যমুনার পেটে অর্ধশতাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান
মোঃ লুৎফুল কবির, সিরাজগঞ্জ
প্রিন্টঅঅ-অ+
যমুনা নদীর ক্রমাগত ভাঙনে সিরাজগঞ্জের চৌহালী উপজেলায় আবাদি জমি, বসত-ভিটার পাশাপাশি গত ৩ বছরে প্রায় ৬৫ টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। এর মধ্যে চলতি বর্ষা মৌসুমে ১১ টি প্রাথমিক বিদ্যালয় সহ একটি নিন্ম মাধ্যমিক বিদ্যালয় নদীতে বিলীন হয়েছে। যে কারনে এসব প্রতিষ্ঠানের শিক্ষা বিস্তারে বিপর্যয় নামায় ঝড়ে পড়ছে প্রায় দুই হাজার শিক্ষার্থী। আর ভেঙ্গে যাওয়া এই স্কুল গুলোর অধিকাংশের ঠাঁই হয়েছে বাড়ির উঠান অথবা ওয়াবদাবাঁধে খোলা আকাশের নিচে। এ কারনে রোধ-বৃষ্টিতে কষ্ট করে কোমল মতি শিক্ষার্থীদের সেখানেই ক্লাস করতে হচ্ছে।
তবে উপজেলা নির্বাহী প্রকৌশলী নাসির আহম্মেদ জানিয়েছেন, নদীতে বিলীন হয়ে যাওয়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গুলোর মধ্যে ৪৫ টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ভবন নির্মানের কাজ শেষের দিকে। অন্যদিকে এখনো ভাঙনের মুখে রয়েছে ৫টি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও চরছলিমাবাদ দাখিল মাদরাসা।
জানা যায়, এ বছর বর্ষা মৌসুমের শুরু থেকেই যমুনা নদী ভয়ংকার মূর্তি ধারন করে ক্রমাগত ভাবে বসত-বাড়ি, ফসলি জমি, দোকান পাট, বিভিন্ন ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান ও সরকারি-বেসরকারি স্থাপনা সহ ১২ টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গ্রাস করে।
রাক্ষুসী যমুনার দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা তান্ডবে গত ৩ বছরে বসতি সহ ১৫ হাজার একর আবাদি জমি বিলীন হয়েছে। এছাড়া হিজুলিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, চর ছলিমাবাদ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, সম্ভুদিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, চৌবাড়িয়া উত্তর পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, চৌবাড়িয়া পূর্ব পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, অ্যয়াজি ধুপুলীয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, পয়লা পূর্বপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, পাথরাইল নিন্ম মাধ্যমিক বিদ্যালয়, বৃদাশুরিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, পাকুরিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, বৃদাশুরিয়া পশ্চিম পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, হাটাইল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, দত্তকান্দি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, পাথরাইল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, মধ্য শিমুলিয়া পূর্বপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, মধ্য শিমুলিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, হাফানিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, হাফানিয়া-২ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, করুয়াজানি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, চর বোয়ালকান্দি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, খাষদেলদার পুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও চৌহালী মহিলা ফাজিল মাদরাসা, এসবিএম কলেজ, চৌবাড়িয়া কাগিগরি কলেজ, মুঞ্জুর কাদের কারিগরি কলেজ, দত্তকান্দি কেএম উচ্চ বিদ্যালয়, হাটাইল নিন্ম মাধ্যমিক বিদ্যালয়, আর আর কে দাখিল মাদরাসা, পয়লা দাখিল মাদরাসা, পয়লা উচ্চ বিদ্যালয়, খাষপুখরিয়া বিএম উচ্চ বিদ্যালয়, চৌহালী আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়, খাষকাউলিয়া বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় সহ প্রায় ৬৫ টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান যমুনার নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। আরো অন্তত ৭ টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বর্তমানে নদী ভাঙনের মুখে রয়েছে। নদীতে বিলীন হয়ে যাওয়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গুলোর ঠাঁই হয়েছে কারো বাড়ির উঠান, খোলা মাঠে অথবা ওয়াবদাবাঁধে।
এ কারনে ঝড়ে গেছে অন্তত দুই হাজার শিক্ষার্থী। আবার কোন কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠাননের ভেঙ্গে যাওয়া ঘরের চালের টিন দিয়ে কোন রকম ছাপড়া তুলে চলছে পাঠদান। এতে রোধ-বৃষ্টি উপক্ষা করে গাদাগাদি করে ক্লাস করতে হচ্ছে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের।
সরেজমিন খাষকাউলিয়া উত্তর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে দেখা গেছে, শিক্ষার্থীদের সুন্দর পরিবেশে পাঠদানের জন্য ২০১৪-২০১৫ অর্থ বছরে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতর (এলজিইডি) বরাদ্দকৃত ৫১ লক্ষ ৪০ হাজার টাকা ব্যায়ে সদ্য নির্মীত একাডেমিক ভবন যমুনার ভাঙনে বিধ্বস্ত হয়ে পড়ে আছে।
এলাকাবাসি জানায়, ভবনটি উদ্বোধনের আগেই রাক্ষুসী যমুনা এভাবেই গ্রাস করে। বর্তমানে ওই বিদ্যালয়ের প্রায় দুইশত শিক্ষার্থীর শিক্ষা জীবন অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। তারা পাশের গ্রামে কোন রকম খুপড়ী ঘর তুলে পাঠদান অব্যাহত রেখেছে বলে স্কুলের প্রধান শিক্ষক শহিদুল ইসলাম জানিয়েছে।
এ বিষয়ে উপজেলা মাধ্যমিক ও প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আবুল কাশেম ওবাইদ ও আব্দুল খালেক জানান, যমুনায় বিলীন হয়ে যাওয়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গুলোর ছাত্র-ছাত্রীদের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে তাদের অন্য এলাকায় ঘড় তুলে পাঠদানের ব্যবস্থা চালু রাখা হয়েছে।
এ ব্যাপারে চৌহালী উপজেলা নির্বাহী প্রকৌশলী (এলজিইডি) নাসির আহম্মেদ জানিয়েছেন, গত তিন বছরে যমুনায় বিলীন হয়ে যাওয়া ৬৫ টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৪৫ টি প্রতিষ্ঠানের ভবন নির্মান কাজ শেষের দিকে। এবছর বিলীন হয়ে যাওয়া স্কুল গুলোর জন্য নতুন ভবন নির্মানের জন্য বরাদ্দ চেয়ে প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছে।
চৌহালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রেজাউল বারী বলেন, যমুনার ভাঙনের বিষয়টি উর্ধ্বতন মহলকে জানানো হয়েছে। আর ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্থদের মধ্যে শিক্ষা খাতকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিয়ে পাঠদানের বিষয়টি সার্বক্ষনিক তদারকি করা হচ্ছে।
সাহস২৪ ডটকম-এর প্রকাশিত প্রচারিত কোনো সংবাদ তথ্য, ছবি, রেখাচিত্র, ভিডিও, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
মন্তব্য
মন্তব্যে প্রকাশিত মত মন্তব্যকারীর একান্তই নিজস্ব। সাহস২৪ ডটকম-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে এসব মন্তব্যের কোনো মিল নাও থাকতে পারে। মন্তব্যকারীর বক্তব্যের বিষয়বস্তু নিয়ে সাহস২৪ ডটকম-এর কর্তৃপক্ষ আইনগত বা অন্য কোনো দায় নেবে না।