবন যে সোনার বাংলার স্বপ্ন দেখতেন, এ দেশের দুখি মানুষের মুখে যে হাসি ফোটাতে চেয়েছে। সেই স্বপ্ন দেখা মানুষটি ভুলেও কখনো ভাবে নি চোরের মত লুকিয়ে এসে কেউ তাকে হত্যা করবে। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন দেখা চোখকে চিরদিনের মত ঘুম পাড়িয়ে দিল ঘাতকের বুলেট।
“১৯৭৫-এ আমি হারিয়েছি আমার প্রতীক, শোর্যবীর্যধারা, অন্ধকারে।
তারপর থেকে ভিতরে ভিতরে একা, গৃহহারা, স্বপ্নহীন ক্ষোভে
বসে থেকে-থেকে, ঘুমে-ঘুমে, আত্মগোপনে গোপনে ক্লান্ত।”
আজ শনিবার শোকাবহ সেই ১৫ আগস্ট, জাতীয় শোক দিবস। বঙ্গবন্ধুর ৩৯তম শাহাদাৎ বার্ষিকী। ইতিহাসের কলঙ্কিত এ দিনে স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি ও স্বাধীনতা সংগ্রামের মহানায়ক জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হারিয়েছে বাঙালি। এ দিনে বঙ্গবন্ধু ও তার পরিবারের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে যথাযোগ্য মর্যাদায় জাতীয় শোক দিবস পালন করবে দেশবাসী।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট সুবেহ সাদিকের সময় কিছু বিপথগামী সেনাসদস্যের হাতে নির্মমভাবে সপরিবারে নিহত হন বঙ্গবন্ধু। ঘাতকের নির্মম বুলেটের হাত থেকে রেহাই পায়নি ছোট্ট শিশু, এমনকি অন্তঃসত্ত্বা নারীও। তারা বুলেট বৃষ্টিতে ঝাঁঝরা করে দেয় বাঙালীর শ্রেষ্ঠ সন্তান বঙ্গবন্ধুকে।
বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে তার স্ত্রী বেগম শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব, তিন পুত্র শেখ কামাল, শেখ জামাল ও ১০ বছরের শিশুপুত্র শেখ রাসেল, দুই পুত্রবধূ সুলতানা কামাল ও রোজি জামাল এবং এক সহোদর আত্মীয়-পরিজনসহ নির্মম হত্যাকাণ্ডের শিকার হন।
১৫ আগস্টের নির্মম হত্যাযজ্ঞে আরও নিহত হন বঙ্গবন্ধুর ছোট ভাই পঙ্গু মুক্তিযোদ্ধা শেখ আবু নাসের, ভগ্নিপতি আবদুর রব সেরনিয়াবাত, তার ছেলে আরিফ সেরনিয়াবাত, মেয়ে বেবী সেরনিয়াবাত, শিশু পৌত্র সুকান্ত বাবু, বঙ্গবন্ধুর ভাগ্নে শেখ ফজলুল হক মণি, তার অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী আরজু মণি, নিকটাত্মীয় শহীদ সেরনিয়াবাত, আবদুল নঈম খান রিন্টু এবং বঙ্গবন্ধুর জীবন বাঁচাতে ছুটে আসা রাষ্ট্রপতির ব্যক্তিগত নিরাপত্তা কর্মকর্তা কর্নেল জামিল উদ্দিন আহমেদসহ কয়েকজন নিরাপত্তা কর্মকর্তা ও কর্মচারী। দেশের বাইরে থাকায় প্রাণে বেঁচে যান বঙ্গবন্ধুর ২ কন্যা শেখ রেহানা ও শেখ হাসিনা।
ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের বঙ্গবন্ধুর সেই বাড়িটি আজ বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘর। বঙ্গবন্ধু ভবনের দেয়ালের বুলেটের ক্ষত, ভবনটির সিঁড়ি, মেঝেতে রক্তের ছোপ ছোপ দাগ আজো সাক্ষ্য বহন করছে রক্তাক্ত সেই ভয়াল দিনের।
দৈহিকভাবে নিহত হলেও বাঙালির হৃদয়ে আজো বেঁচে আছেন বঙ্গবন্ধু। বঙ্গবন্ধুর আর্দশকে ধারণ করছে কোটি মানুষ।
সরকারি কর্মসূচি
সূর্যোদয়ের সাথে সাথে সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও বেসরকারি ভবনসমূহে অর্ধনমিত জাতীয় পতাকা উত্তোলন। এ ছাড়া বিদেশস্থ বাংলাদেশ মিশনসমূহে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত এবং আলোচনা সভার আয়োজন করা হবে। এ উপলক্ষে বাংলাদেশ বেতার এবং বাংলাদেশ টেলিভিশন বিশেষ অনুষ্ঠানমালা সম্প্রচার এবং সংবাপত্রসমূহ বিশেষ ক্রোড়পত্র প্রকাশ করবে।
এদিন সকাল ৬টা ৪৫ মিনিটে ধানমন্ডির ৩২নং রোডে বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘরে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে রাষ্ট্রপতি এবং প্রধানমন্ত্রী পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন। সশস্ত্র বাহিনীর গার্ড অব অনার প্রদান শেষে অনুষ্ঠিত হবে মোনাজাত ও কোরআন তেলওয়াত।
