পতিতালয়ে বিক্রির হাত থেকে বেঁচে ফিরলেন সীমা
নিজস্ব প্রতিবেদক, প্রকাশ : ১১ আগস্ট, ২০১৫
প্রিন্টঅঅ-অ+
সীমা মুম্বাইয়ের একটি ফ্ল্যাটে আড়াই মাস বন্দি অবস্থা থেকে মুক্ত হয়ে দেশে ফিরে গতকাল সোমবার পুলিশকে নিজের জীবনে ঘটা সেই ভয়াবহ ঘটনার বর্ণনা দিলেন।
মাত্র ২২ বছর বয়েসি এই তরুণী পাচারকারীর খপ্পড়ে পড়ে ভারতের পতিতালয়ে বিক্রির হওয়ার মতো বীভৎস ঘটনার শিকার হয়।
ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত থেকে উদ্ধার হওয়ায় সীমা মহম্মদপুর থানায় এক জবানবন্দিতে জানান, তার বাড়ি মাগুরার মহম্মদপুর উপজেলার পলাশবাড়িয়ার উথলী গ্রামে। তিনি ওই গ্রামের আলম শেখের মেয়ে। ছদ্মবেশী পাচারকারী প্রতিবেশী নূর আলম আড়াই মাস আগে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে অবৈধ পথে ভারতের মুম্বাই শহরে নিয়ে যায়। প্রায় আড়াই মাস সেখানে চলে নির্মম নির্যাতন। তিনি বাড়ি ফিরতে পারলেও তার মতো অনেকে এখনো বন্দি রয়েছে আলো ঝলমল মুম্বাইয়ের কল্যাণ এলাকার অন্ধকার জগতে।
সীমা নিরুদ্দেশ হওয়ার কয়েক দিন পর তার বড় ভাই জামাল শেখ গত ১৭ জুন প্রতিবেশী আহম্মেদ ফকিরের ছেলে নূর আলম ও তার দুই সহযোগী আমির ফকিরের ছেলে আহম্মদ ফকির ও আওয়াল হোসেন মোল্যার ছেলে সিদ্দিক মোল্যাকে আসামি করে মহম্মদপুর থানায় মামলা করেন। কিন্তু পুলিশ তাদের এখনো গ্রেফতার করতে পারেনি।
মহম্মদপুর থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শেখ আতিয়ার রহমান জানান, মামলার প্রধান আসামি নূর আলম নারী পাচারের সঙ্গে জড়িত। তার বিরুদ্ধে কয়েকটি মামলা রয়েছে। পুলিশ তাকে গ্রেফতারের চেষ্টা করছে। সীমাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে পাঠানো হয়েছে।
সীমার ভাষ্যমতে, সাতক্ষীরা সীমান্ত দিয়ে তাকে ভারতে নিয়ে যায় নূর আলম ও তার চার-পাঁচজন সঙ্গী। অনাহার -অর্ধাহারের পাশাপাশি মারধর করত তারা। বাড়ি যেতে চাইলে নেমে আসতো তাদের অমানুষিক নির্যাতন। তারা একসঙ্গে তাকে শারীরিক নির্যাতন করত। সীমান্তের কাঁটা তার সংলগ্ন ড্রেনের মধ্যে দিয়ে ভারতে আনা হয় তাকে। ভারতের এক জঙ্গলের মধ্যে একটি বাড়িতে তাকে রাখা হয়। এখানেও তাকে নির্যাতন করা হতো। দুই-তিন দিন থাকার পর তাকে ট্রেনে করে মুম্বাই শহরের কল্যাণ এলাকায় একটি বহুতল ফ্ল্যাটে আটকে রাখা হয়।
তিনি জানান, ওই ফ্ল্যাটে তার মতো আরো ৪ থেকে ৫ জন নারী ছিলেন। প্রতিদিন এখানে নতুন নতুন নারী আসতো, আবার চলে যেত। পাচার হয়ে আসা অন্তত দুইজন বাংলাদেশি নারীর সঙ্গে তার কথা হয়। প্রতি রাতে এখান থেকে দু-একজন নারীকে নিয়ে যাওয়া হতো অজ্ঞাত স্থানে। তারা আর ফিরে আসতো না। কাউকে ওই ফ্ল্যাটের অন্যকক্ষে নিয়ে খদ্দেরের হাতে তুলে দেওয়া হতো। রাতভর চলতো অমানুষিক নির্যাতন। খুলনার লিপি নামের এক নারী এ ব্যবসার সঙ্গে জড়িত।
ভালো চেহারার কম বয়সি নারীদের পতিতালয়ে ও রক্ষিতা হিসেবে বিক্রি করা হতো এবং অন্যদের অঙ্গপ্রত্যঙ্গ বিভিন্ন হাসপাতালে বিক্রি করে দেওয়া হতো বলে জানায় সীমা।
কিভাবে তিনি পালিয়ে আসতে সক্ষম হলেন এমন প্রশ্নে তিনি জানান, এক রাতে ফ্ল্যাটের দরজা ও মূল ফটক খোলা থাকায় পালিয়ে আসি। মুম্বাইয়ের সমীর পাল নামের এক ভারতীয় বাংলাভাষী কিছু টাকা ও খাবার কিনে দিয়ে কলকাতার ট্রেনে তুলে দেন। কলকাতার স্বাধীন নামের স্থানীয় আরেক ব্যক্তির সহযোগিতায় ভারত সীমান্ত দিয়ে অবৈধভাবে বাংলাদেশে প্রবেশ করি।
সাহস২৪ ডটকম-এর প্রকাশিত প্রচারিত কোনো সংবাদ তথ্য, ছবি, রেখাচিত্র, ভিডিও, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
মন্তব্য
মন্তব্যে প্রকাশিত মত মন্তব্যকারীর একান্তই নিজস্ব। সাহস২৪ ডটকম-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে এসব মন্তব্যের কোনো মিল নাও থাকতে পারে। মন্তব্যকারীর বক্তব্যের বিষয়বস্তু নিয়ে সাহস২৪ ডটকম-এর কর্তৃপক্ষ আইনগত বা অন্য কোনো দায় নেবে না।