‘শিশুদের আনন্দে বেড়ে ওঠার পরিবেশ আমরা তৈরি করতে পারিনি’
মহিলা ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী মেহের আফরোজ চুমকি বলেছেন, শিশুর প্রতি সকল প্রকার সহিংসতা বন্ধ ও নির্যাতন রোধে শিশু আইন হালনাগাদ করে অভিভাবকদের আইনের আওতায় আনতে হবে।
‘গত কয়েকদিনের শিশু নির্যাতনের ঘটনা আমাদের মনে করিয়ে দিয়েছে যে, শিশুদের আনন্দে বেড়ে ওঠার পরিবেশ আমরা তৈরি করতে পারিনি। এজন্য পরিবার ও সমাজের প্রত্যেকে কোন না কোনভাবে দায়ী। যারা শিশু নির্যাতন করে তারা তাদের পারিবারিক পরিমন্ডলে কোন না কোনভাবে নির্যাতন ও হয়রানির ঘটনা দেখে বড় হয়েছে। তাই বাবা, মা এবং অভিভাবকরা যাতে শিশু নির্যাতন না করতে পারে এজন্য তাদের আইনের আওতায় আনতে হবে,’ বাংলাদেশ শিশু একাডেমির সেমিনার কক্ষে আয়োজিত শিশু নির্যাতন বন্ধে দিনব্যাপী এক কর্মশালার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি আজ একথা বলেন।
‘শিশুর প্রতি সহিংসতা নির্মূলে দক্ষিণ এশীয় উদ্যোগ (সাইভ্যাক) এবং বাংলাদেশের কার্যক্রমসমূহ’ শীর্ষক এ কর্মশালায় অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য দেন মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব নাসিমা বেগম এনডিসি, আইন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব নাসরিন বেগম, জাতীয় মহিলা সংস্থার চেয়ারম্যান অধ্যাপক মমতাজ বেগম এডভোকেট, মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব এবং সাইভ্যাক গভর্নিং বডির চেয়ারম্যান তাহমিনা বেগম এনডিসি, ইনসিডিন বাংলাদেশ-এর নির্বাহী পরিচালক এ কে এম মাসুদ আলী এবং সাইভ্যাক গভর্নিং বোর্ডের শিশু সদস্য মো. মামুন বাকাউল মাসুম। মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব ও সাইভাক বাংলাদেশ-এর প্রকল্প পরিচালক ড. মো. আমিনুল ইসলাম অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন।
মেহের আফরোজ চুমকি বলেন, দরিদ্র ও অপরিকল্পিত পরিবারে বাবা-মা অনেক শিশুর জন্ম দিয়ে নিজেদের ভরণ- পোষণের জন্য শিশু সন্তানদের ঝুঁকিপূর্ণ পেশায় যেতে বাধ্য করেন। বিক্রি করে দেন। এর ফলে শিশুরা নানারকম নির্যাতনের শিকার হয়। কিন্তু এজন্য অভিভাবকরা কোন শাস্তি পান না। তাই অভিভাবকরা যাতে শিশুদের সহিংসতার দিকে ঠেলে দিতে না পারেন সেজন্য আইনে তাদের জন্যও শাস্তির বিধান করতে হবে এবং এ ব্যাপারে তাদের সচেতন করে তুলতে হবে।
প্রতিমন্ত্রী স্বচ্ছল ও উচ্চবিত্ত পরিবারে শিশুদের হাতে মোবাইল ও ইন্টারনেট ব্যবহার নিয়ন্ত্রণেও অভিভাবকদের সচেতন হওয়ার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, বিজ্ঞান আমাদের জন্য আশীর্বাদ। কিন্তু একথা ভুলে গেলে চলবে না, এই প্রযুক্তির অপব্যবহার আমাদের জন্য চরম অকল্যাণ বয়ে আনতে পারে।
তিনি সম্প্রতি সিলেটের চাঞ্চল্যকর শিশু রাজন হত্যাকান্ডের ঘটনায় গভীর ক্ষোভ ও উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, এ ধরনের ঘটনায় সবচেয়ে বেশি কষ্ট পাই আমরা। কারণ এতে আমাদের মনে হয়, আমাদেরই কোন ব্যর্থতার কারণে শিশুটি নির্যাতনের শিকার হয়েছে। তাই সমাজের সবাইকে শিশু নির্যাতনের বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে হবে।
মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব নাসিমা বেগম এনডিসি রাজন হত্যাকে ‘পৈচাশিক ও বিকৃত মানসিকতার পরিচয়’ উল্লেখ করে বলেন , এই হত্যাকান্ডের সাথে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে।
সাইভাক নেটওয়ার্ক একটি আন্তঃরাষ্ট্রীয় আঞ্চলিক সংস্থা যা বাংলাদেশসহ সার্কের আটটি দেশে শিশু অধিকার নিয়ে কাজ করে। আফগানিস্তান, ভুটান, ভারত, মালদ্বীপ, শ্রীলংকা , নেপাল ও পাকিস্তান এর অন্যান্য সদস্য রাষ্ট্র। এই সংস্থা শিশু বিবাহ, শিশু নির্যাতন, শিশু শ্রম, শিশু পাচার ও কর্পোরাল পানিশমেন্ট নির্মূলে কাজ করে।
ইনসিডিন বাংলাদেশ-এর নির্বাহী পরিচালক এ কে এম মাসুদ আলী শিশুর প্রতি সকল প্রকার সহিংসতা নির্মূলে শিশু আইন হালনাগাদ করার আহ্বান জানান। তিনি এই হালনাগাদকরণ প্রক্রিয়া বাংলাদেশকে প্রথম দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার পরামর্শ দেন।
অনুষ্ঠানে বক্তারা বাংলাদেশকে একটি মধ্যম আয়ের দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে সকল মন্ত্রণালয়ের উন্নয়ন কর্মপরিকল্পনায় শিশুদের জন্য বাজেট বরাদ্দের সুপারিশ করেন।
সার্কের এ্যাপেক্স বডি সাইভাক গত ৩০ ডিসেম্বর ২০১২ তারিখে শিশুর প্রতি সহিংসতা শারীরিক শাস্তির বিরুদ্ধে দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে বাংলাদেশে প্রথম জাতীয় প্রচারাভিযানের সূচনা করে। বাংলাদেশে মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সাথে আরো ১১টি মন্ত্রণালয় সমন্বিতভাবে সাইভাক প্রক্রিয়া সম্পন্ন করছে। এছাড়াও সুশীল সমাজ ও শিশু সংগঠন, জাতীয় উদ্যোগ ও সমন্বয় জোটে (এনএসিজি) প্রায় চল্লিশটি শিশু অধিকার কেন্দ্রিক জাতীয় ও আন্তর্জাতিক এনজিও বাংলাদেশে সাইভ্যাক প্রক্রিয়ার সাথে যুক্ত।
সাহস২৪ ডটকম-এর প্রকাশিত প্রচারিত কোনো সংবাদ তথ্য, ছবি, রেখাচিত্র, ভিডিও, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
মন্তব্যে প্রকাশিত মত মন্তব্যকারীর একান্তই নিজস্ব। সাহস২৪ ডটকম-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে এসব মন্তব্যের কোনো মিল নাও থাকতে পারে। মন্তব্যকারীর বক্তব্যের বিষয়বস্তু নিয়ে সাহস২৪ ডটকম-এর কর্তৃপক্ষ আইনগত বা অন্য কোনো দায় নেবে না।