এ ছাড়াও ১৫ আগস্টে শাহাদাত বরণকারী জাতির জনকের পরিবারের সদস্য ও অন্যান্য শহীদের বনানী কবর স্থানে সকাল ৭টা ৩০ মিনিটে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন। পুস্পস্তবক অর্পন শেষে ফাতেহা পাঠ ও মুনাজাত অনুষ্ঠিত হবে।
এদিন সকাল ১০টায় গোপালগঞ্জের টুঙ্গীপাড়ায় জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সমাধিতে ফাতেহা পাঠ, প্রধানমন্ত্রীর পুষ্পস্তবক অর্পণ ও সশস্ত্র বাহিনীর গার্ড অব অনার প্রদানসহ মোনাজাত অনুষ্ঠিত হবে।
আওয়ামী লীগ এর কর্মসূচি
আওয়ামী লীগের কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে সূর্যোদয়ের সাথে সাথে বঙ্গবন্ধু ভবন এবং কেন্দ্রীয় কার্যালয়সহ সংগঠনের সকল স্তরের কার্যালয়ে জাতীয় ও দলীয় পতাকা অর্ধনমিতকরণ ও কালো পতাকা উত্তোলন।
সকাল ৭টায় বঙ্গবন্ধু ভবনে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে সকাল ৭টা ৩০ মিনিটে বনানী কবরস্থানে ১৫ আগস্টের শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধার্ঘ্য নিবেদন, মাজার জিয়ারত, ফাতেহা পাঠ, মোনাজাত ও মিলাদ মাহফিল অনুষ্ঠিত হবে।
একই দিনে টুঙ্গিপাড়ায় সকাল ১০টায় জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সমাধিতে শ্রদ্ধার্ঘ্য নিবেদন, ফাতেহা পাঠ, মোনাজাত, মিলাদ ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হবে।
এ কর্মসূচিতে আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের একটি প্রতিনিধিদল উপস্থিত থাকবেন। এদিন বাদ জোহর দেশের সকল মসজিদে মিলাদ মাহফিল অনুষ্ঠিত হবে। জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে সকাল ১০টা ৩০ মিনিটে সাংবাদিক সমাজের পক্ষ থেকে জাতীয় প্রেসক্লাবের সন্মেলন কক্ষে সর্বধর্ম প্রার্থনাসভার আয়োজন করা হয়েছে। বাদআছর বাংলাদেশ মহিলা আওয়ামী লীগের উদ্যোগে বঙ্গবন্ধু ভবন প্রাঙ্গনে মিলাদ ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হবে।
আওয়ামী লীগের অন্যান্য কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে ১৬ আগস্ট বিকাল ৪টায় বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে অনুষ্ঠিত হবে আলোচনা সভা। সভায় প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত থেকে গুরুত্বপূর্ণ ভাষন দিবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সভাপতিত্ব করবেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য ও সংসদ উপনেতা সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী।
মহানগর আওয়ামী লীগ, আওয়ামী যুবলীগ, আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগ, জাতীয় শ্রমিক লীগ, কৃষক লীগ, মহিলা আওয়ামী লীগ, মহিলা যুবলীগ, ছাত্রলীগসহ আওয়ামী লীগের সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন শোক দিবস উপলক্ষে অনুরূপ কর্মসূচি গ্রহণ করেছে।
এ ছাড়াও ১৫ আগস্ট বাদ আসর দেশের সকল ওয়ার্ড, ইউনিয়ন, উপজেলা ও জেলায় মিলাদ মাহফিল এবং মন্দির, প্যাগোডা ও গীর্জায় বিশেষ প্রার্থনা অনুষ্ঠিত হবে।
বঙ্গবন্ধুর ৪০ তম শাহাদাতবার্ষিকী উপলক্ষে ইসলামিক ফাইন্ডেশন বিস্তারিত কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। সকাল ৮টায় বনানী কবরস্থানে বঙ্গবন্ধু ও তাঁর পরিবারের শাহাদাৎবরণকারী সদস্যদের রুহের মাগফিরাত কামনায় পবিত্র কোরআনখানী, মিলাদ ও দোয়া মাহফিলের আয়োপজন করা হয়েছে।
এছাড়াও বঙ্গবন্ধুর ৪০তম শাহাদৎ বার্ষিকী উপলক্ষ্যে বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক সংগঠন বিস্তারিত কর্মসূচি গ্রহণ করেছে।
সাহস২৪ ডটকম-এর প্রকাশিত প্রচারিত কোনো সংবাদ তথ্য, ছবি, রেখাচিত্র, ভিডিও, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
মন্তব্য
মন্তব্যে প্রকাশিত মত মন্তব্যকারীর একান্তই নিজস্ব। সাহস২৪ ডটকম-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে এসব মন্তব্যের কোনো মিল নাও থাকতে পারে। মন্তব্যকারীর বক্তব্যের বিষয়বস্তু নিয়ে সাহস২৪ ডটকম-এর কর্তৃপক্ষ আইনগত বা অন্য কোনো দায় নেবে না।