সাতক্ষীরায়ে তিন লক্ষাধিক পানিবন্ধী মানুষের মানবেতর জীবনযাপন
সাতক্ষীরার আশাশুনি উপজেলার চাকলায় কপোতাক্ষ নদের বেড়িবাঁধটি এলাকাবাসীর স্বেচ্চাশ্রমে ভিত্তিতে দুই দিন চেষ্টার পর মেরামত করা হলেও মঙ্গলবার জোয়ারের পানিতে তা আবারও ভেঙ্গে গেছে। বেড়িবাঁধটি সংস্কারের চেষ্টা চালিয়ে প্রথম দফায় ব্যর্থ হয়ে দ্বিতীয় দফায় মেরামত করা সম্ভব হয়। কিন্তু নতুন করে আবারও ভেঙ্গে যাওয়ায় পানিবন্ধী এলাকার পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। তিন শতাধিক পরিবার ও শত শত বিঘা মৎস্য ঘের ভেসে গেছে।
স্থানীয় প্রতাপনগর ইউপি চেয়ারম্যান জাকির হোসেন জানান, কপোতাক্ষ নদের চাকলা পয়েন্টের বেড়িবাঁধ দীর্ঘদিন ধরে জরাজীর্ণ অবস্থায় ছিল। পানি উন্নয়ন বোর্ডকে বার বার বলা সত্ত্বেও তারা সংস্কারের উদ্যোগ নেয়নি। গত শনিবার রাতে প্রায় ২শ ফুট এলাকা জুড়ে ভেঙ্গে নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেলে তার উদ্যোগে এলাকাবাসী স্বেচ্ছাশ্রমের ভিত্তিতে মেরামতের পর পুনরায় ভেঙ্গে যায়।
এদিকে, জেলার শ্যামনগর, আশাশুনি ও দেবহাটার কয়েকটি পয়েন্টে বেড়িবাঁধে ভয়াবহ ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে। যে কোন মুহুর্তে সেখানে বেড়িবাধ ভেঙ্গে বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হওয়ার আশংকায় করা হচ্ছে। আতঙ্কের মধ্যে দিন কাটাচ্ছে মানুষ।
কলারোয়া উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা অনুপ কুমার তালুকদার জানান, জলাবদ্ধ পরিস্থিতি অপরিবর্তিত রয়েছে। তিনটি ইউনিয়ন সম্পূর্ণরুপে পানিতে ডুবানো। মানুষ ঘরবাড়ি চেড়ে উঁচুস্থানে আশ্রয় গ্রহন করেছে। বৃষ্টি হলে পানির মাত্রা বাড়বে।
তালা উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ঘোষ সনৎ কুমার জানান, তালা উপজেলায় বন্যা পরিস্থিতির অবণতি হয়েছে। বর্তমান সময় পর্যন্ত উপজেলার ৩৫টি গ্রাম পানিতে নিমজ্জিত। লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্ধী হয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছে। ঘরবাড়ি ছেড়ে উঁচু স্থানে আশ্রয় নিয়েছে মানুষ।
তালা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ মাহবুবুর রহমান জানান, সরকারিভাবে এখনও বরাদ্ধ হাতে না পাওয়ায় দূর্গত এলাকার মানুষের মাঝে ত্রান সরবরাহ সম্ভব হয়নি। পানিতে নিমজ্জিত থাকায় উপজেলার ৩০টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। সোমবার থেকে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পরীক্ষা শুরু হওয়ার কথা থাকলেও সেটি স্থগিত করা হয়েছে।
অপরদিকে, সাতক্ষীরা সদর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান বাবু জানান, টানাবর্ষনে সৃষ্ট জলাবদ্ধতায় লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্ধী হয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছে। দূর্যোগ ব্যাবস্থাপনা কমিটির মিটিং করে সমন্বয়ের মাধ্যমে দ্রুত পানি নিস্কাসনের চেষ্টা চলছে।
জেলা দূর্যোগ ও ব্যবস্থাপনা অফিস কর্তৃপক্ষ জানান, বর্তমান পর্যন্ত সাতক্ষীরা পৌরসভা, সদর, তালা ও কলারোয়া উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় ২০৩ টি ঘর সম্পূর্ণ ধ্বসে গেছে। ৪ হাজার ৯৪৮ টি ঘর আংশিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে।
জেলা প্রশাসক নাজমুল আহসান জানান, এ পর্যন্ত দূর্গত এলাকার মানুষের জন্য ৭০ মেট্রিক টন চাল বরাদ্ধ দেওয়া হয়েছে ও জরুরী ভিত্তিতে দূর্যোগ ও ত্রাণ মন্ত্রনালয়ে ১০০ মেট্রিক টন চাল ও নগদ দেড় লক্ষ টাকা আর্থিক সহায়তা পাওয়ার জন্য জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে লিখিতভাবে আবেদন করা হয়েছে।
সাহস২৪ ডটকম-এর প্রকাশিত প্রচারিত কোনো সংবাদ তথ্য, ছবি, রেখাচিত্র, ভিডিও, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
মন্তব্যে প্রকাশিত মত মন্তব্যকারীর একান্তই নিজস্ব। সাহস২৪ ডটকম-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে এসব মন্তব্যের কোনো মিল নাও থাকতে পারে। মন্তব্যকারীর বক্তব্যের বিষয়বস্তু নিয়ে সাহস২৪ ডটকম-এর কর্তৃপক্ষ আইনগত বা অন্য কোনো দায় নেবে না।