বাড্ডায় আ.লীগ নেতাসহ দুজনকে গুলি করে হত্যা
রাজধানীর বাড্ডায় আওয়ামী লীগের এক নেতাসহ দুজনকে গুলি করে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা। বৃহস্পতিবার রাতে এ ঘটনাটি ঘটে। এ সময় গুলিবিদ্ধ হন স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতাসহ দুজন। কে বা কারা কেন এ ঘটনা ঘটিয়েছে, সে ব্যাপারেও তাৎক্ষণিক কিছু জানা যায়নি।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে স্থানীয় বিভিন্ন কর্মসূচি নিয়ে আলোচনা করার সময় এ ঘটনা ঘটে বলে। ঘটনার নেপথ্যে কর্মসূচির আয়োজন এবং ঝুট ব্যবসা নিয়ে দ্বন্দ্ব ছিল বলে জানা গেলেও কেউ এ বিষয়ে নিশ্চিত কোনো তথ্য দিতে পারেননি।
গুলিতে নিহত ব্যক্তিরা হলেন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের আওয়ামী লীগের সহসভাপতি শামসুদ্দিন মোল্লা (৫৩) এবং উত্তর বাড্ডার হাফ জেনারেল হাসপাতাল নামের একটি প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপক ফিরোজ আহমেদ ওরফে মানিক (৪০)।
আহত ব্যক্তিদের মধ্যে ঢাকা মহানগর উত্তরের স্বেচ্ছাসেবক লীগের সহসাংস্কৃতিক সম্পাদক মাহবুবুর রহমান ওরফে গামার অবস্থা আশঙ্কাজনক। তিনি গুলশানের ইউনাইটেড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। এ ছাড়া পিঠে গুলিবিদ্ধ হয়েছেন আবদুস সালাম নামের এক ব্যক্তি। তিনি স্থানীয় একটি রিকশার গ্যারেজের মালিক। তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তিনি সাংবাদিকদের কাছে নিজেকে স্থানীয় যুবলীগ নেতা বলে দাবি করেছেন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, গতকাল রাত নয়টার দিকে সাত-আটজন ব্যক্তি মধ্য বাড্ডার আদর্শনগর এলাকায় পানির পাম্পের সামনে ১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবসের বিভিন্ন কর্মসূচি নিয়ে আলাপ করছিলেন। এ সময় আওয়ামী লীগের নেতা শামসুদ্দিন মোল্লা, স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতা মাহবুবুর রহমান, হাসপাতালের কর্মকর্তা ফিরোজ, রিকশা গ্যারেজের মালিক আবদুস সালাম চেয়ারে বসে ছিলেন। বাকিরা তাঁদের আশপাশে দাঁড়িয়ে ছিলেন। এ সময় তিন যুবক অতর্কিতে দৌড়ে এসে চেয়ারে বসে থাকা চারজনকে লক্ষ্য করে গুলি করেন। এতে চারজনই গুলিবিদ্ধ হয়ে মাটিতে পড়ে যান। কেউ কেউ গুলি থেকে রক্ষা পেতে মাটিতে শুয়ে পড়েন, কেউ দৌড়ে চলে যান। অন্যদিকে ওই তিন যুবক আরও কয়েকটি ফাঁকা গুলি করে বাড্ডার হোসেন মার্কেটের দিকে দৌড়ে চলে যান। পরে স্থানীয় লোকজন গুলিবিদ্ধ চারজনের তিনজনকে ইউনাইটেড হাসপাতালে ও একজনকে ঢাকা মেডিকেলে নিয়ে যান। ইউনাইটেড হাসপাতালে শামসুদ্দিন ও ফিরোজকে মৃত ঘোষণা করেন কর্তব্যরত চিকিৎসকেরা।
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী তাওসীর রহমান ইউনাইটেড হাসপাতালে বলেন, ‘আমি মাহবুবুর ভাইয়ের সঙ্গে রাজনীতি করি। মাহবুবুর ভাইসহ চারজন চেয়ারে বসে কথা বলছিলেন। আমিসহ কয়েকজন চারপাশে দাঁড়িয়ে ছিলাম। ওই জায়গায় কিছুটা আলো–আঁধারী ছিল। হঠাৎ দেখি তিনটা ছেলে এসে প্রথমে চেয়ারে বসা চারজনকে গুলি করে। আমি মাটিতে শুয়ে পড়ি। দেখি দুজন অস্ত্র হাতে ফাঁকা গুলি করতে করতে চলে যাচ্ছে। আরেকজনের হাতে কোনো অস্ত্র দেখিনি। একজনের পরনে হলুদ ও আরেকজনের পরনে কালো জামা ছিল। অন্যজনেরটা খেয়াল করতে পারিনি।’
কী কারণে এ ঘটনা ঘটতে পারে, জানতে চাইলে তাওসীর বলেন, ‘আমি কিছু জানি না। তবে মধ্য বাড্ডায় একটা গার্মেন্টস নিয়ে আগে মাহবুবুর ভাইয়ের সঙ্গে কারও বাগ্বিতণ্ডা শুনেছি। কিন্তু কাদের সঙ্গে কেন এ বিতণ্ডা, তা আমি জানি না। মাহবুবুর ভাই উত্তর বাড্ডায় সোনার বাংলা কল্যাণ সংস্থা নামের একটি বেসরকারি সংস্থার চেয়ারম্যানও।’
ইউনাইটেড হাসপাতাল মর্গের সামনে নিহত ব্যক্তিদের স্বজনদের আহাজারি করতে দেখা যায়। সেখানে কথা হয় নিহত ফিরোজ আহমেদের খালাতো ভাই জাকারিয়া চৌধুরীর সঙ্গে। তিনি কাঁদতে কাঁদতে বলেন, ফিরোজ রাজনীতি করতেন না। তাঁর কোনো শত্রু নেই। হয়তো বৈঠকে থাকা অন্য রাজনৈতিক ব্যক্তির সঙ্গে কারও শত্রুতা ছিল। তিনি ঘটনার শিকার হয়েছেন।
নিহত ফিরোজ আহমেদ মধ্য বাড্ডার আদর্শনগর এলাকায় স্ত্রী ও দুই মেয়ে নিয়ে থাকতেন। মধ্য বাড্ডার মোল্লাপাড়ায় পরিবার নিয়ে থাকতেন নিহত শামসুদ্দিন। তিনি এক ছেলে ও এক মেয়ের বাবা।
বাড্ডা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবদুল জলিল বলেন, কে বা কারা এ ঘটনা ঘটিয়েছে এবং ঘটনার কারণ কী, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
সাহস২৪ ডটকম-এর প্রকাশিত প্রচারিত কোনো সংবাদ তথ্য, ছবি, রেখাচিত্র, ভিডিও, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
মন্তব্যে প্রকাশিত মত মন্তব্যকারীর একান্তই নিজস্ব। সাহস২৪ ডটকম-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে এসব মন্তব্যের কোনো মিল নাও থাকতে পারে। মন্তব্যকারীর বক্তব্যের বিষয়বস্তু নিয়ে সাহস২৪ ডটকম-এর কর্তৃপক্ষ আইনগত বা অন্য কোনো দায় নেবে না।